Friday, 22 August, 2025

সূর্যমুখী চাষ করে বিপাকে কৃষক


কৃষি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে বাড়তি লাভের আশায় আলু বা মরিচ ছেড়ে সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকছেন মুন্সিগঞ্জের কৃষকরা। তবে সফলভাবে ফসল ফলালেও সঠিক সংরক্ষণ পদ্ধতি না জানায় লোকসানের আশংকা করছেন তারা।

চাষিদের অভিযোগ, বারবার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে যোগাযোগ করেও সাড়া না পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট অধিদফতর এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, এ বছরই প্রথম জেলায় বাণিজ্যিকভাবে ৩১ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৩ হেক্টর, টঙ্গীবাড়ি উপজেলায় ১০ হেক্টর, সিরাজদিখান উপজেলায় ৬ হেক্টর, লৌহজং উপজেলায় ৭ হেক্টর ও গজারিয়া উপজেলায় ৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়।

আরো পড়ুন
কুমড়ার ফলন বাড়ানোর কার্যকর উপায়

বাংলাদেশের গ্রামীণ ও শহুরে কৃষিতে কুমড়া একটি বহুল চাষকৃত ও জনপ্রিয় সবজি। সারা বছর চাষযোগ্য এই ফসলের পুষ্টিগুণ ও বাজারমূল্য Read more

বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় মাছ রক্ষায় অভয়াশ্রম জরুরি: মৎস্য উপদেষ্টা

দেশের বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় প্রজাতির মাছ চিহ্নিত করে সংরক্ষণের আহ্বান জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, বিভিন্ন Read more

কৃষি পুনর্বাসন প্রণোদনার আওতায় জেলায় ৮শ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে ১ কেজি করে আরডিএস জাতের সূর্যমুখীর বীজ বিতরণ করা হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টঙ্গীবাড়ি উপজেলার হাসাইল এলাকার কৃষক লিটন দেওয়ান ৬০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। তার জমিতে পাকা ও আধাপাকা সূর্যমুখি ফুল বাতাসে দোল খাচ্ছে। জমির পাশেই তরুণ-তরুণীসহ নানান বয়সের মানুষ ছবি তুলছেন সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে। এতে বেশ বিরক্ত লিটন দেওয়ান। কারণ সংরক্ষণ পদ্ধতি না জানায় জমিতে পাকা ফুল ঝরে পড়ছে অন্যদিকে দর্শনার্থীর ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।

কৃষক লিটন দেওয়ান বলেন, কৃষি অধিদফতর থেকে বিনামূল্যে বীজ পেয়ে প্রায় ৬০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী বীজ বুনেছি। গত ৪ মাসে বিভিন্ন প্রকার সার ও পানির সেচ দিয়ে আমার ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু এখন সূর্যমুখী ফুল কিভাবে সংরক্ষণ করে তেল উৎপাদন করব এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।

কৃষি অধিদফতরে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তারা আজ আসবে, কাল আসবে বলে আমাকে ঘুরাচ্ছে। এদিকে ফুলও ঝরে পড়তে শুরু করেছে। সাথে সূর্যমুখী ফুল দেখতে আসা মানুষজন ছবি তুলতে গিয়ে গাছ ও ফুলের ক্ষয়ক্ষতি করছেন বলে জানান তিনি।

কৃষক ইদ্রিস মুন্সি জানান, কৃষি অধিদফতর থেকে সূর্যমুখী বীজ দেওয়ার পর আমরা তা রোপণ করি। পরে কৃষি অধিদফতর আমাদের আর কোনো খোঁজখবর নেইনি। সূর্যমুখী ফুল কিভাবে উত্তোলন করব কিভাবে তেল সংগ্রহ করব এ বিষয়ে কোনো ধরনের দিকনির্দেশনা বা প্রশিক্ষণ দেয়নি। এখন সূর্যমুখী ফুল পেকে ঝরে পড়ছে। সঠিকসময় উত্তোলন করতে না পারলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

সদর উপজেলার কৃষক রতন মোল্লা বলেন, লাভের আশায় প্রথমবার সূর্যমুখী চাষ করেছি এবং ভালো ফসলও হয়েছে। এখন সূর্যমুখী ফুল পাকতে শুরু করেছে। এ সময় কৃষি অধিদফতর যদি আমাদের সহযোগিতা করে তাহলেই লাভের মুখ দেখতে পারব। শুনেছি সূর্যমুখী তেলের অনেক দাম। তাই এই ফসল নষ্ট হতে দিতে চাই না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের জেলা কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, কনসেলার যন্ত্র বা হাত দিয়ে সরাসারি বীজ সংগ্রহ করা যায়। পরে বীজ ভালো মতো শুকিয়ে তা ঘানির মাধ্যমে তেল উৎপাদন করতে পারবে। এ বিষয়ে কৃষকদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এটি এখন বাংলাদেশে নতুন ফসল, তাই স্বাভাবিক কিছুটা সমস্যা হতে পারে কৃষকদের। তবে সমস্যা সমাধনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সবসময় তৎপর রয়েছে।

0 comments on “সূর্যমুখী চাষ করে বিপাকে কৃষক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আর্কাইভ