লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দেবিপুর এলাকার অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক ওয়ালী আহাম্মেদ। নিজেকে ব্যস্ত রাখতে বাসার ছাদে ফল ও সবজির বাগান গড়ে তুলেছেন তিনি।
তিনি ২৯৬ টি টবে দেশি-বিদেশি হরেক রকমের ফল ও সবজির গাছ লাগিয়েছেন। গাছগুলো ফল ও সবজিতে ভরে গেছে। গাছে ধরেছে মিষ্টি কমলা। নিজের হাতে লাগানো গাছে ফল দেখে তৃপ্তির হাসি হাসছেন তিনি।
ওয়ালী আহাম্মদের নুসাইবা মডার্ন হটিকালচার নামের বাগানে গিয়ে দেখা যায়- বিভিন্ন জাতের আম, জাম, কমলা, মাল্টা, কামরাঙ্গা, জাম্বুরা, সফেদা, আঙুর, ড্রাগন, করমচা, ব্রাজিলিয়ান ফল জাবাটিকাবা, ভিয়েতনামের নারিকেলের চারা, আপেলের কলম, এবকেটর, আলুবোখারা, সাদা জাম, মিষ্টি তেঁতুল, আরবি খেজুর, এলাচের চারা, গোলমরিচ, ১২ মাসি আম (কাটিনো আম), ড্রাগন ফল, লবঙ্গ, বারি মাল্টা-১, থাই মাল্টা, আনার, রামবুটান, বীজ ছাড়া পেয়ারা, বড়ই, কাশ্মীরি আপেলকুল, বিভিন্ন রকম ফল ও ফুলের চারা কলম ও ঔষধি গাছের চারা।
শাকসবজির মধ্যে লাউ, টমেটো, শসা, তরই, ক্যাপসিকাম, কারিপাতা, লেটুসপাতা ও ধনেপাতা। ঔষধি গাছের মধ্যে অ্যালোভেরা, তুলসী, আমলকী ও অর্জুন। আঙুর ফলের মাচায় ঝুলছে শসা, লাউ আর তরই।
ছাদবাগান সম্পর্কে ওয়ালী আহম্মেদ বলেন, ২০০৬ সালে কয়েকটি ফলের গাছ দিয়ে শুরু করেছিলাম। তার পর ধীরে ধীরে সবজির গাছ লাগাই। এ চারাগুলো সাভার স্মৃতিসৌধ, যশোরের মনিরামপুর, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন হটিকালচার থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
পরিমাণে কম হলেও বছরের সবসময়ই কোনো না কোনো গাছের ফল খেতে পারি।’ তার এই বাগানের পরিচর্যা দেখে আশপাশের অনেকেই এখন ছাদ কৃষি গড়ে তুলেছেন। অনেককে তিনি চারা ও বীজ সরবরাহও করেন। এই ছাদ কৃষিতে সাফল্যের জন্য তিনবার পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জেলা থেকে পুরস্কারও লাভ করেন।
তার মতো রায়পুর শহরে ও গ্রামে অনেকেই ছাদ কৃষিতে মনোযোগী হয়ে উঠেছেন। প্রায় সারা বছরই ছাদ কৃষিতে ফুল-ফল, শাকসবজি চাষ করছেন তারা। শহরে শতাধিক ভবনের ছাদে ছাদ কৃষি করার কথা জানা গেছে।
দেবিপুর গ্রামের শিক্ষক ওয়ালী আহাম্মেদ, চরমোহনা গ্রামের কৃষক হারুনুর রশিদ, উত্তর চরআবাবিল গ্রামের গৃহবধূ ইসমত আরা আক্তার ও পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবদুল হক পাটোয়ারীসহ আরও অনেকেই তাদের বাড়ির ছাদে বাগান করেছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, বর্তমানে রায়পুরে শতাধিক ভবনের ছাদে গাছ ও সবজির চাষাবাদ হচ্ছে। ছাদগুলোতে হরেক রকমের ফল, ফুল ও সবজির গাছ রয়েছে।
তবে শহরের নতুনবাজার, মাতৃছায়া হাসপাতাল (প্রা.), সরকারি হাসপাতাল, টিএনটি ও টিএসসি সড়ক, কাঞ্চনপুর, দেবিপুর, শায়েস্তানগর, দেনায়েতপুর এলাকায় ছাদ কৃষিতে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা বেশি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, ছাদে গাছ লাগানো একটি বড় সুবিধা হচ্ছে— ছাদ সব সময়ের জন্য ঠাণ্ডা থাকে। একদিকে পরিবেশ রক্ষা হয়, অন্যদিকে পারিবারিক সবজি চাহিদা ও পুষ্টির জোগান দেওয়া সম্ভব হয়।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরীন চৌধুরী বলেন, আমার বাসার চারপাশে ও ছাদেও ফুল, ফল ও সবজির বাগান গড়ে তুলেছি। ইতোমধ্যে ছাদ কৃষির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ফুল ও ফল মিলিয়ে সেখানে শতাধিক টবে গাছ লাগানো হয়েছে। কয়েকটি গাছে ইতোমধ্যে ফলও ধরেছে।