
শেরপুর জেলার গারো পাহাড়ে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হওয়া বাণিজ্যিক আনারস চাষ এখন রূপ নিচ্ছে স্থায়ী ও লাভজনক কৃষি উদ্যোগে। পাহাড়ি জমিতে উচ্চফলনশীল ও মিষ্টি স্বাদের আনারস উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
শেরপুর জেলার গারো পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে আনারস চাষ। স্বাদে অতুলনীয় ও উৎপাদনে লাভজনক হওয়ায় কৃষকদের মাঝে এই চাষ নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে। জেলার শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় এ চাষ দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
চাষিরা জানান, বন্য হাতির আক্রমণে ধান ও সবজি চাষে ঘনঘন ক্ষতি হলেও আনারস চাষে তারা আশাবাদী। কাঁটাযুক্ত গাছ হওয়ায় হাতিরা ক্ষেতে আসে না—এটাই আনারস চাষের বাড়তি সুবিধা।
২০২৩ সালে সীমান্তঘেঁষা বাঁকাকুড়ায় ৫০ শতক জমিতে প্রথমবারের মতো আনারস চাষ করেন আদিবাসী কৃষক জনসন ম্রং। ওই বছর তার খরচ ছিল প্রায় ৫০ হাজার টাকা, লাভও হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। পরের বছর তিনি জমির পরিমাণ বাড়িয়ে ১০০ শতক করেন এবং আশা করছেন এবার তার মুনাফা দেড় লাখ টাকার বেশি হবে।
এই সফলতার খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিভিন্ন জেলা থেকে আগ্রহী দর্শনার্থীরা আসছেন গারো পাহাড়ে। কেউ খেতে এসে চমকে যাচ্ছেন এর মিষ্টি স্বাদে, কেউ আবার ব্যাগভর্তি আনারস কিনে ফিরছেন।
দর্শনার্থী নজরুল ইসলাম (ইসলামপুর, জামালপুর) agrobd24.com-কে বলেন,
“বন্ধুর মাধ্যমে শুনে এসেছি। খেয়ে বুঝলাম—এটা সত্যিই অসাধারণ!”
ইউটিউবার ফারহানা প্রেমা বলেন,
“শেরপুরে এত মিষ্টি আনারস হয় জানতাম না। সরকারের সহযোগিতা পেলে পুরো পাহাড় জুড়ে চাষ সম্ভব।”
আনারস চাষে স্থানীয় কৃষকরাও এখন অনেক বেশি আশাবাদী।
কৃষক কুমেন্দ্র ম্রং বলেন,
“হাতির ভয়ে ধান করা যায় না। আনারসের কাঁটা থাকায় ওরা কাছে আসে না। তাই এই চাষে ভবিষ্যত দেখি।”
কৃষক এনথনি মারাক বলেন,
“সাইজে ছোট হলেও আনারস খুব মিষ্টি। আমি আগামী বছর ১ একর জমিতে চাষ করব।”
আনারস চাষে অগ্রণী ভূমিকা রাখা জনসন ম্রং agrobd24.com-কে বলেন,
“আমি ১৯৯৩ সালে টাঙ্গাইলে আনারস চাষ শিখি। এখন যারা আগ্রহী, আমি চারাসহ সহযোগিতা করছি।”
প্রশাসনের মন্তব্য
ঝিনাইগাতী ইউএনও মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন,
“এখন শুধু ঝিনাইগাতী নয়, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদীতেও এই চাষ ছড়াচ্ছে। হাতির আক্রমণ রোধ করা গেলে গারো পাহাড় হবে দেশের শীর্ষ আনারস অঞ্চল।”
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেন agrobd24.com-কে বলেন,
“এই অঞ্চলের পাহাড়ি মাটি আনারস চাষের জন্য উপযোগী। কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা আমরা দিয়ে যাচ্ছি।”