সৃষ্টির শুরু থেকে মানুষ ও পশুপাখি একসাথে বসাবস করত, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মানুষ তার প্রয়োজনে পশু শিকার ও তার ব্যবহার করে আসছে। মানুষ তার নিজ প্রয়োজনে সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে পরিবার, রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ে তুলেছে। সময়ের পরিক্রমায় মানুষ আধুনিক যুগে পদার্পণ করেছে, যার ধারাবাহিকতায় মানুষ এখন নগরায়নের সাথে নিজেকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে নিচ্ছে।
নগর জীবন যান্ত্রিকতার প্রতিষ্ঠিত রূপ, তার সাথে বাস্তবতা আরেকটু রসদ জুগিয়েছে। যার ফলে বসতবাড়িতে অবস্থিত মহিলারা ও বাচ্চারা কাছের মানুষের সঙ্গ কম পাচ্ছে এতে করে তারা নিঃসঙ্গতায় ভোগে। তারা নিঃসঙ্গতা ঘুচানোর জন্য সঙ্গি হিসাবে পোষা প্রাণীকে বেছে নিচ্ছে।
অনেক ধরনের পোষা প্রাণীর মধ্যে বিড়াল, কুকুর, খরগোশ, কবুতর, বিভিন্ন ধরনের পাখি, কচ্ছপ উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যারা পোষা প্রাণী পালন করেন তাদের হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য জটিল রোগের ঝুঁকি কমে, বিষন্নতা দূর করে এবং আয়ু বাড়ে।
বর্তমানে সারাবিশ্ব যেখানে কোভিড-১৯ মহামারিতে নাস্তানাবুদ সেখানে মানুষের চলাচল হয়েছে সীমিত, মানুষ হয়ে পড়েছে ঘরে আবদ্ধ। আবদ্ধ মানুষ তার অলস সময়গুলো কাটানোর জন্য ঢাকাসহ বাংলাদেশের ছোট ও বড় শহরগুলোতে পোষা প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। পোষা প্রাণী তাদের আনন্দ দিচ্ছে, কথা শুনছে ও সঙ্গ দিচ্ছে।
তারা যেহেতু মানুষের সাথে একই পরিবেশে বসবাস করছে তাই বিভিন্ন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। পোষা প্রাণীর রোগ নিরাময় ও প্রতিরোধের জন্য একজন রেজিস্ট্রার্ড ভেটেরিনারিয়ান শরণাপন্ন হতে হয়। বাংলাদেশের মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারিভাবে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় শহরে প্রাণীসম্পদ অফিস রয়েছে যেখানে রেজিস্ট্রার্ড ভেটেরিনারিয়ানরা নিরলসভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্যভাবে ঢাকায় অবস্থিত কেন্দ্রিয় ভেটেরিনারি হাসপাতালসহ অনেক বেসরকারি ভেট ক্লিনিক বিশেষভাবে পোষা প্রাণীর সেবা প্রদান করে।
বর্তমানে পোষা প্রাণী চিকিৎসায় তরুণ ভেটেরিনারিয়ানদের আগ্রহের জায়গায় পরিণত হচ্ছে যার ফলে উদ্যোক্তা হিসাবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে হাসপাতাল দিচ্ছে। সময়ের সাথে সথে বিভিন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে পোষা প্রাণী চিকিৎসায় যেমন- এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাফিসহ বিভিন্ন ধরণের ডায়াগনস্টিক পদ্ধতি প্রভৃতি।
বর্তমানে মানসম্মত পোষা প্রাণীর হাসপাতাল এখন তরুণ ভেটেরিনারিয়ানদের জন্য নতুন সম্ভবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।
লেখক:
মো. মেহেদী হাসান
শিক্ষার্থী, ভেটেরিনারি অনুষদ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়