বাংলাদেশের একমাত্র মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামার বাগেরহাটের ফকিরহাটে স্থাপনের প্রায় তিন যুগেও তেমন কোনো সফলতা আসেনি।
উন্নতমানের বীজ সংগ্রহ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও গবেষণাগার না থাকায় উন্নত জাতের মহিষ উৎপাদন ও সম্প্রসারণ ব্যাহত হচ্ছে।
সরেজমিনে জানা যায়, বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটে পিলজংগ ও বেরবাড়ি গ্রামের মধ্যস্থলে ১৯৮৪-৮৫ অর্থ বছরে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ৮০ একর জমির ওপর মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামার স্থাপিত হয়। বর্তমানে খামারের জমির পরিমান ৯৪ দশমিক ৭৯ একর।
অবকাঠামগত উন্নয়ন হলেও উন্নত জাত সম্প্রসারণ চলছে ‘কচ্ছপ’ গতিতে। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে মহিষের সংখ্য ৪৪০টি। ২০১৩ সাল থেকে এ প্রতিষ্ঠানে কৃত্তিম প্রজননের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৩৪৭টি উন্নত জাতের বাচ্চা উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্য থেকে গত এক বছরে ২৮টি মহিষ ও ২১টি স্ত্রী-মহিষ বিভিন্ন অঞ্চলে উন্নত জাত সম্প্রসারণের জন্য কৃষকদের মাঝে ভর্তূকিমূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। যা প্রয়জনের তুলনায় অনেক কম।
বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা দ্বীপাঞ্চল, চরাঞ্চল ও উপকূলবর্তী জেলা চরসমূহে উন্নত জাতের ষাঁড় মহিষ প্রদান করে মহিষ জাতের উন্নয়ন করাই ছিল খামার স্থাপনের মূল উদ্দেশ্য। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন মহিষ ঘন এলাকার দুধ ও মাংস উৎপাদনের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বেকারত্ব দূর করা। সঠিক পরিকল্পনা ও তদারকির অভাবে যা শুধুই খাতা কলমে মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামার। বাস্তব চিত্র ভিন্ন। খামার স্থাপনের ৩৫ বছর অতিবাহিত হলেও উন্নত মানের বীজ সংগ্রহ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও গবেষণাগার না থাকায় দেশের মহিষকূল উন্নত জাতে ও লাভজনক শিল্পে রূপান্তরিত হয়নি। রয়েছে জনবল সংকট। কর্মকর্তা কর্মচারিদের জন্য থাকার বাসস্থানগুলো ফাটল লেগে হয়ে গেছে ঝুঁকিপূর্ণ।
স্থানীয় কৃষক অলীয়ার শেখ, জাকির হোসেন বলেন, গরু ছাগল থেকে মহিষ পালন এক সময় লাভজনক ছিল। বর্তমানে এ অঞ্চলে মহিষ বিলুপ্তির পথে। কারণ দেশীয় ষাঁড় দিয়ে উৎপাদিত বাচ্চা ক্রমশই নিম্ন জাতের হওয়ায় মহিষ থেকে তেমন লাভ হয় না। যা কয়েকটি উন্নত জাতের মহিষ সরকারিভাবে বিতরণ করা হয় তা দিয়ে সমগ্র এলাকার মহিষ প্রজনন ঘটান দুরহ ব্যাপার।
অন্যদিকে উন্নত জাতের বীজ প্রাপ্তি সহজলভ্য নয়। তাই মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামারে উন্নতমানের বীজ উৎপাদন হলে মহিষ পালন লাভজনক শিল্পে রূপান্তরিত হবে।
বাগেরহাটের প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. লুৎফর রহমান বলেন, বর্তমানে এ খামারে ইটালিয়ান মেডিটেরিয়ান মুরাহ ও নিলীরাভী নামক মহিষের বীজ (সিমেন) দিয়ে কৃত্রিম প্রজনন করা হচ্ছে। এভাবে দেশের মহিষ জাতকে উন্নত করা দীর্ঘ মেয়াদি একটি প্রক্রিয়া।
তবে এখানে একটি সিমেন কালেকশন ল্যাবরেটরি স্থাপিত হলে উন্নত মানের বীজ (সিমেন) সংগ্রহ করে তা ‘ডিফ ফ্রজেন’-এর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের খামারির মাঝে বিতরণের মাধ্যমে মহিষ জাতের উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।