Thursday, 31 July, 2025

শার্শায় কুল চাষে ৫ শতাধিক চাষীর ভাগ্য বদল


যশোরের শার্শা উপজেলায় কুল চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন পাঁচ শতাধিক চাষী। মাত্র চার মাসে লাখ টাকার ফলন দেখে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন তারা।

জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট(বারি) উদ্ভাবিত আপেল কুল, ঢাকা-৯০, নারিকেল কুল, নাসিম টক কুল, থাইকুল, বলসুন্দরি কুল, সিডলেস কুল, কাশ্মিরী জাতের কুলসহ কয়েকটি জাতের কুল চাষ করছেন তারা।

শার্শার বাগআঁচড়া মাঠ পাড়া গ্রামের ইউনুস আলি (৪৫) অল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করে একটি কুলবাগান থেকে করেছেন তিনটি বাগান। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গোটা বাগানজুড়ে নাসিম টক কুল, থাইকুল, ঢাকা-৯০ কুল, বলসুন্দরি কুল, কাশ্মিরী কুল, আপেলকুল ও নারকেলকুল ধরে আছে।

আরো পড়ুন
২৫ টি বিপজ্জনক বালাইনাশকে হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্যঃবাকৃবি

মানুষের মৌলিক চাহিদা খাদ্যের উৎপাদনই এখন মারাত্মক ঝুঁকিতে। অধিক ফলনের আশায় কৃষিতে হাইব্রিড ও উচ্চফলনশীল জাতের ফসলের ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে Read more

বীজ উদ্ভাবনের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নে এসিআই-এর অগ্রণী ভূমিকাঃ ড. এফ এইচ আনসারী

বাংলাদেশের কৃষি খাতে গত তিন দশকে অসাধারণ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এই অগ্রগতির সাক্ষী হিসেবে আমি এই খাতের একজন কর্মী হিসেবে Read more

ফলের ভারে স্বল্প উচ্চতার গাছগুলো নুইয়ে পড়ছে। নাসিম টককুলের বেচাবিক্রি শেষ। নারিকেল কুল, বলসুন্দরি ও থাইকুল পুরোপুরি পুষ্ট হয়ে গেছে, আকারও বেশ বড়। আপেল কুল এখনো পুরোপুরি পুষ্ট হয়নি। সেগুলোর বর্ণ অনেকটা বাদামি ও খয়েরি রঙের মিশ্রণ।

ইউনুস জানান, পুষ্ট হলে এগুলো সাদা হয়ে যাবে। আর ঢাকা-৯০ কুল তীব্র শীতের কারণে এখনও অপুষ্ট রয়ে গেছে। এ বছর ১১ বিঘা জমিতে কুলচাষ করেছেন। বর্তমানে তার বাগান রয়েছে তিনটি। বিগত ১০ বছর তিনি সফলভাবেই কুলের চাষ করে আসছেন।

তিনি আরও জানান, ভালো ফলনের জন্য নিয়মিত সেচ ও সার দিতে হয়। বাগান নিয়মিত পরিচর্যার জন্য ৫-৬ জন লোক রাখার পাশাপাশি ব্যাপক শ্রম দিতে হয়। বিঘাপ্রতি সব মিলিয়ে খরচ পড়ে প্রায় ২৫-৩০ হাজার টাকা। আর ফলন পাওয়া যায় ৯০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। এ বছর তার ১১ বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে তিন লাখ টাকার কিছু বেশি।

কুলচাষি ইউনুস জানান, প্রথম বছর খরচ একটু বেশি। দ্বিতীয় বছর থেকে খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। মৌসুম শেষে তিনি বিক্রি করে পাবেন ১১ লাখ টাকা। ৮-৯ লাখ টাকা তিনি লভ্যাংশ পাবেন বলে আশা করছেন। এ মৌসুমে ইতোমধ্যে ঢাকা ও বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ফলের আড়তে ট্রাকযোগে কুল পাঠানো শুরু করেছেন বলেও জানান তিনি।

ইউনুসের কুলবাগানে কথা হয় ওই বাগানের শ্রমিক মনির হোসেন, মাসুম বিল্লাহ ও সাগর হোসেনের সঙ্গে। মনির হোসেন বলেন, ‘মাসে ১০ হাজার টাকা বেতনে কাজ করি। এই ফলের বাগানে কাজ করতে আমার বেশ ভালোই লাগে। মাস শেষে যে বেতন পাই তা দিয়ে আমার সংসার বেশ ভালোভাবেই চলে। আমি আমার ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখাচ্ছি। আমারও ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতে এমন সুন্দর একটা ফলের বাগান করার।’

সামটার খোরশেদ আলম ও শাহজাহান আলী, কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামের রেখসোনা খাতুন, শ্যামলাগাছির মনি বেগম, গাতিপাড়ার আহসান হাবিব, গোগার সহিদুল ইসলাম, গাতিপাড়ার সফিউদ্দিনও সফল কুলচাষি।

দ্বিতীয় শস্য বহুমুখীকরণ প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে সামটার শাহজাহান আলী দেড়বিঘা জমিতে কুল চাষ করেছেন। নিজের জমি নিজেই দেখভাল করেন। অন্যান্য ফসল চাষ করে চারজনের সংসার চালানো কঠিন। তাই বিকল্প হিসেবে গতবছর এই কুলের চাষ শুরু করেছেন। কুলচাষ করে তাদের সংসারে শান্তি ফিরেছে। তিনি এ পর্যন্ত ৯০ হাজার টাকার কুল বিক্রি করেছেন। আরও ৪০-৫০ হাজার টাকার কুল বিক্রির আশা করছেন। এবছর তার খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। আগামী ১০ বছর আর বড় কোনো খরচ নেই বাগানে। এখন বছর বছর শুধু টাকা আসবে।

উলাশির কাঠুরিয়া মাঠে কথা হয় কুলচাষি খোরশেদ আলম, আব্দুল জব্বার ও আব্দুল আহাদের সঙ্গে। খোরশেদ আলম বলেন, ‘এই মাঠে এবছর নতুন করে ৮ বিঘা জমিতে কুলগাছ লাগাইছি। একদিন বাদে ৪০০ কেজি করে কুল পাচ্ছি। প্রতি কেজি কুল বিক্রি করছি ৩৫-৫০ টাকায়।’ প্রতি বিঘায় এক লাখ টাকার কুল বিক্রি করার আশা করছেন তিনি।

শার্শার নাভারন-সাতক্ষীরা সড়কের হাড়িখালি মোড়ে রয়েছে তার ‘বিসমিল্লাহ ফলভান্ডার’। ৪৫ জন কুলচাষি তার মাধ্যমে ঢাকা ও বরিশালে ফল পাঠান।

শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল জানান, শার্শায় এবার পাঁচ শতাধিক চাষি অন্তত দেড় হাজার বিঘা জমিতে কুলচাষ করেছেন। চাষিদের কৃষিবিভাগ থেকে বিভিন্ন পরামর্শ ও সহায়তা দেয়া হচ্ছে। ব্যক্তিগত উদ্যোগেও অনেকে কুলচাষ করেছেন।

0 comments on “শার্শায় কুল চাষে ৫ শতাধিক চাষীর ভাগ্য বদল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক লেখা

আর্কাইভ