তীব্র গরম ও শিলা ঝড়বৃষ্টির আঘাতে বগুড়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বোরো ধানের শীষ চিটা দেখা দিয়েছে। এতে খরচ না উঠার শঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বগুড়ায় ১৫ জানুয়ারির পর থেকে বোরোর বীজ জমিতে রোপণ শুরু হয়েছে। পুরো দমে চলতি মৌসুমে চাষ হয়েছে। এবছর বগুড়া অঞ্চলে শীত বেশি থাকায় বোরোর বীজ তৈরি হয়েছে ঘন কুয়াশার মধ্যে।
চলতি মৌসুমে বোরোর চাষ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৮৮ হাজার ৬১৫ হেক্টর। গত বছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছিল ১ লাখ ৮৮ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ কম হয়েছিল। চলতি বছরও সমপরিমাণ জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এবছর প্রতি হেক্টরে ফলন পাওয়া যাবে ৫ থেকে ৬ টন করে।
এতে ফলন আকারে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে প্রায় ৭ লাখ ৭২ হাজার ৯৭৪ মেট্রিক টন। কিন্তু চলতি বছর ফলন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে বেগ পেতে হবে চাষিদের। চাষের পর আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় জেলার সোনাতলা, সারিয়াকান্দি, শেরপুর, ধুনটসহ ১২টি উপজেলার বোরের ক্ষেতের কিছু কিছু মাঠে ধানের শীষগুলোতে চিটা দেখা যাচ্ছে। কৃষি অফিস থেকে জরুরি ভিত্তিতে কৃষকের সাথে পরামর্শ করে চিটা থেকে ধান পাওয়ার আশায় ওষুধ প্রয়োগ করে যাচ্ছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলার বেড়ার বিলের শ্যালো মেশিন চালক আছালত জামান জানান, করোনার কারণে ঢাকার গার্মেন্টসের চাকরি চলে যাওয়ায় বাড়িতে এসে কয়েক বিঘা জমি নিয়ে একটি সেলো মেশিন দিয়ে ধানের স্কীম করে সংসার চলে। কিন্তু গত কয়েকদিন আগে থেকেই ধানগুলো চিটা হয়ে যাচ্ছে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের হাসনাপাড়া গ্রামের নারী চাষি মোছা. গেদী বেগম (৬৫) জানান, গত ৪০ বছর আগেই বিধবা হয়েছেন তিনি। নিজের বাবার কিছু জমিতে ধান চাষ করেই তার সারা বছরের সংসার কোনো মতে টানাটানি করেই চলে।
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার হুয়াকুয়া গ্রামের বোরো চাষি মুসা মণ্ডল জানান, শিলাবৃষ্টি, কালবৈশাখী ঝড় আর অতিমাত্রার গরমের কারণে বোরোর জমিতে ধানের ফলন ভাল হয়নি। ধানের শীষে ফুল ভাল মতো না হওয়ার কারণে চিটা দেখা যাচ্ছে। তার জমি ছাড়াও আশপাশের আরো কিছু জমিতে চিটা দেখা যাচ্ছে।
বগুড়ার সায়িরাকান্দি উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কুদরত আলী জানান, বৈরি আবহাওয়া এবং গত কয়েকদিন আগে বয়ে যাওয়া গরম লু হাওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে। ধান চাষের জন্য সহনীয় তাপমাত্রা হলো ২৫ ডিগ্রি থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। সেখানে সারিয়াকান্দিতে সকালের তাপমাত্রা কখনও ১৫ ডিগ্রির নিচে নেমে যায়।
অপরদিকে, দুপুরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির উপরে উঠে যায়। ফলে ধানের ফুলগুলো সঠিকভাবে পরাগায়ন সম্পন্ন করতে পারছে না। তারপর গত কয়েকদিন আগে বয়ে যাওয়া গরম হাওয়ার কারণে ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে।
এ পর্যন্ত সারিয়াকান্দিতে সর্বমোট ২০ হেক্টর জমির ধান চিটা হয়ে গেছে। উপজেলাতে এ বছর ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ হাজার ৬৪০ হেক্টর। সেখানে লক্ষ্যমাত্রা পেরিয়ে প্রায় ১৪ হাজার ৬৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানান, অল্প কিছু জমিতে ধানের চিটা হয়েছে বলে সংবাদ পাওয়া গেছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সবসময় কৃষকের সাথে মাঠে পরামর্শ প্রদানের কথা বলা হয়েছে। ধানের জমিতে প্রতি ১৬ লিটার পানিতে ১০০ গ্রাম পটাশ, ১০০ গ্রাম থিওভেট এবং ১২ প্রাম টুপার মিশিয়ে কৃষকদের ছিটিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।