Thursday, 17 April, 2025

সর্বাধিক পঠিত

বাকৃবির জলাশয়ে মিলছে সাকার ফিশ


পুরো নাম সাকার মাউথ ক্যাটফিশ। অনেকে সাকার ফিশ নামে চেনে। বৈজ্ঞানিক নাম হিপোসটোমাস প্লেকোসটোমাস। অ্যাকুরিয়ামে চাষযোগ্য বিদেশি প্রজাতির এই ক্ষতিকর মাছটি এখন হর হামেশাই দেখা মিলছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) জলাশয়গুলোতে। দ্রুত বংশ বিস্তারকারী মাছটি কিভাবে জলাশয়গুলোতে এসেছে সঠিক তথ্য দিতে পারছে না কেউ।

সাকার ফিশ জলজ পোকামাকড় ও শ্যাওলার পাশাপাশি ছোট মাছ এবং মাছের পোনা খেয়ে থাকে। তাছাড়া সাকার ফিশের পাখনা খুব ধারালো। দেখা যায়, অন্য মাছের সাথে লড়াই করার সময় ধারালো পাখনার আঘাতে সহজেই অন্য মাছের দেহে ক্ষত তৈরী হয় এবং পরবর্তীতে পচন ধরে সেগুলো মারা যায়। সাকার ফিশ রাক্ষুসে প্রজাতির না হলেও প্রচুর পরিমাণে খাবার ভক্ষণ করে। এতে খাদ্যের যোগান নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা হয় অন্য মাছের সাথে। বেশিরভাগ সময়ই দেশীয় প্রজাতির মাছ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে না এবং জলাশয় থেকে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায়।

জানা যায়, সাকার ফিশ প্রভাবে মায়ানমার ও আরব আমিরাতের মৎস্য চাষীরা ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছে। বাংলাদেশে কয়েক বছর আগে উপকূলীয় জেলাগুলোতে প্রথম এই মাছের দেখা মিলে। তবে এখন সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুরের মত জায়গা যা উপকূল থেকে অনেক দূরে, সেখানেও দেখা মিলছে এই মাছের। বাকৃবির জলাশয়গুলোতে এখন প্রায়ই ধরা পড়ছে এই মাছ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঈশা খা লেক ও পার্শ্ববর্তী জলাশয়ে এখন হর হামেশাই দেখা মেলে এই মাছের। এর ব্যাপক বিস্তার ঘটলে দেশীয় প্রজাতির মাছ হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন মৎস্য গবেষকরা।

আরো পড়ুন
কক্সবাজার উপকূলে ১০ হাজারের বেশি কচ্ছপের বাচ্চা সাগরে অবমুক্ত

চলতি মৌসুমে কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন উপকূলে কচ্ছপের ডিম সংরক্ষণ ও বাচ্চা প্রজননে তৎপরতা বেড়েছে। বনবিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বেসরকারি সংস্থা Read more

হালদা নদীতে মা মাছের আগমন, ডিম আহরণে প্রস্তুতি তুঙ্গে
হালদার মা মাছ

চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে মা মাছের আনাগোনা শুরু হয়েছে। প্রতি বছর চৈত্র মাসের শুরুতে এই নদীতে ডিম Read more

বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রজাতির সাকার ফিশ ১৬-১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। মাছটি পানি ছাড়াই প্রায় ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত বাঁচতে পারে। মাছ চাষীরা অভিযোগ করেন, তাদের ঘেরে এই মাছ ঢুকে পড়ে চাষের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. হারুনুর রশীদ বলেন, সাকার মাউথ ক্যাটফিশ মাছটি সহজেই নতুন পরিবেশের সাথে অভিযোজিত হয়ে দ্রুত বংশ বিস্তার করতে সক্ষম। অনেকে শুরুর দিকে অ্যাকুরিয়াম ফিশ হিসেবে পালন করলেও পরবর্তীতে মাছটি বড় হয়ে গেলে তখন পুকুর বা ডোবায় ছেড়ে দেয়। সেখানে মাছটি নতুন পরিবেশে খাপ খেয়ে বংশ বিস্তার শুরু করে। মাছটি খেতে সুস্বাদু না হওয়ায় সাধারণত কেউ মাছটি খায় না এবং বাজারেও মাছটির কোনো চাহিদা নেই। মাছটি ভক্ষণে কোনো স্বাস্থ্য ঝুকি আছে কিনা সে বিষয়ে এখনো কোনো গবেষণা হয় নি।

তিনি বলেন, এই মাছটি একবার কোনো জলাশয়ে ঢুকে পড়লে এর বিস্তার রোধ করা খুব কঠিন। চাষের পুকুরে এই মাছ ঢুকে পড়লে অন্য মাছের সাথে খাবার ও বাসস্থান নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু করে। এতে করে বাইরে থেকে পর্যাপ্ত খাবার প্রদান করলেও কাঙ্খিত মাছের উৎপাদন পাওয়া যায় না। অন্য দিকে চাষযোগ্য মাছ সাকার ফিশের সাথে খাবার ও বাসস্থানের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে না। এভাবে মাছ চাষীরা লোকসানের মুখে পড়েন।

0 comments on “বাকৃবির জলাশয়ে মিলছে সাকার ফিশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক লেখা

আর্কাইভ