Thursday, 21 November, 2024

সর্বাধিক পঠিত

স্পর্শকাতর উদ্ভিদ লজ্জাবতী যার রয়েছে ঔষধি গুণাগুণ


লজ্জাবতী লতা একটি প্রায় লতা জাতীয় উদ্ভিদ। আমাদের দেশে এক জাতের কাঁটাযুক্ত লজ্জাবতী অহরহ লক্ষ করা যায়, অম্লভাবাপন্ন মাটিতে। এগুলো আকারে ছোট হয়। লজ্জাবতী উদ্ভিদ অতি স্পর্শকাতর ধরনের। সামান্য নাড়া লাগলেও ছড়ানো পাতা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। যার প্রভাবে অনেক সময় মশা বা ক্ষুদ্র আকৃতির পোকামাকড় পাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ার চাপে মারা যায়। তবে স্পর্শকাতর উদ্ভিদ লজ্জাবতী ঔষধি গুন সম্পন্ন হয়। বিভিন্ন ডাল জাতীয় ফসলের মতো লজ্জাবতীর শিকড়েও ‘নডিউল’ গঠিত হয়ে থাকে। যার কারণে মাটিতে প্রাকৃতিকভাবে নাইট্রোজেনজৈব পদার্থ সরবরাহ হয়। স্পর্শকাতর উদ্ভিদ লজ্জাবতী গাছে প্রোটিনসহ সব ধরনের খাদ্য উপাদান বিদ্যমান।

এর গুরুত্ব কিন্তু কোন অংশে কম নয়। আফ্রিকার অনেক অধিবাসীই চা ও কফির বিকল্প হিসেবে মাইমোসা বা লজ্জাবতীর লতা-পাতা, ফুল ও কচি ফলের নির্যাস পান করে। ইন্দোনেশিয়াতে মহিষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার প্রচলন আছে ‘জায়েন্ট মাইমোসা বা কাঁটাবিহীন লজ্জাবতীর। ‘ওয়াটার মাইমোসা’র শিকড় ও কচি পাতা বিভিন্ন মাছের প্রিয় খাবার। বিশেষ করে শিং, মাগুর, কৈ, তেলাপিয়া ও অনুরূপ মাছের প্রিয় খাবার এটি। অনেক দেশে মাইমোসার বা লজ্জাবতীর প্রচন্ড চাহিদা রয়েছে।

আমাদের দেশেও চট্টগ্রামের কয়েকজন ব্যবসায়ী লজ্জাবতীর লতা-পাতা সংগ্রহ করে তা শুকিয়ে জাপানে রপ্তানি করে থাকেন।

আরো পড়ুন
দেশীয় পাট বীজ উৎপাদনে চমক দেখালেন কৃষক মুক্তার

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার কৃষক মুক্তার হোসেন মোল্যা দেশীয় পাট বীজ উৎপাদনে উদ্ভাবনী সাফল্য দেখিয়েছেন। সালথা উপজেলা পাট উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত Read more

‘পুষ্টির ডিনামাইট’ সজিনা চাষ পদ্ধতি

সজিনা (Moringa oleifera) একটি দ্রুতবর্ধনশীল, পুষ্টিকর গাছ যা বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক অঞ্চলে চাষ করা হয়। সজিনা গাছের পাতা, ফল Read more

লজ্জাবতী গাছের ঔষধি গুণাগুণ

লজ্জাবতীর ঔষধি গুণাগুণ খুবই বেশি।

লজ্জাবতী গাছের ব্যবহার হারবাল মেডিসিন তৈরিতে যুগযুগ ধরে চলে আসছে।

লজ্জাবতীর শিকড় লতা-পাতার ব্যবহার নাক, কান, দাঁত ও ক্ষুদ্রনালির ঘা সারাতে দেশে বিদেশে বহুল প্রচলিত।

মাইমোসার ঔষধি গুণাগুণ জন্ডিস, অ্যাজমা, টিউমার, হুপিংকফ, চর্মরোগ, ডায়াবেটিক্সসহ, হার্ট, লিভারের নানা রোগ সারাতে ব্যবহার হয়।

লজ্জাবতী গাছের উৎপত্তি স্থান কোথায়

মনে করা হয় লজ্জাবতীর উৎপত্তি স্থান মেক্সিকো।

তবে প্রচুর লজ্জাবতী দেখা যায় দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, আমেরিকার উত্তর-দক্ষিণ কোস্টাল বেল্টে, আফ্রিকার অনেক দেশে ও অস্ট্রেলিয়ায়।

সাধারণত ট্রপিক ও সাব-ট্রপিকের আওতাধীন সব দেশে লজ্জাবতী খুবই ভালো জন্মে।

ভারতের রাজস্থান অঞ্চলে বিভিন্ন বাগান গুলোতে কভার ফসল ও গ্রিন ম্যানুয়ারিং ফসল হিসেবে চাষ করা হয়।

লজ্জাবতী গাছের বিভিন্ন জাত

পৃথিবীতে অনেক রকম জাতের লজ্জাবতীর মাঝে জায়ান্ট মাইমোসা (কাঁটাবিহীন লজ্জাবতী) ডাঙ্গায় পাওয়া যায়।

অন্যদিকে ওয়াটার মাইমোসা চাষের প্রচলন বেশি দেখা যায় অগভীর পানিতে।

এ দুটি জাতের চাষাবাদে চাষিদের আগ্রহ বিশেষ প্রয়োজনে প্রতিনিয়তই বাড়ছে।

তবে আস্ট্রেলিয়ার কিছু কিছু এলাকাতে প্রাকৃতিকভাবে তা অত্যাধিক বৃদ্ধি পায়।

তাই সেখানে একে ক্ষতিকারক ঘাস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

কিভাবে বংশ বিস্তার করে

বীজ থেকে অথবা পুষ্ট লতা কেটে তা রোপণের মাধ্যমে এটি চাষাবাদ করা যেতে পারে।

আগস্ট মাস হতে লতায় ফুল ধরা আরম্ভ করে।

ক্রমান্বয়ে সেপ্টেম্বর হতে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ফল পাকতে শুরু করে।

পাকা ফল থেকে এ সময় বীজ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়।

মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি, আগাছা দমন, ভূমিক্ষয় রোধ, ঔষধি ও সবজি হিসেবে এর ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সুফল আহরণের লক্ষ্যে, অতি সম্ভাবনাময়ী এ ফসলটির সম্প্রসারণ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সবারই প্রচেষ্টা নেয়া অত্যাবশ্যক।

0 comments on “স্পর্শকাতর উদ্ভিদ লজ্জাবতী যার রয়েছে ঔষধি গুণাগুণ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক লেখা