সারের কৃত্রিম সংকট ও কারসাজি রোধে সারা দেশে পরিচালিত হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এবছর আগস্ট মাসেই ৩৮৩টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। এই তথ্য দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আবুর রাজ্জাক। তিনি বলেন এর মাধ্যমে বিভিন্ন অনিয়মে জড়িত ৩৮৩ জন ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। যার পরিমান ৫৭ লাখ ৬৮ হাজার টাকা বলে তিনি জানান।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত পাম ভিয়েট চিয়েনের সঙ্গে বৈঠক করেন মন্ত্রী।
এই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করার সময় মন্ত্রী এসব কথা জানান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলাম।
মন্ত্রী বলেন, শুধু জরিমানাই শেষ কথা নয়।
সার কারসাজিতে জড়িত থাকা ডিলারদের লাইসেন্সও বাতিল করা হবে।
মন্ত্রী জানান ডিলারদের লাইসেন্স দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়।
সে কারণে লাইসেন্স বাতিলের জন্য তাদের নাম শিল্প মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের জন্য কাজ চলছে।
কৃষিমন্ত্রী জানান, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে সারের মজুতে কোনো ধরনের সমস্যা নেই।
সরকারী গুদামে পর্যাপ্ত পরিমান সার রয়েছে।
বরং গত বছরের তুলনায় এ বছর বরাদ্দ বেশি দেওয়া হয়েছে বলে জানান।
মন্ত্রী বলেন, কোথাও কোথাও সারের সংকটের কথা শোনা যাচ্ছে যা সম্ভব নয়।
মন্ত্রী হুশিয়ারি দেন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কারও গাফিলতি পাওয়া গেলে তারা ছাড় পাবেন না।
তাঁদেরও শাস্তির আওতায় আনা হবে।
এমওপি সার প্রসঙ্গে মন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়।
তিনি জানান, আগস্ট মাসে সরকারি-বেসরকারিভাবে আমদানিকৃত ১ লাখ ৮০ হাজার টন এমওপি সার দেশে এসেছে।
আগামী সেপ্টেম্বর মাসে ১ লাখ ১৬ হাজার টন এমওপি সার পৌঁছাবে বলে তিনি জানান।
এর বিপরীতে সারের চাহিদা সেপ্টেম্বরে ৫১ হাজার টন ও অক্টোবরে ৭০ হাজার টন।
এতে চাহিদার চেয়ে সারের মজুত অনেক বেশি থাকবে।
চালের দাম শিগগিরই কমবে বলে আশ্বস্ত করেন মন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভিয়েতনাম থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার টন চাল আনা হচ্ছে দেশে।
সরকারিভাবে বা জিটুজি ভিত্তিতে আনা এ চাল আসতে ১৫-২০ দিন লাগতে পারে।
এ ছাড়া রাশিয়া থেকেও তিন লাখ টন গম আনা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
এদিকে দেশে প্রায় ১৮ লাখ টন খাদ্য মজুতের কথা উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় এনে ৫০ লাখ পরিবারকে ১৫ টাকা কেজিতে চাল দেবার কথাও বলেন তিনি।
এ ছাড়া টিসিবির মাধ্যমে এবং ওএমএসেও চাল বিক্রি করা হবে বলে তিনি জানান।
সব মিলিয়ে চালের দাম শিগগিরই কমবে বলেই তিনি মনে করেন।
এদিন ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দুই দেশের কৃষি সহযোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারে আলোচনা হয়।
ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে কৃষি সহযোগিতার জন্য ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করার প্রস্তাব দেন।
তিনি ভিয়েতনাম ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে কৃষি সহযোগিতা থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেন।
যার ফলে ভিয়েতনামের কৃষি উন্নত হয়েছে।
তিনি মনে করেন যেহেতু তিনটি দেশই বদ্বীপ হবার কারনে তাদের পারস্পরিক সহযোগিতায় সব পক্ষই উপকৃত হবে।
ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত জানান, কাজুবাদাম রপ্তানিতে ভিয়েতনাম বর্তমানে প্রথম।
অন্যদিকে কফি রপ্তানিতে তাদের দশ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
বাংলাদেশে কাজুবাদাম ও কফির চাষ সম্প্রসারণে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী।
এ ক্ষেত্রে তিনি ভিয়েতনামের সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি জানান গত দুই বছরে ২০ লাখ কাজুবাদামের চারা কৃষকদের প্রদান করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে কাজুবাদামের ফলন শুরু হয়েছে।
কাজুবাদাম উৎপাদনে বাংলাদেশও ভালো করবে বলে মন্ত্রী আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।