পোলাও খুব জনপ্রিয় খাবার। আমাদের দেশের যে কোন দাওয়াতে গেলে আতপ চালের পোলাও চাই চাই। পোলাও এর খুব সুন্দর ঘ্রাণ অনেকের খুবই পছন্দ। আর এক ধরণের পাতার ব্যবহারে ভাতের মাঝেও পাওয়া যেতে পারে পোলাও এর সুঘ্রাণ। এই পাতার নাম পোলাও পাতা। দেশের অনেক এলাকায় পোলাও পাতার গাছ প্রা্য়ই দেখা যায়। বাগানে কিংবা বড়ির আশপাশে কোনো রকম যত্ন-আত্তি ছাড়াই বেড়ে উঠতে পারে। এর ব্যবহার খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন নার্সারিতে এর চারা বিক্রি হচ্ছে।
। তাই চলুন আজ আমরা জানব খুব সহজেই পোলাও পাতার চাষ কিভাবে করা যেতে পারে।
সুগন্ধি এই পাতার প্রচলন বর্তমানে দেশের প্রায় বেশিরভাগ জেলায় হচ্ছে। দিন দিন জনপ্রিয় হবার কারনে অনেকেই সহজেই পোলাও পাতার চাষ সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
দেখতে কেমন হয় পোলাও পাতা
অনেকটা কেয়া গাছের মতো দেখতে হয় পোলাও পাতার গাছের আকৃতি। এমনকি পাতার চেহারা দেখতেও কেয়া পাতার মতই।
কিন্তু কেয়া গাছ অনেক বড় হয়, কিন্তু পোলাও পাতা ততটা বড় হয় না।
পোলাও পাতা গাছ দেখতে ছোট ঝোপালো প্রকৃতির গাছ।
পোলাও গাছ বহু-বর্ষজীবী উদ্ভিদ যা একবার লাগানো হলে অনেকদিন বেঁচে থাকে।
গাছে আনারস গাছের মতো মোথা থেকে কিছু পাতা চারদিকে কিছুটা খাড়াভাবে তলোয়ারের মতো বাড়তে থাকে।
পোলাও পাতা দৈর্ঘ্যে ৫০-৬০ সেন্টিমিটার হয় এবং প্রস্থে তা হয় ৩-৪ সেন্টিমিটার।
পাতা চকচকে সবুজ, পুরু চামড়ার মতো, একটু শক্ত, পাতার কিনারা মসৃণ।
পাতার অগ্রভাগ সুঁচালো হয়।
এ গাছের মূল আকর্ষণ এর পাতায় পোলাওয়ের মতো গন্ধ আছে।
যার ফলেই এর নামকরণ করা হয় পোলাও পাতা গাছ।
পোলাও পাতা গাছ এর ব্যবহার
এই পোলাও পাতা গাছ মূলত ব্যবহৃত হয় খাদ্যদ্রব্য সুরভিত করতেই।
পাতাটি বিশেষ করে সুগন্ধ বিহীন সাধারণ চাল দিয়ে ভাত রান্নার সময় ব্যবহার করা হয়।
সাধারণত পোলাও পাতা ভাত রেঁধে মাড় ফেলে দেবার পর মিশানো হয়।
গরম ভাতের স্তরে স্তরে পোলাও পাতা ৩-৪ সেন্টিমিটার টুকরো টুকরো করে কেটে বিছিয়ে দেয়া হয়।
একটা ঢাকনা দিয়ে পাত্রের মুখ এর পরপরই ঢেকে রাখা হয়।
এভাবে কিছুক্ষণ রেখে দেয়া হলে ভাতে পোলাও এর সুঘ্রাণ আসে।
খাওয়ার সময় সেই ভাত থেকে পোলাওয়ের সুঘ্রাণ পাওয়া যায়।
এতে ভাত খাবার সময় অন্যরকম এক তৃপ্তি আসে।
তবে অনেকেই চা বানানোর সময় এই পাতার ব্যবহার করে থাকে।
চায়ের পানি ফুটে এলে তার ভেতর পোলাও পাতার কয়েকটা টুকরো ছেড়ে দিন।
তারপর সেই চা থেকেও পোলাওয়ের সুঘ্রাণ ভেসে আসে।
একইরকম করে বিভিন্ন রকম স্যুপ, জাউভাত, ফিরনি, পায়েস ইত্যাদিতে পোলাও পাতা ব্যবহার করা হয়।
কিভাবে চাষ করা হয়
পোলাও গাছের চারা গাছের কান্ড হতে উৎপন্ন করা হয়।
কুশির মতো চারা বের হয় এই গাছের কাণ্ডের গিঁট থেকে।
চারা লাগিয়ে নতুন করে এই গাছ জন্মানো যায়।
চাষ করার জন্য প্রথমেই কান্ড থেকে গাছ সংগ্রহ করতে হবে।
সেই গাছ বড় হলে তার কাণ্ডের চার পাশ থেকে তেউড় বা চারা বের হবে।
সেসব চারা গাছ থেকে কেটে আলাদা করে বীজতলায় পুঁতে পানি দিতে হবে।
কয়েক দিনের মধ্যেই তার গোড়া থেকে শিকড় বের হয়ে গাছের চারা তৈরি হবে।
এ সকল চারা সরাসরি জমিতে বা বাড়ির আঙিনায় ঝোপ করার জন্য এক জায়গায় লাগানো যেতে পারে।
প্রথমদিকে লাগানোর পর কয়েকদিন কেবল সেচ দিতে হবে।
তাছাড়া আর বিশেষ কোনো ধরণের যত্নের খুব একটা প্রয়োজন হয় না।
আধোছায়া ও রোদেলা জায়গায় পোলাও পাতা খুব ভালো জন্মায়।
পোলাও পাতা গাছে কোন প্রকার সার দেয়ার দরকার হয় না।
কিন্তু পোলাও পাতা লাগানোর সময় মাটিতে বেশি করে জৈবসার মিশিয়ে দিতে হয়।
এতে পরবর্তীতে গাছের চেহারা ও বৃদ্ধি খুব ভালো হয়।
পোলাও পাতা বছরের যেকোনো সময় গাছ থেকে তোলা যায়।
তবে তোলার সময় খেয়াল রাখবেন গাছের গোড়ার দিকের বয়স্ক পাতা তোলাই ভালো।
তা না হলে সেগুলো পুরনো হয়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
পোলাও গাছ প্রচন্ড কষ্ট সইতে পারে, একই সাথে গাছের বৃদ্ধিও ভালো হয়।