শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে সেন্টু-২১ চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন কৃষক। গত দুই মৌসুম ধরে শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে সেন্টু-২১ চাষ করে কৃষকেরা লাভের মুখ দেখেছেন। স্থানীয়ভাবে উদ্ভাবিত সেন্টু-২১ ধান তুলনামূলক লাভজনক ও ফলন বেশি হওয়ায় উপজেলার অনেক কৃষক এখন এর চাষের দিকে ঝুঁকছেন। এই ধান উদ্ভাবন করেছেন কৃষক সেন্টু কুমার হাজং। বর্তমানে সারা দেশের কৃষকের মধ্যে তা ছড়িয়ে দেওয়ার চিন্তা করছেন তিনি।
নালিতাবাড়ীর চাটকিয়া গ্রামে সেন্টু হাজংয়ের বাড়ি।
পাঁচ বছরের চেষ্টায় উদ্ভাবন করেন এই ধান
প্রায় পাঁচ বছর ধরে একক প্রচেষ্টায় দেশি পাইজাম ধানের সঙ্গে ভারতীয় রঞ্জিত ধানের সংকরায়ণ করছেন এই চাষি।
২০১৯ সালে তিনি এই নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন করেছেন।
একক প্রচেষ্টায় ১৯ প্রকারের দেশি নতুন জাতের ধান এর আগেও তিনি উদ্ভাবন করেছেন।
তার উদ্ভাবিত সর্বশেষ ধানের জাতটি তাঁর নামের সঙ্গে মিলিয়ে রেখেছেন।
এটি অনেকটা পাইজাম ধানের মতো চিকন প্রকৃতির হয়।
সেই সাথে এর ফলনও পাওয়া যায় দ্বিগুণ।
পাইজাম প্রতি একরে ৩৫ থেকে ৪০ মণ ফলন দেয়।
অন্যদিকে সেন্টু হাজংয়ের উদ্ভাবিত সেন্টু-২১ প্রতি একরে ৬০ থেকে ৭০ মণ ফলন হয়।
বীজতলা তৈরি থেকে ফসল কাটা পর্যন্ত উৎপাদনে ১৫০ থেকে ১৫৫ দিন সময় লাগে।
কিন্তু পাইজামের উৎপাদন সময়কাল ১৬০ দিন।
এই ধান চাষে তেমন কোনো পরিচর্যাও লাগে না, পোকামাকড়ের আক্রমণও হয় কম।
স্থানীয় অনেক কৃষক সরাসরি তাঁর কাছ থেকে এই ধানের বীজ নিয়েছেন বলে তিনি জানান।
এখন স্থানীয় বাজারেও এই ধানের বীজ বিক্রি হয়।
এই ধানের বিস্তার এভাবেই কৃষকেরা ঘটিয়েছেন।
চলতি মৌসুমে উপজেলায় দেড় থেকে দুই হাজার কৃষক সেন্টু-২১ আবাদ করেছেন।
তারা সেন্টু হাজং ও আরও চার কৃষকের কাছ থেকে বীজধান নিয়ে গেছেন।
চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তাদের ফলন ভালো হয়েছে।
চাষিরা প্রতি একরে ৬০ থেকে ৭০ মণ হারে ধান পেয়েছেন।
সেন্টু হাজং জানান, তার উদ্ভাবিত ধানে সাধারণত রোগবালাই নেই।
এতে ফলনও ভালো পাওয়া যায়।
এবার তিন একর জমিতে তাঁর উদ্ভাবিত ধান চাষ করেছেন তিনি নিজেই।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর কবির।
তিনি বলেন, ‘সেন্টু হাজংয়ের উদ্ভাবিত স্থানীয় জাতের সেন্টু-২১ ধান।
এটি চাষে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যেও আগ্রহ জন্মেছে।
আবার চাষিরাও ফলন ভালো পাচ্ছেন।
এই ধান কৃষি অধিদপ্তর আগামী আমন মৌসুমে ট্রায়াল হিসেবে চাষ করবে বলে তিনি জানান।
এর উৎপাদন দেখে সরকারিভাবে অনুমোদন পাবার জন্য এই জাতের বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সিতে পাঠানো হবে।’