শেরপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী ‘ছানার পায়েস’ বাংলাদেশের ৪৪তম জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) এই স্বীকৃতির সনদ গ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান।
জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে জেলা ব্র্যান্ডিং বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ থেকে ‘ছানার পায়েস’কে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হয়। দীর্ঘ যাচাই-বাছাই শেষে শেরপুরের এই সুস্বাদু মিষ্টি পণ্যটি জিআই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
শেরপুরের ‘ছানার পায়েস’ তার বিশেষ স্বাদ এবং রসালতার জন্য দেশজুড়ে পরিচিত। প্রতিদিন স্থানীয় মিষ্টির দোকানগুলোতে গড়ে প্রায় এক হাজার কেজি পায়েস বিক্রি হয়, যার প্রতি কেজির দাম ৪০০ টাকা। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হয় এই মিষ্টি।
শত বছরের ঐতিহ্য
শত বছর আগে শেরপুরের ঘোষপট্টিতে প্রথম ছানার পায়েস তৈরি হয়। সেসময়ের জমিদাররা এই পায়েস আত্মীয় ও অন্যান্য জমিদারদের উপহার হিসেবে পাঠাতেন।
তৈরি করার পদ্ধতি
ছানার পায়েস তৈরির প্রধান উপকরণ দুধ, চিনি, এলাচ ও সামান্য ময়দা। প্রথমে দুধ জ্বাল দিয়ে ক্ষীর তৈরি করা হয়। এরপর দুধ থেকে ছানা কেটে সামান্য ময়দা মিশিয়ে ছোট ছোট গুটি বানানো হয়। এই গুটিগুলো চিনিযুক্ত শিরায় ভিজিয়ে পরে তৈরি করা ক্ষীরে মিশিয়ে হালকা আঁচে জ্বাল দেওয়া হয়। এর ফলে তৈরি হয় অতুলনীয় স্বাদের মিষ্টি ‘ছানার পায়েস’।
স্থানীয় ক্রেতারা শেরপুরের ‘ছানার পায়েস’কে বিশেষ ভালোবাসেন। ক্রেতা সাইদুর জানান, “আমি শহরে এলেই ছানার পায়েস খেতে আসি। এটি খুবই সুস্বাদু। যেকোনো অনুষ্ঠানের জন্য এখান থেকে ছানার পায়েস নিই।” আরেক ক্রেতা আবু হানিফ বলেন, “আমাদের কোনো আয়োজন ছানার পায়েস ছাড়া সম্পূর্ণ হয় না। এটি আমাদের সংস্কৃতির অংশ।”
‘ছানার পায়েস’ জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ার ফলে শেরপুরের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর উৎপাদন ও বিপণনের প্রসার ঘটলে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শেরপুরের পরিচিতি আরও বাড়বে।