ভিসন ২০২১ এর কতটা পেলো কিংবা কতটা এগুলো বাংলাদেশ এই নিয়েই রূপকল্প ২০২১ বা ভিসন ২০২১: কেমন আছে বাংলাদেশ? রূপকল্প-২০২১ বাংলাদেশের সফলতা ব্যর্থতা নিয়ে কলমা টি লিখেছেন কৃষিবিদ ডঃ সৈয়দ আরিফ আজাদ (সাবেক মহাপরিচালক, মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ও নির্বাহী সদস্য, কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন, বাংলাদেশ (কেআইবি) ঢাকা) স্যার ।
রূপকল্প ২০২১ কেমন আছে বাংলাদেশ?
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবুর রহমান এর উন্নয়ন দর্শন ছিল অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক মুক্তির- দর্শন। একটি ক্ষুধা দারিদ্রমুক্ত সুখী সমৃদ্ধশালী দেশ গড়াই ছিল তার সাধনা। তিনি স্বাধীনতা উত্তরকালে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে ফিরে স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে ধাপে ধাপে অগ্রসর হন। বঙ্গবন্ধুকে যে বছর হত্যা করা হয় সে বছর দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.৪ শতাংশ। তখন দেশে ১০,০০০ টন অতিরিক্ত খাদ্য মজুদ ছিল। দীর্ঘ ৪০ বছর পর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বঙ্গবন্ধুর কন্যার নেতৃত্বে আমরা তা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছি।
বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরসূরি জননেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথ ধরে একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে ঘোষণা করেন রূপকল্প ২০২১। রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের ২২টি লক্ষ্য অর্জনে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনা এর নেতৃত্বে বর্তমান সরকার। ২২টি লক্ষ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে- শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার দুই ডিজিটে উন্নীত করা, আবাসনের ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করা, নিরক্ষরতামুক্ত দেশ গড়া, অবৈতনিক শিক্ষা চালু করা, বেকারত্বের হার হ্রাস, কৃষি খাতে শ্রমশক্তি কমিয়ে শিল্পে প্রবৃদ্ধি, শিশু ও মাতৃ মৃত্যু হ্রাস, প্রজনন সেবার উন্নয়ন, খাদ্য ও পুস্টি চাহিদা পূরণ, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া ইত্যাদি।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে চারটি মৌলিক বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যথাঃ মানবসম্পদ উন্নয়ন, জনপ্রতিনিধিত্বশীলতা, লোক প্রশাসন এবং বাণিজ্য ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার। তবে সকল সরকারি অফিস এবং মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে সম্পূর্ণভাবে ডিজিটালকৃত হবার কথা থাকলেও অদ্যাবধি সরকারি অফিসগুলো মান্ধাতা আমলের নথিনির্ভর কার্যক্রমও পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছে এবং লাল ফিতার ব্যবহার বহাল রেখেছে। যদিও ই-নথির ব্যবহার বাড়ছে।
এখনো তহসিল অফিসে জীর্ণ-শীর্ণ রেকর্ডস ঘেঁটে খাজনা-খারিজ সম্পন্ন করতে হয়। সকল স্কুল কলেজে ডিজিটাল কার্যক্রম প্রবর্তনের ঘোষণা আসলেও কম্পিউটারের অপর্যাপ্ততা এবং দরকারি প্রশিক্ষণের অভাবে শিক্ষাঙ্গনে প্রযুক্তির ব্যবহার কাঙ্খিত পর্যায়ে নয়। মাদ্রাসাগুলোর অবস্থা আরো শোচনীয়। তবে সবচেয়ে বড়ো সাফল্য এসেছে মোবাইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে মোবাইল ব্যবহারে বিপ্লব ঘটেছে।
দেশের প্রায় ১২ কোটিরও বেশি মানুষ মোবাইল ব্যবহার করে বলে জানা যায়। ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশিরা খুব একটা পিছিয়ে নেই। প্রায় চার কোটি লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করে বলে জানা যায়। মোবাইল এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের পথে অগ্রযাত্রার একটি দৃশ্যমান সূচক। দেশের গ্রাম এবং শহর মিলে ৫০০০-এর অধিক ডিজিটাল সেন্টার খোলায় গড়ে ৪.৫ মিলিয়ন মানুষকে সম্প্রতি ৬০টি ডিজিটাল সেবা-সুযোগের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। এ সকল ডিজিটাল সেন্টারে দুজন উদ্যোক্তার মধ্যে একজন নারী নিযুক্তির বিধানকে বাধ্যতামূলক করায় নারী সংবেদনশীল সেবা প্রদানের পরিবেশও নিশ্চিত হচ্ছে।
ভিশন ২০২১ এর ২২টি লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন সম্ভব হলে সত্যিকার অর্থে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নে সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
- বাংলাদেশ বর্তমানে চাল, মাছ, মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
- দক্ষিন এশিয়ায় স্বাস্থ্য খাতের কয়েকটি সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ দৃঢ়। ২০১৯ সালের অবস্থা এখানে আলোচনা করা হলঃ
শিশু মৃত্যুর হার-
দেশ | প্রপ্তি ১০০০ জনে মৃত্যুর হার |
বাংলাদেশ | ২২ |
পাকিস্তান | ৬১ |
মিয়ানমার | ৪৬ |
মালদ্বীপ | ৭ |
স্থূল মৃত্যুর হার-
দেশ | প্রপ্তি ১০০০ জনে মৃত্যুর হার |
বাংলাদেশ | ৫.৫৩ |
ভারত | ৭.৩ |
মিয়ানমার | ৮.২ |
মালদ্বীপ | ২.৮ |
স্থূল জন্ম হার-
দেশ | প্রপ্তি ১০০০ জনে মৃত্যুর হার |
বাংলাদেশ | ১৭.৯ |
পাকিস্তান | ২৭.৮ |
নেপাল | ১৯.৬ |
মালদ্বীপ | ১৩.৬ |
এ ছাড়া শিক্ষার হার বিবেচনায় (২০১৯) বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে।
দেশ | % হার |
বাংলাদেশ | ৭৩.৯১ |
পাকিস্তান | ৫৭.৯ |
নেপাল | ৬৭.৯ |
ভারত | ৭১.২ |
গড় আয়ুস্কাল হিসেবেও দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ এগিয়ে- সামনে আছে মালদ্বীপ।
দেশ | বছর |
বাংলাদেশ | ৭২.৩ |
পাকিস্তান | ৬৭ |
নেপাল | ৭০ |
ভারত | ৬৯ |
মালদ্বীপ | ৭৯ |
- আশেপাশের দেশের তুলনায় বাংলাদেশে শিশু মৃত্যু হ্রাসে উল্লেখ যোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এই হার- বাংলাদেশে ৬৩%, ভুটানে ৬০%, নেপালে ৫৯%, ভারতে ৫৭% কমেছে।
- তবে অন্যদিকে স্বাস্থ্য খাতে নেতিবাচক অবস্থানও অনেক আছে। যেমনঃ এখনও দেশে ১৫.৫% কন্যা শিশুর বিয়ে হয় ১৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই, ওজন কম শিশুর সংখ্যা ২২.৬%, যা ২০১২-১৩ তে ছিল ৩১.৯%। প্রতিবছর ৫২০০ নারীর মৃত্যু হয় প্রসব কালে, মৃত সন্তান হয় প্রতিদিন প্রায় ২৩০ টি, প্রতিবছর জন্মের পর মারা যায় ৬২ হাজার শিশু, প্রতিহাজারে নবজাতকের মৃত্যু হার ১৭.১ (আগামী ২০৩০ এ তা ১২ তে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে), কিশোরী মায়েদের গর্ভে প্রতি হাজারে জন্মে ১১৩ টি শিশু
- তবে শিশু শিক্ষায় যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশে শিশু শিক্ষায় রেজিস্ট্রি (২০১৯) বর্তমানে ৮৫.৯%;
- সুপেয় পানি পাচ্ছে ৯৮.৫% জনগণ,
- স্যানিটেশন ব্যবস্থার সুবিধা পাচ্ছে ৮৪.৬%।
- রয়েছে প্রায় ৫০০০ কমিউনিটি ক্লিনিক।
- বিশ্বে স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু ব্যয়ের দিক থেকে প্রথম অবস্থানে রয়েছে আমেরিকা। তারা প্রতি জনে ব্যয় করেন ৯ হাজার ৮শত ৯২ ডলার। তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সুইজারল্যান্ড। তারা মাথাপিছু ব্যয় করেন ৭ হাজার ৯ শত ১৯ ডলার। তবে স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু ব্যয়ে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। বাংলাদেশ মাথাপিছু ৩২ ডলার ব্যয় করেছে স্বাস্থ্য খাতে। ভারত ৫৯ ডলার, নেপাল ৪৫ ডলার, পাকিস্তান ৩৮ ডলার এবং শ্রীলঙ্কা ব্যয় করেছে ১৫১ ডলার।
- বাসস্থানের ক্ষেত্রে আমাদের অনেক কিছু করতে হবে। ডেইলি স্টার (১৩/১০/১৯) মতে বাঙ্গালদেশের ৮৪% লোক টিনের ছাদ আছে এ রকম বাড়িতে বাস করে এবং শহর বাসীর হার ৩৮%। ইউএনডিপি এর প্রতিবেদনে (২০১৯) বলা হচ্ছে ঢাকায় বাস করে ১.৭৪ কোটি লোক। এদের ৩ জনের ১ জন ইন-ফরমাল আবাসনে বসবাস করেন। অর্থাৎ তাদের জন্য কোন বাসস্থান নেই। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ইউনিভারসিটি এর এক জরিপের তথ্যে দেখা যায়- বস্তিবাসীগণ প্রতি বর্গফুট যায়গায় জন্য ভাড়া দিয়ে থাকেন প্রায় ৪৭ টাকা – যা ধানমন্ডি এলাকার বাসা ভাড়ার সমান। শেখ হাসিনার সরকার ১৯৯৮ সাল থেকে বস্তিবাসীদের জন্য গৃহ সংস্থানের জন্য উদ্যোগ নেয়। মীরপুরে ৭৫৫০ টি ফ্ল্যাট নির্মাণের পদক্ষেপ নেয়া হয়। ইতিমধ্যে সরকার বিশ্বব্যাঙ্কের সহায়তায় “Livelihood improvement for the urban poor communities” প্রকল্পের আওতায় ৫০০০ পরিবারের বাসস্থান ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছে; এ ছাড়া আরও ১৫,০০০ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আবাসন গড়ার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে; জাতীয় গ্রৃহায়ন অথরিটি ২৪,০০০ দরিদ্র শহরবাসীর জন্য বাসস্থান করার কাজ হাতে নিয়েছে।
- এ ছাড়া আমার গ্রাম আমার শহর পরিকল্পনার আওতায় প্রতিটি গ্রামকে গুচ্ছাকারে আবাসন সুবিধার আওতায় আনার কর্মসূচি রয়েছে। তবে ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য আবাসন এর অঙ্গীকার থাকলেও এ ক্ষেত্রে আমাদের আরও বহুদুর যেতে হবে।
- স্বাধীন দেশে জাতির পিতা নগর ও গ্রামের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করার উদ্দেশ্যে কৃষি বিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতিককরণের ব্যবস্থা, কুটির শিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ-ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল পরিবর্তনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদে অঙ্গীকার যুক্ত করেছিলেন
- সম্প্রতি জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে শেখ হাসিনা গ্রামকে কিভাবে শহরে রূপান্তর করা হবে, তার পরিকল্পনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, উন্নত রাস্তা-ঘাট, যোগাযোগ, সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ-জ্বালানি সরবরাহ বাড়ানো, কম্পিউটার, দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও মানসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারণ করে প্রতিটি গ্রামকে আধুনিক শহরের সকল সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। গ্রামে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ আরো বাড়ানো ও নির্ভরযোগ্য করতে গ্রুপভিত্তিক বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট ও সৌরশক্তি প্যানেল বসানোর উৎসাহ এবং সহায়তা দেয়া হবে। গ্রামপর্যায়ে কৃষিযন্ত্র, সেবাকেন্দ্র, ওয়ার্কশপ স্থাপন করে যন্ত্রপাতি মেরামতসহ গ্রামীণ যান্ত্রিকায়ন সেবা সম্প্রসারণ করা হবে। এসবের মাধ্যমে গ্রামীণ যুবক ও কৃষি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উৎপাদনশীল কর্মসংসংস্থান করা হবে। অকৃষি খাতের এসব সেবার পাশাপাশি হাল্কা যন্ত্রপাতির তৈরি ও বাজারজাত করতে বেসরকারি খাতের প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়ার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য হলো প্রতিটি গ্রামে শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেয়া।
- বর্তমানে ৯০ ভাগের বেশি মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। ২০২০ সালে শতভাগ বিদ্যুৎসেবা নিশ্চিত করার কথা
- এখন গ্রামের রাস্তা-ঘাট আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে
- দরিদ্র ছিন্নমুল মানুষকে সংগঠিত করায় স্থায়ী তহবিল হচ্ছে
- বিশ্বের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ায় সবার উপরে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইটে গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্ট শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয় গেল অর্থবছরে বাংলাদেশের আনুমানিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। একই সময়ে ভারতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৩ আর পাকিস্তানের ৫ দশমিক ৮ শতাংশ।[1] বিশ্বব্যাংক অনুমান করছে, বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে চলতি বছরে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৭ দশমিক ১ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াবে। আর বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান শক্তিশালী অর্থনৈতিক কার্যক্রমও অব্যাহত থাকবে। - যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনমিক্স অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর)-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের তালিকার শীর্ষ পাঁচে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, জার্মানি ও ভারত। এশিয়ার অন্যান্য অনেক দেশের ন্যায় আগামী ১৫ বছরে তাৎপর্যপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটবে বাংলাদেশের। এতে বলা হয়েছে, আগামী ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ৩৬তম, ২০২৮ সালে ২৭তম এবং ২০৩৩ সালে ২৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে। সিইবিআর প্রতিবেদনের ১০ম সংস্করণে বলা হয়েছে, আমরা আশা করছি ২০১৮ থেকে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের বার্ষিক গড়ে সাত শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে।
- ২০১৯-২০ অর্থবছরে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বাংলাদেশেই সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। এই প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।[2] তবে কভিড-১৯ এর কারণে তা ৫.২০ শতাংশে নেমে গেছে। এতদস্বত্বেও দেশে শিল্প, কৃষি ও প্রবাসী আয়ে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যায়।
- জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের (ইকোসোক) সংস্থা জিইএফ সম্প্রতি ২০১৯ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক যে পূর্বাভাস দিয়েছে তাতে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের রফতানি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। এতে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বাড়তে পারে। দেশে যেসব অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হচ্ছে, সেখানে এই বিনিয়োগ আসতে পারে বলে তারা মনে করছে।
- আঙ্কটাডের প্রতিবেদন বলছে ২০১৯ সালে দেশে এফডিআই প্রবাহ কমেছে ছয় শতাংশ। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে এফডিআই প্রবাহ বেড়েছিল প্রায় ৬৭ দশমিক ৯১ শতাংশ।অথচ আঙ্কটাড জানিয়েছে, বিশ্বে ২০১৮ সালে এফডিআই ১৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার।
- করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেও অর্থনীতিতে স্বস্তির আভাস মিলছে। অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর অন্যতম আমদানি, রফতানি ও রেমিটেন্স সময়ের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠার মাধ্যমে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে চলতি বছরের (২০২০) জুলাইয়ে রেমিটেন্স বেড়েছে ৬৩ শতাংশ। আমদানি, রফতানি, রেমিটেন্স, রিজার্ভ, প্রবৃদ্ধি অর্থনীতির এই পাঁচটি সূচক অর্থবছরের শুরু থেকেই ভালভাবে কার্যকর রয়েছে। তবে করোনার কারণে সরকারের রাজস্ব আদায় মন্থর হয়ে পড়েছে।
- জিডিপিঃ সম্প্রতি বিভিন্ন দেশ নিজেদের এপ্রিল-জুনের (২০২০) জিডিপির পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সংকোচন হয়েছে ৩২ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ইতিহাসে সর্বাধিক। আবার ইতালির ক্ষেত্রে মুছে গেছে প্রায় ৩০ বছরের প্রবৃদ্ধিই। সেই তুলনায় বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ২০ শতাংশ।[3]
- এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ফ্রান্সের জিডিপি কমেছে প্রায় ১৪ শতাংশ, ইতালির ১২ দশমিক ৪ শতাংশ, স্পেনের ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ ও ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতি জার্মানির ১০ দশমিক ১ শতাংশ। আর ১৯টি দেশের ইউরোপীয় অঞ্চল (যাদের মুদ্রা ইউরো) ধরলে সেই অঙ্ক ১১ দশমিক ৯ শতাংশ। ২৭ দেশের ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতি কমেছে ১২ শতাংশের বেশি।
- রপ্তানীঃ এই করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ স্থান থেকে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে। চীন ও ভিয়েতনামের পরই এখন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ তৈরি পোশাক রফতানি করছে বাংলাদেশ। করোনা মহামারীর মধ্যে শুরু হওয়া নতুন অর্থবছরের (২০২০-২০২১) প্রথম মাস জুলাইয়ে আগের বছরের (২০১৯ সালের স্বাভাবিক সময়ে) একই সময়ের তুলনায় রফতানি আয় বেশি হয়েছে অন্তত তিন কোটি মার্কিন ডলার। শুধু তাই নয়, করোনার বাস্তবতা সামনে রেখে রফতানি আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তার চেয়েও ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেশি আয় হয়েছে।
- রেমিটেন্সঃ করোনার এই সময়ে প্রতিদিনই প্রবাসীরা আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন। গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে এ বছরের জুলাইয়ে রেমিটেন্স বেড়েছে ৬৩ শতাংশ। আর গত জুন মাসের চেয়ে বেড়েছে ৪২ শতাংশ। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে প্রবাসীরা ২৬০ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। গত বছরের জুলাইতে প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন ১৫৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। এই হিসেবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিটেন্স বেড়েছে এক বিলিয়ন ডলারের মতো।
- জিডিপি প্রবৃদ্ধিঃ শেষ পর্যন্ত সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ীই জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশে। করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে যখন অর্থনীতিতে ধস নেমেছে, তখনও বাংলাদেশে এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৫.২০%।
- রিজার্ভঃ বর্তমান রিজার্ভের পরিমাণ ৩৩ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলার। (আগস্ট ২০২০)। গত ২২ জুন অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। প্রতি মাসে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার আমদানি খরচ হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে নয় মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়।
কভিড-১৯ এর কারণে সারা পৃথিবীর বিপর্যস্ত অর্থনীতির মাঝেও বাংলাদেশের অবস্থান যথেষ্ট সুদৃঢ়। আমরা আশাবাদী হতে চাই। হাতে আরও সময় চাই। সকলের সহযোগিতা চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে মাত্রায়, যেরূপ সততা ও স্বচ্ছতায়, যে গতিতে এগিয়ে যেতে চান, তার রাষ্ট্রীয় সকল মেশিনারির সেভাবে স্বচ্ছ, সৎ, সাবলীল গতিতে এগোনো চাই। তবেইনা সম্ভব হবে স্বপ্নের সোনারবাংলা বিনির্মাণ এবং পূর্ণতা পাবে রূপকল্প ২০২১।
Reference
[1] ইনকিলাব, ১০ জানুয়ারি, ২০১৯
[2] প্রথম আলো ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯,
[3] বাংলার আলো ১০ আগস্ট ২০২০
জাররাফ শেহমত সাকিন
August 28, 2020 at 12:41 pmচমৎকার তথ্য বহল লেখা। অনেক কিছু জানলাম । ধন্যবাদ স্যার