ঝালকাঠিতে জমে উঠেছে পেয়ারার হাঠ। খালে ও বিলের উপর ভাসমান পেয়ারার হাট-বাজার দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে আসছেন পর্যটক। স্থল ও জল পথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগন্তুক আসছেন ভ্রমণ করতে। উপভোগ করছেন ভাসমান পেয়ারার হাট-বাজার, বাগান। সেই সাথে প্রাকৃতিক নৈসর্গিক দৃশ্য যেন বাড়তি পাওনা ।
কেবল পর্যটকদের ভিড়ই নয়, ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁক-ডাকে মুখরিত এই ভাসমান হাট। তাদের পদচারণায় মুখর ও জমজমাট হয়ে উঠেছে জেলার ৫৫টি গ্রাম। জানা যায় পেয়ারার এই ভরা মৌসুমে প্রতি শুক্রবার অন্তত দুই শতাধিক ট্রলার আসছে। যাদের সম্পূর্ণ পর্যটক বোঝাই।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল বিভাগের তিন জেলায় পেয়ারার ফলন হয়ে থাকে। তিন জেলার ৫৫ গ্রামে পেয়ারার চাষ করেন চাষীরা। দক্ষিণাঞ্চলের এ জেলার হাজার হাজার মানুষের কাছে ‘পেয়ারা’ জীবিকার উৎস। এসব এলাকার নদী-খাল পাড়ে পেয়ারার সমারোহ গড়ে ওঠে আষাঢ়-শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসের ভরা বর্ষায়।
সারা দেশে সরবরাহকৃত আপেল পেয়ারার হাট হল ঝালকাঠি সদর উপজেলার ভীমরুলীর ভাসমান হাট। ভ্রমণপিপাসু ও প্রকৃতিপ্রেমিরা প্রতিবছর এটি দেখতে ছুটে আসেন। ঘুরে দেখেন পেয়ারা রাজ্য। ঘুরতে ঘুরতে নৌকা ও পানির সঙ্গে মিতালি সৃষ্টি হয়।
ঝালকাঠি সদরের কীর্তিপাশা ইউনিয়ন ও নবগ্রাম ইউনিয়নে ভীমরুলী বিলসহ বিভিন্ন খাল মৌসুমী ফল পেয়ারার ভাসমান হাট। এই হাট এখন বেশ জমজমাট।
পেয়ারার জমজমাট হাট
স্বরূপকাঠি জাতের প্রতি মণ পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা পাইকারি দামে। থাই জাতের পেয়ারা প্রতি কেজি ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ।
পেয়ারা চাষি ও বাগান মালিকরা জানান, সদর উপজেলার ২১টি গ্রামে ১৮৫০ একর জমিতে এ বছর পেয়ারার বাগান করা হয়েছে। এর মধ্যে কীর্তিপাশা ইউনিয়নের কীর্তিপাশা, মীরাকাঠি, ভৈরমপুর, ভীমরুলী, ডুমুরিয়া, খোদ্দবরাহর, বেশাইন খান, খেজুরা, শংকর ধবল, বেউখান ও স্থানসিংহপুর। এছাড়া নবগ্রাম ইউনিয়নের নবগ্রাম, দাড়িয়াপুর, হিমানন্দকাঠি, সওরাকাঠি ও কঙ্গারামচন্দ্রপুর গ্রামে সবচেয়ে বেশি পেয়ারা উৎপাদন হয়েছে।
পেয়ারা বাগানের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ভীমরুলী বিল। এই বিলকে ঘিরে আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র পর্যন্ত তিন মাস নৌকায় বসে ভাসমান পেয়ারার হাট। নৌকায় পেয়ারার কেনাবেচা করে থাকেন বাগান মালিক ও চাষি এবং পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারা।
ভীমরুলী গ্রামের ভীমরুলী বিলে গড়ে ওঠা ভাসমান হাট সবচেয়ে বড় ভাসমান হাট। বাকি হাটগুলো পেয়ারা বাগানের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া বিভিন্ন খালের ওপর।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঝালকাঠির উপ-পরিচালক বলেন, চাষিরা সেদিকেই আগ্রহী হবেন, যে আবাদে তারা লাভ বেশি পাবেন। দেশি পেয়ারা প্রতি কেজি ৫-১০ টাকায় বিক্রি হলে, আমড়া বিক্রি হয় ৫০ টাকায়। থাই পেয়ারাও তুলনামূলক বেশি লাভজনক।
কীর্তিপাশা ইউপি চেয়ারম্যান জানান, ২০০ বছরের ঐতিহ্য ঝালকাঠি পেয়ারার রাজ্য, যার সাথে মিশে আছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ।