Wednesday, 07 May, 2025

সর্বাধিক পঠিত

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের খুঁটিনাটি


বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ

আপনার মাছ চাষের প্রবল ইচ্ছা, মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হতে চান এবং মাছ চাষের মাধ্যমে বেকার জীবনের অবসান ঘটাতে চান। কিন্তু মাছ চাষের পুকুর বা জলাশ্বয় নেই সেক্ষেত্রে আপনি বায়োফ্লক পদ্ধতির মাধ্যমে মাছ চাষের সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারেন । বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের সঠিক জ্ঞানের মাধ্যমে মাছ চাষ করলে আপনার সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি এবং প্রতি মাসে ১ লক্ষ টাকার বেশি আয় করতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে বায়োফ্লকে মাছ চাষ সম্বন্ধে এবং মাছ সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখতে হবে।

নিচের লেখাটি বায়োফ্লকের খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বায়োফ্লকে মাছ চাষ সম্বন্ধে আপনার প্রশ্ন কমেণ্ট বক্সে জানান কিংবা প্রশ্ন করুন, আমরা আপনার প্রশ্নের উত্তর দিব।এ লেখা টি পুরোটা পড়লে বিশ্বাস বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য কোন ট্রেনিং দরকার পড়বে না। বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে আমরা আমাদের বাস্তব জ্ঞানের অভিজ্ঞতা নিয়ে আছি আপনার পাশে।

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ কি?

আরো পড়ুন
নিষেধাজ্ঞা শেষে চাঁদপুরে আবারও ইলিশ শিকার, নদীতে ফিরলেন জেলেরা

দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে বুধবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনা নদীতে ইলিশ ধরতে নেমেছেন জেলেরা। দীর্ঘ Read more

তিনগুণ বেশি ডিম ও মাংস দেয় ‘বাউ-ডাক’: হাঁস পালনে নতুন সম্ভাবনা

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা উদ্ভাবন করেছেন নতুন এক জাতের হাঁস ‘বাউ-ডাক’, যা দেশি হাঁসের মতো দেখতে হলেও উৎপাদনে অনেক বেশি Read more

বায়োফ্লক প্রযুক্তি (biofloc technology) মাছ চাষের একটি টেকসই এবং পরিবেশগতভাবে সবুজ প্রযুক্তি ৷ পানির গুনগতমান এবং ক্ষতিকারক রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুকে নিয়ন্ত্রণ করে মাছের বসবাসের পরিবেশ সৃষ্টি করে৷ জলীয় খামার ব্যবস্থার জন্য মাইক্রোবায়াল প্রোটিন খাদ্য হিসেবে সরবরাহ করে।

বায়োফ্লক হল উপকারি ব্যাকটেরিয়া, অণুজীব ও শৈবালের সমম্বয়ে তৈরি হওয়া পাতলা আবরণ, যা পানিকে ফিল্টার করে অ্যামোনিয়া নামক মাছের বিষ দূরীভূত করে।বায়োফ্লক প্রযুক্তি মূলত বর্জ্য পুষ্টির পুর্নব্যবহারযোগ্য নীতি৷ বিশেষ করে, নাইট্রোজেন, মাইক্রোবায়াল জৈব বস্তুপুঞ্জের মধ্যে খাবারের খরচ কমাতে এবং মাছের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ‘বায়োফ্লক’ (Biofloc) প্রযুক্তি যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করে।

এই প্রযুক্তি পানিতে বিদ্যমান কার্বন ও নাইট্রোজেন এর সাম্যাবস্থা নিশ্চিত করে পানির গুণাগুণ বৃদ্ধি ও ক্ষতিকর রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু নিয়ন্ত্রণ করে। বায়োফ্লক প্রযুক্তির মূলনীতি হল ইহা হেটারোট্রপিক ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে, পানিতে উচ্চ কার্বন-নাইট্রোজেন অনুপাত নিশ্চিত করার মাধ্যমে যা ক্ষতিকর অ্যামোনিয়াকে অণুজীব আমিষে রূপান্তর করে। এটি একটি পরিবেশ বান্ধব বিকল্প প্রযুক্তি যা ক্রমাগতভাবে পানিতে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদানগুলোকে পুন: আবর্তন এর মাধ্যমে পুনঃ ব্যবহার নিশ্চিত করে। ট্যাংকের পানি খুব কম পরিবর্তন উক্ত ট্যাংকে বিদ্যমান অণুজীবের বৃদ্ধির সহায়ক হয় বলে এটি একটি টেকসই প্রযুক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে।

বায়োফ্লক পদ্ধতির মাছ চাষ, ছবিঃ সংগ্রহ করা

রাস (RAS) সিস্টেমের সাথে বায়োফ্লক পদ্ধতির পার্থক্য কি?

রিসারকুলেটিং একোয়াকালচার পদ্ধতি বা রাস (RAS) সিস্টেমে খরচ বেশি। অনেকের পুকুর নেই, কিন্তু মাছ চাষের শখ বা ইচ্ছা আছে, তারা রাস সিস্টেমে মাছ চাষ করার কথা চিন্তা করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে যাদের পর্যাপ্ত বিনিয়োগের ক্ষমতা আছে রাস সিস্টেম তাদের জন্য। পক্ষান্তরে বায়োফ্লকে (Biofloc) খরচ রিসারকুলেটিং একোয়াকালচার পদ্ধতি এর থেকে কম, যদি রাস সিস্টেমের সাথে তুলনা করা হয়।

শতকরা ৮০ ভাগ খরচ কম লাগে বায়োফ্লকে। (RAS) সিস্টেমে মাছের খাওয়ার অবশিস্টাংশ একটি পাইপ দিয়ে বের করে প্রথম মেকানিকেল ফিল্টারে নেয়া হয়, এরপর সেখানে থেকে বায়োফিল্টারে নিয়ে আবার চাষ ট্যাংকে আনা হয়। পক্ষান্তরে, বায়োফ্লক সিস্টেমে কোন ফিল্টারের দরকার হয়না।

বায়োফ্লক সিস্টেমে বায়োফ্লক আসলে একধরণের উন্নতমানের ব্যকটেরিয়া। এটা মাছের উচ্ছিস্ট দুষিত অংশকে কনভার্ট করে প্রোটিন তৈরী করে দেয়। তবে বায়োফ্লক সিস্টেমে ১৫ দিন পর পর ১০ ভাগ পানি বের করে দিতে হয়। রাস সিস্টেমে মেশিনারীজ প্রয়োজন পড়ে, কিন্তু বায়োফ্লকে শুধুমাত্র এয়ার ব্লোউয়ার চালাতে হয়। বায়োফ্লক পদ্ধতিতে রিসারকুলেটিং একোয়াকালচার পদ্ধতির থেকে বিদ্যুত কম খরচ হয়ে থাকে।

তবে উভয় ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার এবং জ্ঞানের প্রয়োজন না হলে বিনিয়োগ ক্ষতির মুখে পড়বে।

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছের রোগ কেন হয়? রোগ হলে করণীয় কি কি?

বায়োফ্লক পদ্ধতি একটি নিরাপদ মাছ চাষ পদ্ধতি। কিন্তু এর সঠিক ব্যবহার পদ্ধতি বুঝতে বা অনুসরণ না করতে পারলে এটি যেকোন সময় বিপদের কারণ হতে পারে।বায়োফ্লক পদ্ধতিতে ফ্লক তৈরি ও ফ্লক এর কার্যকারীতা ধরে রাখাই হল বায়োফ্লক পদ্ধতি এর মুলবিষয়।

বায়োফ্লকের পানিতে প্রবায়োটিক কার্যকর হলে রোগাক্রান্ত হবার কোন প্রশ্নই আসে না। যদি রোগাক্রান্ত দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে আপনার ফ্লক অপটিমাম লেভেলে নেই কিংবা ফ্লক কার্যকর হচ্ছে না। এজন্য পানি নষ্ট হয়ে গন্ধ হচ্ছে, মাছ মারা যাচ্ছে ইত্যাদি। যদি বায়োফ্লকে অক্সিজেন কম থাকে তাহলে নাইট্রিফিকেশন সিস্টেম ভালো কাজ করতে পারে না ফলে অতিরিক্ত খাবার ও মাছের মলমূত্রাদী পচে হাইড্রোজেন সালফাইড ও নাইট্রাইট বৃদ্ধি করে। ফলে বেশির ভাগ ক্ষেএে মাছ মারা যাওয়া শুরু করে।

শিং, মাগুর, পাবদা, গুলশা মাছ গুলোর গ্রোথ এর জন্য উচ্চ প্রোটিনযুক্ত ফিড প্রয়োজন হয়। আর এ কারনেই এমোনিয়ার পরিমান দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং ফ্লক এর কার্যকারীতা কমে যায় এবং মাছ মরা শুরু হয়।

স্যালাইনিটি বৃদ্ধি পেলেও মাছ মারা যাওয়া শুরু করে। বিশেষ করে শিং, মাগুর, পাবদা, গুলশা, পাংগাস।

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের সুবিধা:

স্বল্প খরচ ও অধিক লাভ:

পুকুরে মাছ চাষের শতকরা ৬০ ভাগ খরচই খাবারের জন্য ব্যয় হয়। বায়োফ্লক পদ্ধতিতে সিস্টেমের উপকারী ব্যাকটেরিয়া ট্যাংকেই অণুজীব প্রোটিন তৈরি করে তাই অন্যান্য সিস্টেমের চেয়েও খাদ্য কম লাগে ফলে চাষের খরচ কমে যায় এবং অধিক মুনাফা অর্জন সম্ভব হয়।

সহজ চাষ পদ্ধতি:

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে একটি সহজ চাষ পদ্ধতি। বাড়িতে যে কোন চাষি সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কারিগরি দক্ষতা অর্জন পূর্বক ৩০-৪০ টি ট্যাংকে সহজেই মাছ চাষ করতে পারবে।

অ্যামোনিয়া দূরীকরণ:

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে বিদ্যমান উপকারী ব্যাকটেরিয়া মাছ চাষের প্রধান নিয়ামক অ্যামোনিয়াকে মাছের দৈহিক বৃদ্ধির জন্য অত্যাবশ্যকীয় উপাদান প্রোটিনে রূপান্তর করার মাধ্যমে সিস্টেমে ক্ষতিকর অ্যামোনিয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।

মাছের বৃদ্ধি নিশ্চিতকরণ:

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে ট্যাংকের পানির গুণাগুণ নিয়ন্ত্রণ, ক্ষতিকর রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু নিয়ন্ত্রণ, মাছের মলও উচ্ছিষ্ট খাদ্যকে মাছের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিনে রূপান্তরের মাধ্যমে মাছের বৃদ্ধি সুনিশ্চিত করে।

উত্তম প্রোটিনের উৎস:

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে উপকারী ব্যাকটেরিয়া (প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া) বিদ্যমান ক্ষতিকর অ্যামোনিয়া ও বাইরে থেকে সরবরাহকৃত কার্বনকে ব্যবহার করে অণুজীব আমিষ তৈরি করে। তাছাড়া ডায়াটম, প্রোটোজোয়া, অ্যালজি, ফেকাল পিলেট, জীবদেহের ধ্বংসাবশেষ ইত্যাদির ব্যাকটেরিয়া ম্যাক্রো-এগ্রিগেট তৈরি করে যা মাছের উত্তম প্রোটিনের উৎস হিসেবে কাজ করে।

খাদ্য রূপান্তর হার (এফসিআর) হ্রাস করণ:

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের ক্ষেত্রে খাদ্য রূপান্তরের হারের মান যত কম হবে মাছ চাষে মুনাফা তত বেশি হবে। এক্ষেত্রে বায়োফ্লক প্রযুক্তির সিস্টেমের উপকারী ব্যাকটেরিয়া মাছের অব্যবহৃত খাদ্য,মল-মূত্র থেকে নিঃসৃত অ্যামোনিয়াকে ব্যবহার করে অণুজীব প্রোটিন তৈরি করার ফলে বাহির থেকে প্রোটিন সমৃদ্ধ মাছের খাদ্য কম সরবরাহ করলেও হয়, তাই বায়োফ্লক পদ্ধতিতে খাদ্য রূপান্তর হার (এফসিআর) অন্যান্য সিস্টেম থেকে কম হয়।

খুব কম পানি পরিবর্তন:

মাছ চাষের অন্যতম নিয়ামক অ্যামোনিয়া নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে উপকারী ব্যাকটেরিয়া পানির গুণাগুণ রক্ষা করে ফলে ট্যাংকের পানি খুব কম পরিবর্তন করলেই চলে।

জমি এবং পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ:

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে সিস্টেমে ছোট ছোট ট্যাংকে অনেক মাছ উৎপাদন হয় এবং ট্যাংকের পানি ও খুব কম পরিবর্তন করতে হয় তাই অল্প জমি ও অল্প পানি ব্যবহার করে অধিক মাছ উৎপাদন সম্ভব হয়। যা জমি ও পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে।

পরিবেশবান্ধব একোয়াকালচার সিস্টেম:

প্রকৃতিতে বিদ্যমান উপকারী ব্যাকটেরিয়া ব্যবহারের মাধ্যমে মাছ চাষ করা হচ্ছে। ফলে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষে ব্যবহৃত বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ও অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন নেই বললেই চলে। তাই এটি একটি পরিবেশবান্ধব মাছ চাষ পদ্ধতি।

উচ্চ বায়োসিকিউরিটি: বায়োফ্লক পদ্ধতিতে

যেহেতু উপকারী ব্যাকটেরিয়া (প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া) ব্যবহার করা হয় যা পানির গুণাগুণ বৃদ্ধি ও রোগ সৃষ্টিকারী ক্ষতিকর জীবাণু নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে পুরো সিস্টেমকে উচ্চ বায়োসিকিউরিটি প্রদান করে।

রোগের প্রাদুর্ভাব দূরীকরণ:

বায়োফ্লক সিস্টেমের উপকারী ব্যাকটেরিয়া মাছের জন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া সমূহের বৃদ্ধিকে বাধা প্রদান করে ফলে ঐসব ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ থেকে মাছ রক্ষা পাবে। যার ফলে মাছ চাষের সময় খামারকে রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা করা সম্ভবপর হয়।

বায়োফ্লকে মাছ চাষ পদ্ধতিতে মাছ মারা যাওয়া শুরু হলে করণীয় কি?

বায়োফ্লকে মাছ মারা যাওয়া শুরু হলে পর্যায়ক্রমে নিচের কাজ গুলো অনুসরণ করতে হবে।

১. ফিড বা খাবার দেয়া বন্ধ রাখুন।

২. মৃত মাছ গুলো বায়োফ্লক থেকে তুলে ফেলুন।

৩. বায়োফ্লকের ট্যাঙ্কের ৫০% পানি পরিবর্তন করুন।

৪. প্রতিদিন FCO দিন।

৫. TDS ১০০০-১২০০ পিপিএম রাখুন। শিং, মাগুর, পাবদা, গুলশা, পাংগাস সহ সব মাছের জন্য প্রযোজ্য।

৬. Salinity ১ পিপিটি রাখার চেষ্টা করুন। শিং, মাগুর, পাবদা, গুলশা, পাংগাস সহ সব মাছের জন্য প্রযোজ্য।

৭. ১০০০ লিটারের জন্য ১ গ্রাম প্রবায়োটিক ১০ গ্রাম মোলাসেস মিশিয়ে রাতে বায়োফ্লকে ৭ দিন পরপর দিন।

৮. অক্সিজেন লেভেল ৫-৮ পিপিএম রাখার চেষ্টা করুন।

৯. প্রতিদিন কার্বন: নাইট্রোজেন অনুপাত হিসেবে মোলাসেস দিন। অবশ্যই মোট পরিমানটি কয়েকবারে দিন।

১০. কোন ভাবেই অভিজ্ঞ কারও সাথে পরামর্শ ছাড়া এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করবেন না। করলে বিপদে পড়তে পারেন। উপরের বিষয় গুলো ফলো করলে কোন রোগ হবে না ইনশাআল্লাহ।

বায়োফ্লক সিস্টেমে ফ্লক তৈরীর প্রধান উপাদানঃ

প্রোবায়োটিক

বায়োফ্লকের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান প্রোবায়োটিক। যাকে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বলা হয়। যেমন ল্যাকটোব্যাসেলিয়াস নাম ব্যাকটেরিয়া। এটা দিয়ে দুধ থেকে দই তৈরী হয়। এ ছাড়া আমাদের পাকস্থলীতে অনেক ভাল ব্যাকটেরিয়া থাকে যার সংখ্যা প্রায় ৪০০ হবে। যা আমাদের হজম কাজে সাহায্য করে। এই প্রোবায়োটিক মাছের উচ্ছিস্ট থেকে তৈরী অ্যামোনিয়া গ্যাস দূরীভূত করে। প্রোবায়োটিকের পিএইচ সাধারন: ৩.৫ থেকে ৪.৫ থাকা বাঞ্চনীয়।

মোলাসেস

মোলাসেস হল চিটাগুড় বা গুড়ও বলা যায়। আবার ঝোলাগুড়ও বলা হয়। অনেকে লালিও বলে। এটা হল কার্বনের উৎস। তাই বলে কয়লা নেয়া যাবে না। একান্ত মোনাসেস না পেলে গুড় ব্যবহার করা যাবে।

FCO বা এফ সি ও

বায়োফ্লকে এফসিও একটি গুরত্বপূর্ণ বিষয়। এফ সি ও হল Fermented Carbon Organic (প্রাকৃতিক গাজন পদ্ধতি)। ব্যাকটেরিয়া কালচার করা হয়।

ডিও মিটার

এটা দিয়ে পানির ডিসল্ভ অক্সিজেন পরিমাপ করা হয়। পানিতে ৫-৮ মি.গ্রা/লিটার হারে দ্রবীভূত অক্সিজেন থাকলে মাছ কাঙ্ক্ষিত হারে বৃদ্ধি পায়। পানিতে ২.০ মি.গ্রা/লিটারের কম অক্সিজেন থাকলে রুইজাতীয় মাছ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে না। অবশ্য মাছ ভেদে অক্সিজেনের মাত্রা পৃথক হতে পারে।

মুল লবন বা সোডিয়াম ক্লোরাইড

মুল লবন বা সোডিয়াম ক্লোরাইড মানে খোলা লবন। যেটা অপরিশোধিত। সামদ্রিক লবনও বলা হয়। যেটাতে কোন আয়োডিন থাকে না।

পিএইচ মিটার

পিএইচ মিটার দিয়ে পানির পিএইচ পরিমাপ করা হয়। মাছ চাষের পানিতে পিএইচ এর মাত্রা ৭-৮.৫ এর মধ্যে থাকা বাঞ্চনীয়। পিএইচ মাত্রা যদি ৪.৫ এর নিচে হয় এবং ১০ এর উপরে হয় তবে সব মাছ মারা পড়বে। পিএইচ যদি ৬.৫-৮.৫ এর নিচে বা উপরে হয় তবে এক্ষেত্রে মাছ যেকোনভাবে আক্রান্ত হবে।

পিএইচ স্কেল
পিএইচ স্কেল

টিডিএস মিটার

TDS এর পূর্ণরূপ Total Dissolved Solid. পানিতে সাধারণত দ্রবীভূত অবস্থায় ক্যালসিয়াম , ম্যাগনেসিয়াম , পটাসিয়াম ও সোডিয়ামসহ আরো কয়েকটি প্রাকৃতিক উপাদান থাকে যাকে টিডিএস (TDS) বলা হয় । এগুলো পরিমাপের যন্ত্রটিই হল টিডিএস মিটার। মাছ চাষের জন্য উপযুক্ত টিডিএস হল ১৮০০-২০০০মিগ্রা/লিটার এর মধ্যে। ২০০০ হল স্ট্যান্ডার্ড।

টিডিএস মিটার
টিডিএস মিটার

অ্যামোনিয়া টেস্ট কিট

অ্যামোনিয়া টেস্ট কিট একধরণের তরল পানীয়। এটা দিয়ে পানিতে অ্যামোনিয়ার পরিমান পরীক্ষা করা হয়। অ্যামোনিয়া ০.৬-২.০ মিলিগ্রাম/লিটার হলে মাছের জন্য তা বিষাক্ত হয়ে থাকে। অ্যামোনিয়া ঘনত্বের সর্বোচ্চ মাত্রা হলো ০.১মিলিগ্রাম/লিটার। অ্যামোনিয়ার পরিমাণ ০.২ মিলিগ্রাম/লিটার এর কম থাকা ভালো। যদিও ০.৪ মিলিগ্রাম/লিটার গ্রহণযোগ্য। সাধারণত: ১০মিলি পানির সাথে ৮ ফোটা কিট যোগ করে পরীক্ষা করতে হয়।

তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ

বায়োফ্লকের জন্য তাপমাত্রা একটা বড় ফ্যাক্টর। তাপমাত্রা ২০ এর নিচে নেমে গেলে বায়োফ্লক তৈরী হবে না। স্ট্যান্ডার্ড তাপমাত্রা হল ৩০ ডিগ্রী। তাই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। বিশেষ করে শীতকালে। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে মাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য ট্যাংকের মাটি পিভিসি শিট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। অথবা কর্কশীটও (ফোম) ব্যবহার করা যায়। আর উপরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য শেড দিতে হবে। সাইটের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্যও এই ফোম ব্যবহার করা যায়।

ইমহফ কোন

ইমহফ কোনের সাহায্য বায়োফ্লকে ফ্লক ও স্লাজের পরিমান নির্ণয় করা হয়। ফ্লকের পরিমান ২৫-৩০ মিলিগ্রাম / লিটার থাকা ভাল। অনেক প্রোবায়োটিকের ক্ষেত্রে ফ্লকের পরিমান কম হলে ও এমোনিয়া কণ্ট্রোল করতে পারে। তবে ৪০ মিলিগ্রাম বা তার বেশি ফ্লক হলে পানি ১০ % পরিবর্তন করা উত্তম সেক্ষেত্রে ফ্লক কমে যাবে।
স্বাদু পানিতে মাছ চাষ বিষয়ক বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুনঃ স্বাদু পানিতে মাছ চাষ ব্যবস্থাপনা

বায়োফ্লকের পানি তৈরি করার পদ্ধতি বা নিয়মঃ

কেমিক্যাল উপদান মুক্ত বৃষ্টির পানি, নদির পানি, জলাশয়ের পানি অথবা গভির নলকুপের পানি বায়োফ্লকে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে পানির গুনাগুন পরীক্ষা করে নেওয়া ভাল।

ট্যাঙ্ক ব্লিচিং পাউডার দিয়ে জিবানুমুক্তকরন করে এবং পানির গুনাগুন পরিক্ষা করে পানি ঢুকাতে হবে। একদিন শুকিয়ে নিয়ে পটাশিয়াম পার ম্যংগানেট বা ডিটারজেন্ট দিয়ে ভাল ভাবে জীবাণুমুক্ত করে আবার একদিন শুকিয়ে নিতে হবে।

এরপর বায়োফ্লক ট্যাঙ্ক এ অর্ধেক পানি নিয়ে দুই দিন এরেটর দিয়ে অক্সিজেন দিতে হবে। দুই দিন অক্সিজেন দেয়ার পর টিডিএস এবং পিএইচ পরিমাপ করতে হবে। টিডিএস হবে ৫০০-১৩০০ এবং পিএইচ এর পরিমাপ ৭ এর উপরে থাকা ভাল। প্রাথমিক অবস্থায় টিডিএস ৬০০ এবং পিএইচ ৬-৭ এর মধ্যে থাকে।

টিডিএস কম থাকলে ট্যাঙ্কে র সল্ট দিতে হবে। প্রোবায়োটিক দেবার আগে টিডিএস এর মান ৫০০ থাকা নিশ্চিত করতে হবে। টিডিএস বেশি হলে ফ্লোক ভাল তৈরি হয় না। টিডিএস বাড়ানোর জন্য প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ গ্রাম র সল্ট দিতে হবে।

যাদের পানিতে আগে থেকেই টিডিএস বেশি তাদের পানির লবনাক্ততা এবং আয়রনের পরিমান পরিমাপ করা দরকার। সেক্ষেত্রে ফিটকিরি দিয়ে দুই বা তিন দিন পর তলানি থিতিয়ে ফেলে দিলে টিডিএস কমে যায়।

বায়োফ্লক বা পুকুরে হোক মাছ চাষের যথার্থ পিএইচ ৬.৫-৮.৫। পানিতে পিএইচের মান কম হলে চুন দিতে হবে আর পিএইচের মান বেশি হল কিছু করার দরকার নাই শুধু এরেটর চালিয়ে যেতে হবে পিএইচ এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। পিএইচের মান ৬ এর নিচে চলে আসলে প্রতি ১০০০০ লিটার পানিতে ৫০০ গ্রাম হারে চুন দিতে হবে। পিএইচের মান যদি ৮.৫ এর উপরে চলে যায় তবে তেতুলের রস দিয়ে কাঙ্ক্ষিত সীমার মধ্যে পিএইচের মান আনতে হবে।

পিএইচ এবং টিডিএস ঠিক করার দুই দিন পর প্রতি ১০০০০ লিটারে ৭ লিটার (FCO) এফ সি ও প্রয়োগ করতে হবে। এফ সি ও প্রয়োগের পর যে কোন দিন মাছ বায়োফ্লকে ছাড়া যাবে।

১ লিটার মোলাসেস এ ২০০ গ্রাম প্রোবায়োটিক (যেকোন ব্রান্ডের প্রোবায়োটিক হতে পারে) মিশিয়ে ৫-৭ দিন এরেটর দিয়ে এরেশন করেলে প্রোবায়োটিক তৈরি হয়ে যায়। এফ সি ও পদ্ধতি সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি।

কিভাবে বুঝবো বায়োফ্লকে ফ্লক তৈরি হয়ে গেছে?

পানিতে যথাযথ পরিমান ফ্লক তৈরি হয়ে গেলে – পানির রং সবুজ দেখায়, পানিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কনা দেখা যায়। পানিতে এমোনিয়া শুন্য দেখায়। প্রতি লিটার পানিতে ০.৩ গ্রাম ফ্লকের ঘনত্ব দেখা যায়। এবং ক্ষুদি পোনা দিলে বংশবিস্তার করে।

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে যে সকল প্রজাতির মাছ চাষ সম্ভব:

উচ্চ ঘনমাত্রায় যে সকল মাছ থাকতে পারে। বাজার দর ভাল এমন মাছ চাষ করতে হবে। আমাদের দেশে সচরাচর চাষকৃত মাছ যেমন- তেলাপিয়া, রুই, শিং, মাগুর, পাবদা, গুলশা ও চিংড়ীসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করা যেতে পারে। তবে, যারা নতুন করে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাছ চাষ শুরু করতে চান তারা অবশ্যই প্রথমে তেলাপিয়া, শিং ও মাগুর মাছ দিয়ে চাষ শুরু সমীচীন হবে। অভিজ্ঞতার আলোকে মাছ চাষের তালিকা।

১। কৈ, ২। তেলাপিয়া, ৩। চিংড়ি, ৪। গুলসা, ৫। পাঙ্গাস, ৬। দেশি মাগুর, ৭। পাবদা, ৮। কার্প জাতীয় এবং ৯। শিং ইত্যাদি।

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছের খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ

মাছ চাষের মুল বিনিয়োগের ৭০ শতাংশ খরচ হয় খাবারের জন্য। এ জন্য মাছ চাষের খাবার খাওয়ানোতে খুবই সর্তক হওয়া উচিত। কোন ভাবেই খাবার নষ্ট করা যাবে না। বেশি খাবার দিলে পানি এবং খাবার দুটি ই নষ্ট হয়। প্রতি ৭-১০ দিন পর পর (FCR) এফ সি আর পরিমাপ করতে হবে। বায়োফ্লকে তেলাপিয়ার ক্ষেত্রে এফ সি আর কখন ও ০.৬ এর বেশি হওয়া ঠিক নয়।

বায়োফ্লকে মাছ দেয়ার ১২-১৮ ঘণ্টার পর খাবার দিতে হবে। মাছ বায়োফ্লকে ছাড়ার পর ১২ ঘন্টার আগে খাবার দেবেন না। ১২ ঘন্টার আগে খাবার দিলে মাছ মারা যেতে পারে।

বায়োফ্লকে অবশ্যই ভাসমান ফিড দিতে হবে। কখনই ডোবা ফিড দেয়া যাবে না।

মাছের খাবার খাওয়ার ধরনের উপর খাবারে সময় নির্ধারণ করতে হবে। যে সকল মাছ রাতে খাবার খায় তাদের রাতে খাবার দিয়ে হবে। খাবার দিনে দুই থেকে তিন বার খাবার দিতে হবে। নিশাচর মাছ যেমন, পাবদা, শিং কে রাতেও খাবার দিতে হবে।

খাবার নিদিষ্ট সময়ে দিতে হবে। একই সময় একই যায়গায় খাবার দিতে হবে। সেক্ষেত্রে মাছের গ্রোথ ভাল হয়। খাবার অপচয় কম হয়।

বাজার হতে ভাল মানের খাবার দিতে হবে। খারাপ খাবার মাছের রোগ বৃদ্ধি করে।

মোট দেহ ওজনের ৪% হারে খাবার দিতে হবে। ১০০ কেজি মাছের জন্য ৪ কেজি খাবার দিতে হবে। ৪ কেজি খাবার দিনে দুই বার দিতে হবে সকালে ২ কেজি এবং বিকালে ২ কেজি।

কম প্রোটিন খাবার নির্ধারণ করতে হবে। বৃষ্টির সময় খাবার বন্ধ রাখাতে হবে। টানা দুই তিন বৃষ্টি হলে যখনি বৃষ্টি কমে যাবে তখনি খাবার অল্প করে দিতে হবে।

বায়োফ্লকে মাছের রোগব্যাধি, প্রতিকার ও প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা

বায়োফ্লক একটি সায়েন্টিফিক উপায়ে মাছ চাষ পদ্ধতি। এখানে মিলিয়ন বিলিয়ন উপকারী ব্যকটেরিয়া প্রতিনিয়ত উৎপন্ন হচ্ছে যাদের কাজ মাছের মলমুএ থেকে উৎপন্ন এ্যমোনিয়া গ্যাস নিস্ক্রিয় করা ও ক্ষতিকর ব্যকটেরিয়া ধ্বংস করা। তাহলে বায়োফ্লকে রোগ তো হবার সুযোগ নেই যদি প্রবায়োটিক সঠিক ভাবে কাজ করার সুযোগ পায়। যখন প্রবায়োটিক গুলো গ্রো এন্ড মাল্টিপ্লাই করার জন্য বিভিন্ন প্যারামিটার যেমন কার্বন: নাইট্রোজেন অনুপাত, স্যালাইনিটি, টিডিএস এর মাণ সঠিক হয় না তখন ব্যকটেরিয়া গুলোর কার্যকারীতা নষ্ট হয় বা কমে যায়। আর তখনই বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।

যেমন বায়োফ্লকে অক্সিজেন এর পরিমান যদি কম থাকে তাহলে মাছের মল-মুত্র ও অতিরিক্ত খাদ্য থেকে নাইট্রাইট ও এ্যমোনিয়া বৃদ্ধি পাবে যা কিনা পরবর্তীতে pH বৃদ্ধি ঘটায় এবং মাছ দূর্বল হতে থাকে মাছের চোখগুলো রক্তবর্ণ ও বাহিরে বেরিয়ে আসে, মাছের ফুলকার রক্ত জমাট বেধে মারা যায় এবং মাছ গুলো পানির উপরে ভাসতে থাকে এবং মুখ দিয়ে অক্সিজেন নেয়, কিছু কিছু ক্ষেএে মুখ হা করে মারা যায়। এগুলো কোন জীবানুঘটিত রোগ নয়। এ গুলো পানির বিভিন্ন প্যারামিটারের অব্যবস্থাপনা জন্যই হয়ে থাকে।

আবার অনেক সময় শিং, মাগুর, পাবদা, গুলশা জাতীয় মাছের গায়ে চামড়া সাদা হয়ে যায়, চামড়া উঠে যায়, লাল রং ধারন করে ইত্যাদি। এগুলো সাধারণত কয়েকটি কারণে হয় যেমন আমরা যেখান থেকে পোনা নিয়ে আসি ওখানেই পোনাগুলো অসুস্থ ছিল অথবা পোনা বায়োফ্লকে ছাড়ার পূর্বে জীবানুমুক্ত করা হয় নি অথবা বায়োফ্লকে স্যালাইনিটি বেশির কারণেই বেশির ভাগ ক্ষেএে পেয়েছি। এসব মাছের স্যালাইনিটি অবশ্যই ১-১.২ পিপিটি থাকতে হবে। তাহলে কোন সমস্যা হয় না। এ জাতীয় মাছ floc খেতে পছন্দ করে না। কম প্রোটিনযুক্ত খাবার দিলে বিভিন্ন নিউট্রিশনাল ডিজিজ দেখা যায় যেমন শরীর শুকিয়ে যায়, মাথা বড় হয়, লেজ চিকন হয়, দূর্বল ভাবে ভাসতে থাকে যা কোন ব্যকটেরিয়া ঘটিত রোগ নয়।

তেলাপিয়া জাতীয় মাছের লেজ পচে যায়, গায়ে আশ খসে পড়ে, চামড়ার নিচে লাল বর্ণ, কিডনি ও লিভার নষ্ট হয়ে যায়, মাছ উপরে উঠে ঘুরতে ঘুরতে মারা যায়। এটা Streptococcus জাতীয় ব্যকটেরিয়ার ছয়টি প্রজাতি দ্বারা আক্রান্ত হয়। এছাড়াও লেক ভাইরাস নামে একটি মারাত্মক রোগ পাওয়া যায়।

কৈ মাছের লেজ পচে যায়, শরীরে ঘা হয়। যাকে EUS (Epizootic ulcerative syndrome) বলে এবং এটি Aphanomyces invadance নামক ছএাক এর কারনে হয়।

বায়োফ্লকে মাছের রোগ প্রতিকার ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা

বায়োফ্লকে প্রবায়োটিক কাজ করলে কোন রোগ হয় না । ফ্লক এর জন্য পানির মানের প্যারামিটার গুলো ঠিক রাখুন। প্রতিদিন FCO দিন। ফ্লক ৩০-৩৫% রাখুন। কার্বন: নাইট্রোজেন অনুপাত অনুযায়ী প্রতিদিন মোলাসেস দিন। স্যালাইনিটি চেক করুন। এ্যমোনিয়া নিয়ন্তনে নিয়ে আসুন। মাঝে মাঝে কিছু পানি ৫-১০% পরিবর্তন করুন। খাবার বডি ওয়েট হিসেবে দিন। শিং মাছকে রাতে খাবার দিন। মাছ মরা শুরু হলে খাবার বন্ধ রাখুন। মৃত মাছ ও অসুস্থ মাছ ভেসে উঠলে তুলে ফেলুন। তাহলে ইনশাআল্লাহ মাছ সুস্থ হয়ে যাবে।

বায়োফ্লক মাছ বেশি আক্রান্ত হলে oxytetracycline & doxicycline গ্রুপের ঔষধ খাওয়াতে পারেন। ৭৫ মিগ্রা /কেজি ফিডের জন্য antibiotic (oxy doxy / renamycin/captor) আটা বা ময়দার সাথে মিশিয়ে ৭ দিন খাওয়াবেন। এ ক্ষেএে আপনার ফ্লক নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এজন্য প্রতিদিন ৫০% পানি পরিবর্তন করবেন। antibiotic treatment শেষে ২ দিন পর ১০০০ লিটারের জন্য ১ লিটার করে FCO দিতে হবে। তখন আর পানি পরিবর্তন করার প্রয়োজন নেই। নিয়মিত FCO দিতে থাকুন।

বায়োফ্লকে মাছ চাষ লেখাটি নিয়ে আপনার মতামত কমেন্ট বক্সে জানান। আপনার মতামতের ভিত্তিতে আমরা আরোও লিখব।

18 comments on “বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের খুঁটিনাটি

MD Rakib Hasan

আসসালামু আলাইকুম স্যার
১০০০ লিটার পানি তে কতটুকু প্রোবায়োটিক লাগে?
আর এই প্রোবায়োটিক কিবাবে টেংকে দিতে হই?
বিস্তারিত জানালে ভালো হতো

Reply
রাকিবুল ন

আমি যদি প্রথমে ১০০০০লিঃটেংকে মাছ চাষ করতে চাই তাহলে মোট কত টাকার খাদ্য লাগবে।খাদ্যের তালিকা টা প্রকাশ করলে ভালহতো।ধন্যবাদ

Reply
মাসুম বিল্লাহ

বায়োফ্লকে মাছ চাষ করতে চাই। প্রয়োজনীয় উপাদান কোথায় পাব?

Reply
Mijanur Rahman

আসসালামু আলাইকুম , অনেকে বলে বায়োফ্লকের মাছ নাকি ফ্লক খায় না কথাটা কতটুকু সত্য ?

Reply
এগ্রোবিডি২৪

অলাইকুম-সালাম!! বায়োফ্লকের মাছ যে বর্জ খাবার পর বের করে সে বর্জ যাহাকে আমরা মাছের পায়খানা বলি, মাছের পায়খানা কিছু উপকারি ব্যাক্টেরিয়ার মাধ্যমে আবার মাছের খাবারের জন্য উপযোগি হয়। এবং বায়োফ্লকের মাছ অবশ্যই ফ্লক খায়। যে আপনাকে ফ্লক খায় না বলেছে আপনি উনাকে প্রশ্ন করুন। তাহলে বায়োফ্লক পদ্ধতি কিভাবে চলে? ধন্যবাদ ভাই। সাথে থাকুন।

Reply
Rafiqul Islam

অনেক তথ্যবহুল এবং উপকারি লেখা ।
ধন্যবাদ

Reply
Jakaria Habib

ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।

Reply
Diptesh dhar

Very informative on biofloc technolog. Well written

Reply
R.h. Munna

apni ki ei podhoti follow kore harvest korechen? janar jonno jiggasa

Reply
মোঃ ফরিদুল ইসলাম

অবশ্যই। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

Reply
Nadia Jahan Eva

Onnek Onnek valo laglo likhagula

Reply
এগ্রোবিডি২৪

ধন্যবাদ আপনার মতামতের জন্য । সাথেই থাকুন, আমরা আরো বিষয় নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হবো 🙂

Reply
Nadia Jahan Eva

আপনি যে বললেন মাছ মারা যাওয়া শুরু হলে প্রথমে ফিড দেয়া বন্ধ রাখতে.. তো, কত দিন ফিড দেয়া বন্ধ রখতে হবে. ……?????

Reply
মোঃ ফরিদুল ইসলাম

খাবার দেয়া বন্ধ রেখে অন্য প্যারমিটার ঠিক করতে হবে। অবশ্যই ১২-১৮ ঘণ্টার বেশি খাবার বন্ধ করে মাছ মারা যাবে না।

Reply
Minhazul Arefin Siddiquee

পড়ে ভাল লাগল। উপকারী পোষ্ট। ধন্যবাদ।

Reply
এগ্রোবিডি২৪

ধন্যবাদ আপনাকেও, আমরা চেষ্টা করছি যতটা ভালো করা যায় , সাথে আপনাদের সহযোগিতা থাকলে আরো এগিয়ে যাবো আমরা আশা করি 🙂

Reply
মোঃ জিয়াউর রহমান

ধন্যবাদ এমন তথ্যবহুল একটি প্রচ্ছদ প্রকাশের জন্য। বায়োফ্লকের অনেক তথ্যের মাঝেও যেসকল তথ্য জানা প্রয়োজন বলে মনে হচ্ছে,,,, একটি ইউনিট ফ্লক চাষ কাঠামো তৈরিতে, অনুজীব ক্রয়, খাবার, চিকিৎসা, ইত্যাদি ক্ষেত্রে একক খরচ।
এই পদ্ধতিতে চাষ হওয়া মাছের বাজার চাহিদা কেমন?

Reply
মোঃ ফরিদুল ইসলাম

বায়োফ্লক একটি টেকশই মাছ চাষ পদ্ধতি। এখানে যে মাছ তৈরি হয় তা অন্য জলাশ্বয়ে তৈরিকৃত মাছের বিকল্প। প্রজাতি ভেদে দাম পরিবর্তন হয়, এ জন্য আমাদের বাজার মূল্য পাওয়া যায় এমন প্রজাতির চাষ করতে হবে। বায়োফ্লকের আর ও কিছু বিষয় নিয়ে আমরা লিখব। বায়োফ্লক পদ্ধতিতে চাষের মাছের বাজার মূল্য এবং চাহিদা অন্য মাছের মতই। আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক লেখা

আর্কাইভ