
ফসটক্সিন (মূলত অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড) একটি অত্যন্ত বিষাক্ত রাসায়নিক, যা ফসফিন গ্যাস উৎপন্ন করে। এটি সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন এবং ইঁদুর দমনে ব্যবহৃত হয়। মাছ চাষের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে পুকুরে রাক্ষুসে বা অবাঞ্ছিত মাছ নিধনে ফসটক্সিন ব্যবহার করা হয়। তবে এর ব্যবহারে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, কারণ এটি মানুষ ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
ফসটক্সিনের ব্যবহার (রাক্ষুসে মাছ নিধনে)
পুকুরে রাক্ষুসে বা অবাঞ্ছিত মাছ দূর করার জন্য ফসটক্সিন ব্যবহার করা যেতে পারে, যদি পুকুর শুকানো সম্ভব না হয়। এর প্রয়োগমাত্রা সাধারণত পুকুরের গভীরতার উপর নির্ভর করে।
- প্রয়োগমাত্রা: পুকুরে প্রতি শতাংশে ১ ফুট গভীরতার জন্য ৩ গ্রাম ফসটক্সিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
- প্রয়োগ পদ্ধতি: ফসটক্সিন ট্যাবলেট পুকুরের পানিতে ছিটিয়ে দিতে হয়। এরপর জাল টেনে পানি ওলট-পালট করে দিলে কার্যকারিতা বাড়ে।
- কার্যকারিতা: ফসটক্সিন প্রয়োগের প্রায় ২৫-৩০ মিনিট পর মাছ ভাসতে শুরু করে। এরপর জাল টেনে সমস্ত মৃত মাছ তুলে ফেলতে হবে।
- বিষক্রিয়ার মেয়াদকাল: রোটেননের মতো, ফসটক্সিনের বিষক্রিয়ার মেয়াদকাল প্রায় ৭ দিন পর্যন্ত হতে পারে। এই সময়ের মধ্যে পুকুরে নতুন মাছ ছাড়া উচিত নয়।
সতর্কতা
ফসটক্সিন একটি প্রাণঘাতী বিষ। তাই এর ব্যবহারে নিম্নলিখিত সতর্কতাগুলো অবশ্যই মেনে চলতে হবে:
- ব্যক্তিগত সুরক্ষা:
- ফসটক্সিন ব্যবহারের সময় মাস্ক, গ্লাভস এবং সুরক্ষামূলক পোশাক পরিধান করা আবশ্যিক।
- নাক, মুখ ও চোখ সুরক্ষিত রাখতে হবে।
- ব্যবহারের পর সাবান ও পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
- পরিবেশগত সতর্কতা:
- ফসটক্সিন প্রয়োগের ফলে মারা যাওয়া মাছগুলো দ্রুত পুকুর থেকে তুলে ফেলতে হবে। অন্যথায়, এই মাছগুলো পচে পুকুরের পরিবেশ আরও দূষিত করতে পারে এবং অন্যান্য প্রাণীর জন্য বিপদ সৃষ্টি করতে পারে।
- ফসটক্সিন প্রয়োগের পর, অন্তত ৭ দিন পুকুরে কোনো মাছ বা পোনা ছাড়া যাবে না।
- অন্যান্য প্রাণীর সুরক্ষা:
- শিশু ও গৃহপালিত পশুপাখি যেন কোনোক্রমেই ফসটক্সিনের সংস্পর্শে না আসে, সেদিকে কঠোর নজর রাখতে হবে।
- মৃত মাছগুলো সংগ্রহ করে এমন স্থানে পুঁতে ফেলতে হবে, যেখানে অন্য কোনো প্রাণী তা খেতে না পারে।
- প্রশিক্ষিত ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে ব্যবহার:
- ফসটক্সিন ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বা অভিজ্ঞ ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে কাজ করা উচিত। এর ভুল প্রয়োগ মারাত্মক পরিণতি ঘটাতে পারে।
- বিকল্প পদ্ধতির ব্যবহার:
- সম্ভব হলে রাক্ষুসে মাছ দমনে পুকুর শুকিয়ে ফেলা সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি। এতে রাক্ষুসে মাছ কাদায় লুকিয়ে থাকতে পারে না এবং পরিবেশের উপর রাসায়নিকের নেতিবাচক প্রভাব এড়ানো যায়।
- রোটেনন বা চা বীজের খৈল তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিকর এবং জৈব উৎস থেকে উৎপন্ন, যা দ্বারা মৃত মাছ নিশ্চিন্তে খাওয়া যায়। জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় এই বিকল্পগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।
মনে রাখবেন, ফসটক্সিনের সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক নেই। তাই এর ব্যবহার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।