
বাংলাদেশে দীর্ঘ ছয় বছর পর আবারও বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাব শনাক্ত হয়েছে। যশোর জেলার একটি মুরগির খামারে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে মোট ৩,৯৭৮টি মুরগির মধ্যে ১,৯০০টি মারা গেছে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে বাকি মুরগিগুলো নিধন করা হয়েছে। এটি ২০১৮ সালের পর প্রথমবারের মতো দেশে বার্ড ফ্লুর শনাক্ত হওয়ার ঘটনা।
বুধবার (২৬ মার্চ) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিপিএ’র সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার বলেন, দেশের পোল্ট্রি খাত বর্তমানে চরম সংকটের মধ্যে রয়েছে। যশোরে বার্ড ফ্লু শনাক্ত হওয়ার পর পুরো খাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, অতীতে বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাবের ফলে বহু খামার বন্ধ হয়ে গেছে, লক্ষাধিক মুরগি নিধন করতে হয়েছে এবং হাজারো খামারি তাদের জীবিকা হারিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ২০০৭ সালের মার্চ মাসে প্রথমবারের মতো বার্ড ফ্লু শনাক্ত হয়, যার ফলে সে বছর ১০ লাখেরও বেশি মুরগি মেরে ফেলা হয়। ২০০৮ সালের মে মাসে মানুষের শরীরে প্রথমবারের মতো বার্ড ফ্লু সংক্রমণ শনাক্ত হয়, যা উদ্বেগ বাড়িয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সংকট আরও প্রকট হতে পারে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে শুধু পোল্ট্রি খাতেই নয়, বরং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতেও।
সরকারের প্রস্তুতি ও সতর্কতা
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান জানান, বার্ড ফ্লু প্রতিরোধ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকার যথাযথ প্রস্তুতি নিয়েছে। পোল্ট্রি খামারিদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং সীমান্ত এলাকায়ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তিনি আশ্বস্ত করেন যে, বর্তমান পরিস্থিতি আগের মতো ভয়াবহ নয় এবং সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি, ক্রেতাদের হাঁস-মুরগি বা ডিম খাওয়া বন্ধ না করার আহ্বান জানান তিনি।
ফ্লু নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা গ্রহণ
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার জানান, মার্চের শুরুতেই সরকার বার্ড ফ্লুর সংক্রমণ সম্পর্কে অবগত হয় এবং সংক্রমণ রোধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক নজরদারি করছেন এবং ফ্লুর বিস্তার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা যশোরের আক্রান্ত খামার পরিদর্শন করেছেন এবং সংক্রমণের উৎস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেছেন।
আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও সম্ভাব্য ঝুঁকি
বিশ্বজুড়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বার্ড ফ্লুর সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন যে, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস যদি স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, তবে এটি বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এ সংকট মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং খামারিদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছে, যাতে বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাব দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা যায়।