
বর্ষার ভরা মৌসুমেও বাজারে ইলিশের দেখা মিলছে না বললেই চলে। দক্ষিণাঞ্চলের মৎস্য আড়তগুলোতে ইলিশের সরবরাহ কম থাকায় এবং যা পাওয়া যাচ্ছে তার আকাশচুম্বী দামের কারণে ক্রেতারা হতাশ। বর্তমানে প্রতি মণ ইলিশ ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা কেজিপ্রতি ১,৭৫০ থেকে ২,৮০০ টাকা দাঁড়াচ্ছে। বিশেষ করে ২ কেজি বা তার চেয়ে বড় আকারের ইলিশের দাম আরও বেশি।
ক্রেতাদের ক্ষোভ ও বিক্রেতাদের অসহায়ত্ব
পারিবারিক অনুষ্ঠানের জন্য ইলিশ কিনতে বরিশালের কাগাশুরা থেকে পোর্ট রোডে এসেছিলেন এনায়েত হোসেন। তিনি বলেন, “আট বছর আগেও আষাঢ় মাসে পোর্ট রোডে প্রতিদিন এক-দেড় হাজার মণ ইলিশ আসত। অথচ এখন দিনে ৩০-৪০ মণও আসে কিনা সন্দেহ। যা আসে তা সিন্ডিকেটের কারণে আমাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।”
পোর্ট রোডের খুচরা বিক্রেতা রুবেল হাওলাদার জানান, জেলেরা কম মাছ পাচ্ছেন এবং যা পাচ্ছেন তা সড়কপথে ঢাকায় চলে যাচ্ছে। ফলে স্থানীয় বাজারে মাছের সংকট তৈরি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, “এক সপ্তাহ আগেও বাজারে এক পিসও ইলিশ ছিল না। সম্প্রতি কিছু কিছু আসছে, তবে এগুলো অধিকাংশই নদীর মাছ হওয়ায় দাম বেশি। সাগরের মাছ আসা শুরু করলে দাম কমবে।”
জেলেদের দুশ্চিন্তা ও সরবরাহ সংকট
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার জেলে সুজন আকন জানান, নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও সাগর উত্তাল থাকায় অনেক বোট মালিক সাগরে যাননি। এছাড়া, সাগরেও আশানুরূপ মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। তার মতে, একটি বোট নিয়ে সাগরে যেতে ন্যূনতম পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়, যা উঠবে কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
বাজারে ইলিশের বর্তমান দর
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশের আকারভেদে দামের ব্যাপক তারতম্য রয়েছে:
- ৪০০ গ্রাম সাইজের প্রতি মণ ইলিশ: ৬৮ থেকে ৭০ হাজার টাকা।
- ৮০০-৯০০ গ্রাম সাইজের প্রতি মণ ইলিশ: ১ লাখ টাকা।
- ১ কেজির বেশি সাইজের প্রতি মণ ইলিশ: ১ লাখ আট থেকে ১ লাখ ১২ হাজার টাকা।
গত ১০ দিনের ব্যবধানে বড় আকারের ইলিশের দাম মণ প্রতি ১২ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
মৎস্য কর্মকর্তার বক্তব্য: আশার আলো কখন?
বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপণ কান্তি ঘোষ জানান, রোববার পোর্ট রোড পাইকারি বাজারে মাত্র ৩০ মণের মতো ইলিশ এসেছে। সাগরে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে জেলেরা সাগরে যেতে পারছেন না। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, সাগরের মাছ আসা শুরু করলে বাজারের সংকট কাটবে এবং দামও কমে আসবে।
তিনি আরও বলেন, “গতকালকের চেয়ে আজকে বাজারে ইলিশের দাম কিছুটা কমতে পারে। কলাপাড়ার মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জেনেছি কয়েকটি ট্রলার এসেছে, যা স্থানীয় বাজারে সরবরাহ বাড়াতে সাহায্য করবে।”
পদ্মা সেতুর প্রভাব
রিপণ কান্তি ঘোষ আরও উল্লেখ করেন যে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় আড়তদাররা দ্রুত মাছ ঢাকায় পাঠাতে পারছেন। ট্রলার থেকে মাছ তুলেই ভালো দামের আশায় ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে, যা স্থানীয় বাজারে ইলিশের কিছুটা সংকট তৈরি করছে।
স্থানীয় বাজারে ইলিশের এই উচ্চমূল্য এবং সরবরাহ সংকট কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।