চলতি মৌসুমে বগুড়ায় ৫৭ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে তুলনায় জেলায় বীজের চাহিদা নির্ধারণ করা হয় প্রায় ৮০ হাজার ৮৮৫ মেট্রিক টন। এবছর চাষিরা তাদের চাহিদা মতো বীজ পেয়েছেন। মঙ্গলবার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. ফরিদুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
জেলার কয়েকটি উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, জেলার সর্বত্রই পুরোদমে চলছে আলুর জমি প্রস্তুতের কাজ। অনেক এলাকায় জমি তৈরির কাজ শেষ করেছেন চাষিরা। অনেকেই জমিতে আলু লাগানোর কাজও শেষ করেছেন। কেউবা জমির পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
কিছু মুনাফালোভী ডিলারের যোগসাজশে গত বছরের আগের বছরগুলোতে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিতে সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হয়েছিল। সেসময় নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে বীজ কিনতে হয় বলে মন্তব্য করেন অনেক চাষি। কিন্তু এবছর চাষিদের বীজ পেতে কোনো সমস্যা না হলেও বীজের দামটা বেশি বলে মন্তব্য তাদের।
জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলার কুন্দার এলাকার মিজান খন্দকার, বুলু মিয়া, রয়েল আকন্দসহ একাধিক আলু চাষি জানান, নভেম্বরের শেষের দিকে আলুর জমি প্রস্তুতের কাজ সম্পন্ন হয়। ইতোমধ্যে মাঠের সিংহভাগ জমিতে আলু চাষ সম্পন্ন হয়েছে।
সদর উপজেলার শাখারিয়া এলাকার জামাল হোসেন, আলম শেখ, মতিয়ার মণ্ডল জানান, বিগত বছরের আগে বীজ ব্যবসায়ীরা তাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছে। কিন্তু গত বছর ও চলতি বছরে এমন হয়রানিতে পড়তে হয়নি তাদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. ফরিদুর রহমান জানান, বগুড়া জেলায় চলতি মৌসুমে উপশী ও স্থানীয় মিলে ৫৭ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে উপশী ৪৫ হাজার ৭৮৫ ও স্থানীয় ১১ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে চাষ করা হবে। যার মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে (উপশী-১০ লাখ ৯১ হাজার ৯০৭ মে. টন ও স্থানীয়-১ লাখ ৬৩ হাজার ৬৩৩ মে. টন) ১২ লাখ ৫৫ হাজার ৫শ ৪০ মেট্রিক টন।
তিনি জানান, হেক্টর প্রতি জমিতে দেড় (১৫শ কেজি) মেট্রিক টন বীজের প্রয়োজন। এ হিসাবে জেলায় প্রায় ৮০ হাজার ৮৮৫ মেট্রিক টন বীজের চাহিদা রয়েছে। ইতোমধ্যে ৫৫ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে আলু লাগানো সম্পন্ন হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (বীজ বিপণন) মোহা. শহীদুল্লাহ আল মামুন জানান, বিএডিসির অধীনে বগুড়া ও জয়পুরহাট অঞ্চলে মোট ৩৬৫ জন ডিলার রয়েছেন। এর মধ্যে বগুড়া অঞ্চলে ২৫১ জন ও জয়পুরহাট অঞ্চলে ১১৪ জন।
তিনি জানান, চলতি মৌসুমে বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলার জন্য ৬ হাজার ৪শ মেট্রিক টন আলুর বীজের মার্কেটিং চাহিদা পাঠানো হয়েছিল। বগুড়া ও জয়পুরটাট মিলে ১টি হিমাগারসহ দেশে মোট ২৯টি হিমাগার রয়েছে। চলতি বছরে জেলায় আলু বীজের কোনো সংকট নেই। চাষিরা এখন অনেক সচেতন। তারা নিজেরাই তাদের চাহিদা মোতাবেক বীজ বিভিন্ন হিমাগারে সংরক্ষণ করে রাখে।
তিনি আরও জানান, বিএডিসির এ গ্রেডের প্রতি কেজি এস্টারিক জাতের বীজ ৪৩ টাকা ও বি গ্রেড ৪২ টাকা বিক্রির দাম নির্ধারণ করা হয়। কার্ডিনাল, ডায়মন্ড, গ্রানোলা, লেডিরোসেটা জাতের এ গ্রেডের প্রতি কেজি বীজ ৪২ টাকা ও বি গ্রেড ৪১ টাকা এবং নির্ধারিত এ দামের থেকে ৪ টাকা বেশি মূল্যে ডিলাররা চাষিদের কাছে এ বীজ বিক্রি করে থাকে।