কয়েক বছর আগেও নারকেল ছোবড়াকে আবর্জনা মনে করা হত। একে ফেলে দেয়া হতো ডাস্টবিনে। কিন্তু বর্তমানে এ ছোবড়া এখন আর ফেলনা নয়। একসময় শুধু জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হওয়া এ ছোবড়ার দাম এখন অনেক। নারকেলের ছোবড়া প্রক্রিয়াজাতে ব্যবসা হয় প্রচুর। ব্যবসায়ীরা জানান নারকেলের ছোবড়া প্রক্রিয়াজাতে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার ব্যবসা হয় প্রতিবছর।
নারকেলের ছোবড়া প্রক্রিয়াজাতে বছরে অর্ধশত কোটি টাকার বাণিজ্যের কথা জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুরের ব্যবসায়ীরা।
নারকেলের ছোবড়া থেকে তৈরি হয় কোকো ফাইবার
ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নারকেলের ছোবড়া থেকে তৈরি হয় ‘কোকো ফাইবার’।
সোফার সিট কিংবা জাজিম তৈরিতে বহুল ব্যবহৃত হয় এর।
লক্ষ্মীপুরে সদর উপজেলার দালাল বাজারে কোকো ফাইবার প্রক্রিয়াকরণের প্রধান কেন্দ্র অবস্থিত।
নারকেলের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্র গড়ে উঠেছে এই বাজারে।
পাশাপাশি বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়াকরণ কারখানা গড়ে উঠেছে ছোবড়া ঘিরে।
ছোবড়া প্রক্রিয়াকরণ কারখানা গড়ে উঠেছে জেলার রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জ, চরবংশী, খাসেরহাট, সদর উপজেলার মান্দারী, চন্দ্রগঞ্জ, রামগঞ্জ উপজেলার পানপাড়া, মীরগঞ্জ, সোনাপুর, কমলনগর উপজেলা হাজিরহাট, রামগতির আলেকজান্ডার ও জমিদারহাটেও।
ছোট-বড় প্রায় ৩০টির মতো কারখানা রয়েছে এসব এলাকায়।
প্রত্যেক কারখানায় কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক কাজ করেন নারী-পুরুষ মিলে।
কোকো ফাইবার নামে ছোবড়ার আঁশ এবং কোকোডাস্ট নামে ছোবড়ার গুঁড়ার রয়েছে ব্যাপক চাহিদা।
কয়েকটন ছোবড়া আঁশে পরিণত হয়
রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জ বাজারের নারকেল ব্যবসায়ী আবদুর রহিম।
তিনি জানান, কারখানায় মেশিনের সাহায্যে প্রতিদিন কয়েক টন ছোবড়া আঁশে পরিণত করা হয়।
এক হাজার নারকেলের ছোবড়া থেকে আঁশ পাওয়া যায় কমপক্ষে ৮০ কেজি।
দালাল বাজারের সততা ট্রেডার্সের মালিক মো. জাকির হোসেন।
তিনি বলেন, ফাইবার নিয়ে অন্য কোম্পানিগুলো তোশকের ভেতরের ম্যাট্রেস বা কয়ার ফেল্ট তৈরি করে।
সেকারণে ছোবড়ার আঁশ বা ফাইবারের বর্তমানে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
লক্ষ্মীপুর বিসিক শিল্পনগরীর সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শাহরিয়ার ইসলাম।
তিনি বলেন, লক্ষ্মীপুরে অনেক কারখানা নারকেল ছোবড়া থেকে তৈরি হয়েছে।
যার কারণে অনেক মানুষ কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জাকির হোসেন।
তিনি বলেন, জেলায় নারকেল বাগান রয়েছে ২ হাজার ৭৩৫ হেক্টর জমিতে।
তাছাড়া প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে নারকেল গাছ।
প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ৫ থেকে ৬ কোটি শুকনা নারকেল সংগ্রহ করা হয়।
এসব নারকেলের ছোবড়া থেকে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা বছরে আয় হয়।