Thursday, 21 November, 2024

সর্বাধিক পঠিত

ধান বিহীন চাল মিনিকেট, ধরে রেখেছে ৪ হাজার কোটির বাজার


খুলনায় চালের দাম বেড়েছে, ধানের ভরা মৌসুমেও

স্বাদে জুড়ি নেই এই চালের ভাতের। মিনিকেট চালের কদর সারা দেশেই রয়েছে। যদিও দেশে ‘মিনিকেট’ নামে কোনো ধানের জাত নেই। এই নামে প্রতারণা করে রমরমা বাণিজ্য চলছে অনেকদিন ধরে। তাই ধান বিহীন চাল মিনিকেট এর ধানের কোন অস্তিত্বই নেই। এক শ্রেণির চালকল মালিক মূলত মোটা চাল ছেঁটে সরু করে। আর সেটিকেই ‘মিনিকেট’ বলে বাজারজাত করে বিপুল পরিমাণ মুনাফা লুটে নিচ্ছে একশ্রেণির সম্প্রদায়। দীর্ঘ ১ মাস ধরে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে ধান বিহীন চাল মিনিকেট এর এমন তথ্য বের হয়েছে।

ধান বিহীন চাল মিনিকেট এর বিষয়ে কৃষিবিদ বজলুর রশিদ এর সাথে কথা হয়।

তিনি বলেন, উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বিভিন্ন জাতের চাষ হয়।

আরো পড়ুন
দেশীয় পাট বীজ উৎপাদনে চমক দেখালেন কৃষক মুক্তার

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার কৃষক মুক্তার হোসেন মোল্যা দেশীয় পাট বীজ উৎপাদনে উদ্ভাবনী সাফল্য দেখিয়েছেন। সালথা উপজেলা পাট উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত Read more

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে
স্বস্তি নেই সবজির বাজারে

রাজধানীর বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। একদিকে কিছু পণ্যের দাম কমলেও অন্যান্য অনেক পণ্যের দাম স্থিতিশীল Read more

পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকার ভারতীয় জাতের ধান চাষ করে সেখানকার কৃষকরা।

কিন্তু কোনো ধানের জাত মিনিকেট নামে বাংলাদেশ কিংবা ভারতে নেই।

মিনিকেট চালের নামে এক ধরনের গুজব বাজারে ছড়িয়ে পড়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মশিদুল হক।

তিনি জানান, এখানকার কৃষকদের মাঝে ‘মিনিকেট ধান’ চাষের প্রবনতা দেখা গেছে অল্প কয়েক বছর ধরে।

স্থানীয়ভাবে কৃষকরা এটাকে মিনিকেট বলেন।

যদিও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট থেকে এই ধানের কোনোরকম স্বীকৃতি দেয়া হয়নি।

ভারত থেকে আসা কথিত এই ধানকেই স্থানীয় কৃষকরা মিনিকেট বলে চাষ করেন।

এ কারণে নন্দীগ্রাম উপজেলার সাড়ে ২২ হাজার হেক্টর আবাদি জমির বেশিরভাগই কথিত মিনিকেট ধান দিয়েই চাষ করা হয়।

তিনি আরও জানান, বাংলাদশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট সম্প্রতি ব্রি-৫৭ নামের একটি ধানের জাত অনুমোদন দিয়েছে।

এই কথিত মিনিকেটের মতোই চিকন এই ধান, যার ফলনও বেশি হয়।

মিনিকেট চাল কিভাবে এসেছে

কৃষিবিদ সিরাজুল করিম মিনিকেট নামের উৎপত্তি নিয়ে একটি চমৎকার তথ্য দেন।

তিনি বলেন, ১৯৯৫ সালের দিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ভারতের কৃষকদের মাঝে নতুন জাতের চিকন ‘শতাব্দী’ ধানের বীজ বিতরণ করে সে দেশের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট।

কৃষকদের এ ধান বীজের সাথে কিছু কৃষি উপকরণ একটি ‘মিনিপ্যাকেট’ এ দেয়া হয়।

এখান থেকেই মিনিকেট নামের উৎপত্তি হয় যা পরে চলে আসে বাংলাদেশে।

কৃষি বিভাগের অন্য একটি সূত্র হতে জানা যায়, ৯৫ পরবর্তী সময়ে বোরো মৌসুমে সেই মিনিপ্যাকেটের শতাব্দী ধানের বীজ বাংলাদেশের কৃষকদের হাতে পৌঁছায়।

সর্বপ্রথম ঝিনাইদহের মানুষ এ ধানের চাষ শুরু করেন।

এর আগে আমাদের দেশে নাজিরশাইল, পাজাম ও বালাম ধানের চাষ হত।

ভারত উপমহাদেশব্যাপী বরিশালের বালামের সুনাম ছিল।

সব সরু জাতের ধান চাষ কালের বিবর্তনে উঠে যায়।

এ সময় বাজারে আবির্ভাব ঘটে কথিত মিনিকেটের।

এতে সুযোগ বুঝে এক শ্রেণির মিল মালিক মাঝারি সরু বি আর-২৮, বিআর-২৯ ও বি আর-৩৯ জাতের ধান ছেঁটে ‘মিনিকেট’ বলে বাজারজাত করতে শুরু করেন।

পশ্চিমের জেলা গুলোতে শতাব্দি চালের চাষ বেশি করা হয়

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুসারে, পশ্চিমের জেলা যশোর, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা ও চুয়াডাঙ্গাতে কথিত সেই ‘মিনিকেট’ ধানের চাষ হয় বেশি।

বিগত মৌসুমে যশোর জেলায় প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর কথিত এ মিনিকেট ধানের চাষ হয়।

এর বাইরে যেসব অঞ্চলে এর চাষের কথা বলা হয় সেটি পুরোপুরি ভুয়া।

মোটা চাল ছেঁটে তৈরি করা চালই মিনিকেট চাল।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বগুড়া সদর, শেরপুর ও দুপচাঁচিয়া থেকে সারাদেশে এই চাল সরবরাহ করা হয়।

কিন্তু লাখ লাখ মণ মিনিকেট চালের যোগান সম্পর্কে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

গত বছরের উৎপাদন হিসেবে করলে সর্বোচ্চ এক লাখ টন চাল হবার কথা।

সেকারণেই মিনিকেট নিয়ে প্রতারণার রমরমা বাণিজ্য খুব বেশি দেখা যাচ্ছে চাল ব্যবসায়ীদের মাঝে।

ব্যবসায়িরা স্বীকার করে নেন যে বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত মিনিকেট নামে কোনো জাতের ধান নেই।

বিভিন্ন মোটা জাতের ধান ছেঁটে মিনিকেট বলে বস্তায় ভরে বিক্রি করা হয়।

বাজারে এ চালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আর তাই প্রতারণার ব্যবসা ক্রমেই বেড়ে চলছে বলেও তারা মনে করেন।

প্রতারণায় যুক্ত হয়েছে সুপার মিনিকেট চাল

কৃষি বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা আকবর আলী।

তিনি জানান, পাঁচ বছর আগে বোরো মৌসুমে চাষের জন্য ভারত ‘সুপার ফাস্ট’ নামে একটি সরু জাতের ধান অবমুক্ত করে।

একে ‘সুপার মিনিকেট’ বলে একশ্রেণির মিল মালিক এখন বাজারে বিক্রি করছেন।

কথিত মিনিকেটের চেয়ে আরও বেশি চিকন এ চাল।

কৃষি বিভাগের একটি সূত্র বলছে, বেশ কিছুদিন আগে মিনিকেট ধান ও চাল সম্পর্কে এক বিশদ প্রতিবেদন কৃষি মন্ত্রণালয়ের এফএ-১ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মো. শওকত আলী স্বাক্ষর করে  বাণিজ্যসচিব মো. গোলাম হোসেনের কাছে পাঠান।

মোটা-লম্বা জাতের ধান বিশেষ করে বিআর-২৮ জাতের ধান রাবার রোলারে ক্রাসিং করে মিনিকেট নামে বাজারজাত করার কথা এতে বলা হয়।

অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রচুর পরিমাণ মিনিকেট চালের সরবরাহ দেখা যায়।

কিন্তু সব ধরণের চাল আসল মিনিকেট চাল নয়।

কৃষি মন্ত্রণালয় তাদের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয় যে, মিনিকেট চাল দেশের উচ্চবিত্ত মহলে বেশ সমাদৃত। তার কারণ এ চাল খুবই সরু।

যার ফলাফল হিসেবে দিন দিন এ চালের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দেশের প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকার চালের বাজারে চার হাজার কোটি টাকার বাজার শুধু মিনিকেটের।

বাজারে বিক্রি হওয়া ২২ ভাগ চালের একভাগই মিনিকেট নামে বিক্রি হয়।

অন্যদিকে মিনিকেট প্রক্রিয়ার সঙ্গে দেশের প্রায় ৮০০টি চালকল জড়িত।

0 comments on “ধান বিহীন চাল মিনিকেট, ধরে রেখেছে ৪ হাজার কোটির বাজার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক লেখা