
এগ্রোবিডিঃ প্রাকৃতিক দুর্যোগ এর দেশ বাংলাদেশে দিন দিন বন্যা পরিস্থিতি বিভিন্ন ভাবে ভোগাচ্ছে মানুষকে। উজান অঞ্চলে পানি ধীরে ধীরে কমতে থাকলেও এখন ভাটি অঞ্চলে বাড়ছে বন্যার পানি। বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবস্থান ভিন্ন।
দেশের বৃহৎ নদ ব্রহ্মপুত্রের পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। এতে উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও অবনতি হচ্ছে মধ্যাঞ্চলের। তবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি-অবনতির অপেক্ষা না করেই হাজির হয়েছে নদীভাঙ্গন, ভয়াবহ রূপ ধারন করেছে উত্তর-মধ্যাঞ্চলে।এ ভাঙ্গন ইতিমধ্যেই ভেঙে নিয়ে গেছে চাষের জমি, বাড়িঘর।
সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেস এর তথ্য মতে গত ১০ বছরে নদীভাঙ্গনের পরিমান কমলেও, এবছর বন্যার কারণে তা বেড়ে যাবে। এ সংস্থার পূর্বাভাস অনুযায়ী ২ হাজার ৩৬৫ হেক্টর এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে। তবে বন্যার স্থায়ীত্ব দীর্ঘ হতে পারে বিধায় এটি কমপক্ষে ৩০ শতাংশ বেড়ে যাবে। আশংকা করা হচ্ছে এতে ৩০ হাজার মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাবে।
এই ভয়াবহ অবস্থা বগুড়ার সারিয়াকান্দি সহ আরও বিভিন্ন এলাকায়। গত তিন বছরে যদিও সরকারী নানামূখি উদ্যোগে ভাঙ্গন ছিল না, কিন্তু বর্তমানে প্রায় চারটি চর এলাকা যমুনার বুকে বিলীন হয়ে অন্তত চার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। যমুনার আগ্রাসী ভূমিকায় হারিয়ে গেছে টাঙাইলের কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ি ইউনিয়নের ফসলি জমি। তীব্র এ ভাঙ্গন এখন হানা দিয়েছে বসতভিটার দিকে। অন্যদিকে পদ্মার বুকে বিলীন হয়ে গেছে ঢাকার পার্শ্ববর্তী নবাবগঞ্জের বেশকিছু জমি। অন্তত ২০০ ভিটা-বসতি ঝুকি পূর্ণ অবস্থায় আছে।
অন্যদিকে গাইবান্ধা জেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত অবস্থায় আছে। সামান্য পানি কমলেও চার উপজেলার ২৬ ইউনিয়নের দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছে। জেলার সদর উপজেলা সহ ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে ডুবে আছে, ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে শহররক্ষা বাধ।
প্লাবিত হয়েছে পদ্মার তীরবর্তী এলাকা। ক্রমাগত পানি বাড়তে থাকায় মানিকগঞ্জ এর হরিরামপুর উপজেলার প্রায় সমস্তই প্লাবিত হয়েছে, পানিবন্দী হয়ে আছে ২০ হাজারের বেশি পরিবার। অনেকজায়গায় ক্ষতি হয়েছে রাস্তাঘাট সহ ফসলিজমি।
সিলেট অঞ্চলে সুরমা নদীর পানি কমলেও বাড়ছে কুশিয়ারা নদীর পানি। এতে ফেঞ্চুগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও শেরপুর এলাকায় পানি বাড়ছে। সুনামগঞ্জ জেলায় পানি কমলেও দুই দফা বন্যার কারণে ক্ষতির পরিমাণও বেড়েছে। লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢাল না নামায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও ভোগান্তি কমেনি একবিন্দুও।
দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন, মানুষের ক্ষতি দিন দিন বাড়ছেই। সেই সাথে নদী-ভাঙ্গন নতুন করে আবারও বিপদের আশংকা তৈরি করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে দেশে অল্প কিছু জায়গায় সরকারি ভাবে কিছু ব্যাবস্থা গ্রহন করা হলেও তা যথেষ্ট নয়। অপরদিকে দূর্গম অনেক এলাকাতেই যাচ্ছে না ত্রান সেবা। ফলে সরকারি আরও কঠোর ও কার্যকরী পদক্ষেপ কামনা করছেন সংশ্লিষ্ট সকলে।