Saturday, 01 February, 2025

সর্বাধিক পঠিত

টবে বেগুন চাষ পদ্ধতি


বেগুন

বেগুন বাংলাদেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় সবজি। সারা বছরই এর চাষ করা যায়। ছাদে সহজেই টবে বেগুন চাষ করা যায়। তবে যেহেতু বেগুনে রোগবালাই এবং পোকার আক্রমন বেশী তাই বেগুন চাষে কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।

বেগুনের কি কি জাত রয়েছে

ভাল ফলন পেতে হলে উপযুক্ত জাত নির্বাচন করা একান্ত প্রয়োজন। বাংলাদেশে বেগুনের বহু জাত রয়েছে। এক জাত থেকে অন্যজাতে গাছের প্রকৃতি, ফলের রং, আকার, আকৃতি প্রভৃতি বিষয়ে বেশ পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

আরো পড়ুন
টবে পুঁইশাক চাষ পদ্ধতি

পুঁইশাক (English name: Malabar spinach) একটি জনপ্রিয় সবুজ শাক, যা বিভিন্ন পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এবং সহজে চাষযোগ্য। এটি মূলত গ্রীষ্মকালীন শাক Read more

কোয়েল পাখি (quail birds) পালন পদ্ধতি

কোয়েল পাখি পালন বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, কারণ এটি অল্প জায়গায় এবং কম খরচে করা যায়। নিচে কোয়েল পাখি Read more

ইসলামপুরী, খটখটিয়া, লাফফা, ঈশ্বরদি ১, উত্তরা (বারি বেগুন ১), তাল বেগুন বা তল্লা বেগুন, নয়ন কাজল, কেজি বেগুন, শিংনাথ, ঝুমকো, ডিম বেগুন, মুক্তকেশী, শুখতারা, তারাপুরী (বারি বেগুন ২), কাজলা (বারি বেগুন ৪), নয়নতারা (বারি বেগুন ৫), বিজয়, চমক এফ১ ইত্যাতি জাত এদেশে দেখতে পাওয়া যায়।

টবে বেগুনের  চারা তৈরি করার পদ্ধতি

এটেঁল দো-আঁশ ও পলি দো-আঁশ মাটি বেগুন চাষের জন্য বেশী উপযোগী । এই মাটিতে বেগুনের ফলন বেশী হয় । বেগুন চাষের জন্য প্রথমে বীজতলায় চারা করে পরে তা টব বা ড্রামে রোপণ করতে হবে ।

ছাদে অল্প সংখ্যক চারা উৎপাদনের জন্য বীজতলা হিসেবে কাঠের বাক্স, প্লাস্টিকের ট্রে, গামলা অথবা হাফ ড্রাম ব্যবহার করা যেতে পারে। বীজতলার পানি যাতে দ্রুত নিষ্কাশিত হতে পারে সে ব্যবস্থা রাখতে হবে ।

জৈবসার মিশ্রিত বেলে দোআঁশ মাটি দিয়ে বীজতলার পাত্রটি ভরতে হবে । অতঃপর উক্ত পাত্রে বেগুনের বীজ বোনা যেতে পারে । বেগুনের বাগান সাধারণত বিভিন্ন ধরণের রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়। এসব রোগের অধিকাংশই বীজ বাহিত। তাই বীজ বপনের আগে বীজ শোধন করে নেয়া দরকার ।

বীজতলায় বীজ বপনের পূর্বে ভাল কোন ছত্রাকনাশক এমনভাবে মিশাতে হবে যাতে সব বেগুনের বীজে ভালভাবে লাগে । অতঃপর শোধনকৃত বীজ ৫/৬ ঘন্টা ছায়াতে শুকিয়ে বীজতলায় বপন করতে হবে ।

বীজ বোনার পর মাটি হাত দিয়ে সমান করে দিতে হবে এবং চেপে দিতে হবে । বীজ বপনের একমাস পর বেগুনের চারা ছাদে লাগানোর উপযোগী হয় । চারা বীজতলা থেকে উঠানোর কয়েকঘন্টা আগে বীজতলায় পানি দেয়া প্রয়োজন । যাতে সহজে চারা উঠানো যায় ।

চারা উঠানোর সময় লক্ষ্য রাখতে হবে চারার শিকড় যাতে বেশী কাটা না পড়ে এবং শিকড়ের সাথে কিছুটা মাটি থাকে । তবে বীজতলার চারা উঠানোর ১৫-২০ দিন পূর্বেই চারা গাছ লাগানোর প্রস্তুতমূলক কাজটি সেরে নিতে হবে ।

বেগুন চাষে টবের মাটি তৈরি

ছাদে বেগুনের চারা লাগানোর জন্য ১০-১২ ইঞ্চি মাটির টব সংগ্রহ করতে হবে । টবের তলার ছিদ্রগুলো ইটের ছোট ছোট টুকরা দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে ।

এবার ২ ভাগ এঁটেল দোআঁশ বা পলি দোআঁশ মাটি, ১ ভাগ গোবর, ২০-৩০ গ্রাম টি,এস,পি সার, ২০-৩০ গ্রাম পটাশ সার, একত্রে মিশিয়ে ড্রাম বা টব ভরে পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে ১০-১২ দিন ।

অতঃপর মাটি কিছুটা খুচিয়ে দিয়ে আবার ৪-৫ দিন এভাবেই রেখে দিতে হবে । যখন মাটি ঝুরঝুরে হবে তখন বেগুনের চারা উক্ত টবে রোপন করতে হবে ।

টবে বেগুনের চারা রোপন

বিকাল অথবা রাতে চারা লাগাতে পারলে ভাল হয় । চারা গাছটিকে সোজা করে লাগাতে হবে । সেই সাথে গাছের গোড়ায় মাটি কিছুটা উচু করে দিতে হবে এবং মাটি হাত দিয়ে চেপে চেপে দিতে হবে ।

যাতে গাছের গোড়া দিয়ে বেশী পানি না ঢুকতে পারে । একটি সোজা কাঠি দিয়ে গাছটিকে বেধে দিতে হবে । চারা লাগানোর পর প্রথমদিকে পানি কম দিতে হবে ।

আস্তে আস্তে পানি বাড়াতে হবে । লক্ষ্য রাখতে হবে যেন গাছের গোড়ায় পানি জমে না ।

বেগুনের চাষে অন্যান্য পরিচর্যা

টবের মাটি কয়েকদিন পর পর হালকা নিড়ানি দিয়ে আলগা করে দিতে হবে । যাতে বেগুন গাছে আগাছা জন্মাতে না পারে । সেই সাথে মাটি কিছুটা আলগা করে দিলে গাছের শিকড়ের ভাল বৃদ্ধি হয় ।

বেগুনের ফল ধরা শুরু করলে সরিষার খৈল পচা পানি পাতলা করে গাছে ১৫-২০ দিন অন্তর অন্তর নিয়মিত দিতে হবে ।

টবের বেগুনের বাড়তি পরিচর্যা

বেগুন চাষে হরমোন (বায়োজাইম/ওকোজিম) তরল জৈবসার প্রয়োগের ফলে শিকড় অধিক বিস্তৃত হয়। ফলের আকার ও ওজন বাড়ে। ফুল ধরার সময় ১ বার, ১ম স্প্রে করার ২১ দিন পর এবং ৪২ দিন পর স্প্রে করতে হবে।

মিরাকেল গ্রো/বায়োলিনফা/জোবস/সুপার থ্রাইব/বুস্ট পেক রোপণের ১৫ দিন পর থেকে ১০-১৫ দিন পরপর৩- ৪ বার দিলে ভাল ফল পাওয়া যাবে। রোগা গাছে হরমোন দেওয়া যাবে না। ভিজা চটে বেশি সময় সতেজ থাকে।

বেগুনের পোকামাকড় ও রোগবালাই

বেগুনের সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা হল ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা । এছাড়াও বেগুনে জাব পোকা, বিছা পোকা, পাটা মোড়ানো পোকা ও লাল মাকড় আক্রমণ করে থাকে ।

রোগবালাইয়ের মধ্যে ঢলে পড়া আর গোড়া পচা অন্যতম । এছাড়াও ফল পচা রোগে বেগুনের অনেক ক্ষতি করে ।

বেগুনের রোগবালাই এবং পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে মাঝে মাঝে বেগুন গাছে ভাল কিটনাশক ও ছত্রাকনাশক একত্রে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে ।

রোগ ও ব্যবস্থাপনা

বেগুনের গোড়া পচা দমনের জন্য অটোস্টিন ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে। ঢলেপড়া রোগ ও খাটো আকৃতির পাতা রোগ দমনে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকনাশক এবং ভাইরাস বাহক সাদামাছি ( ইমিটাফ/নাইট্রো প্রয়োগ) দমন করতে হবে।

বেগুনের ডগা ও ফলের মাজরা পোকা

এই পোকার আক্রমণ অধিক হলে এই পোকা দ্বারা সর্বাধিক ৬৩% পর্যন্ত ফলন ক্ষতি হতে দেখা গেছে।

এই পোকা দমনে সেক্স ফেরোমন ফাদ স্থাপন করতে হবে। এছাড়া অতি বিষাক্ত কীটনাশক স্প্রে করার উদাহরণ রয়েছে।

অথচ বায়োলজিক্যালি অতি কম বিষাক্ত জৈব কীটনাশক যেমন: ট্রেসার প্রয়োগ করে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে তা দমন করা সম্ভব।

জ্যাসিড পোকা ও জাব পোকার আক্রমন

বেগুনের জ্যাসিড পোকা ও জাব পোকার জন্য তরল সাবান ৫ মিলি ও তামাক গুড়া ১০ গ্রাম মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে ইমিডাক্লোরোপিড গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে।

ফসল উত্তোলন ও  বেগুন সংগ্রহ

খাওয়ার উপযোগী বেগুন তোলার সময় সাবধানে সংগ্রহ করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে গাছের গায়ে যেন আঘাত না লাগে বা ক্ষত সৃষ্টি না হয়।

0 comments on “টবে বেগুন চাষ পদ্ধতি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *