বন্যা ও খরার সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে চলতে হয় তিস্তাপাড়ের কৃষকদের। এখানকার কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতি বারবার বন্যায় ধাক্কা খায়। এ বছরও কয়েক দফায় বন্যা হবার কারণে তা আরও বেড়েছে। এতে কৃষকের আশা নষ্ট হয়েছে অনেক আগে। তবে সংগ্রাম করে ঘুরে দাড়াচ্ছে তিস্তাপাড়ের কৃষক, নিয়ত চেষ্টা তাদের জীবিকার খোজে। এখন বন্যার বদলে গড়ে উঠেছে চর, আর তাতেই ঘুরে দাড়াচ্ছে তিস্তাপাড়ের কৃষক। নতুন করে চাষের চেষ্টা করছে তারা।
সবশেষ গত অক্টোবরে তিস্তা-তীরবর্তী তিন উপজেলায় আকস্মিক বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
নদীভাঙনের সঙ্গে উঠতি ফসলের ওপর বালুচাপা পড়েছে কো্থাও।
আবার কোথাও ভাঙনে ভেসে গেছে আবাদি জমি।
কপালে চিন্তার ভাঁজ থাকলেও তাতেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চান তারা।
নতুন উদ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ব্যস্ত সময় কাটছে তাদের।
এবার প্রণোদনার আওতায় তিস্তাবেষ্টিত গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ১০ হাজার কৃষককে এনেছে সরকার।
এবারের বন্যায় তিন উপজেলায় ২ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমির রোপা আমন, ৬২ হেক্টর জমির চিনা বাদাম, ৩৫ হেক্টর জমির কাঁচামরিচ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছিল।
এতে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে ৩৪৫ হেক্টর জমির ফসল।
বালুচর এখন তাদের জন্য আশীর্বাদ বলে জানিয়েছেন কৃষক।
তাদের ভাষ্যমতে অসময়ে তিস্তার আকস্মিক বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ আরও কয়েক গুণ বেশী।
তাদের বিভিন্ন ফসল যেমন ধান, আলু, সবজি, বাদাম ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, দেনায় পড়েছেন।
কিন্তু এত কিছুর পরেও আবার নতুন করে চাষাবাদ শুরু করেছেন।
গত ২০ অক্টোবর উজানের ঢলে তিস্তা অববাহিকায় বিপৎসীমার এযাবৎকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড ভেঙে যায়।
৬০ থেকে ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবার পানি প্রবাহিত হয়েছিল।
পানির স্রোতে তিস্তা-তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়।
এ সময় হাঁটু থেকে কোমরসমান পানিতে ডুবে ছিল গঙ্গাচড়া উপজেলায় ৩৫টি, কাউনিয়া উপজেলায় ১০টি ও পীরগাছা উপজেলার ৫টি গ্রাম।
ব্যাপক ক্ষতি হয় ধান, আগাম আলু, মরিচ ও চিনা বাদাম, মিষ্টিকুমড়াসহ বিভিন্ন উঠতি ফসলের। চার দিনের মাথায় ফুলেফেঁপে ওঠা তিস্তার বুক থেকে পানি নেমে যায়।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল।
তিনি বলেন, রংপুরে ৩৫ হাজার কৃষককে রবি মৌসুমে ছয়টি ফসলের যে কোনো একটির জন্য প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।
এর মধ্যে এই প্রণোদনার আওতায় আসবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার প্রায় ১০ হাজার কৃষক।
এতে কৃষকদের মাঝে দেওয়া হবে বিভিন্ন ফসলের বীজ ও সার সহায়তা।