ইচ্ছা থেকে শুরু হয় শখের এবং শখ টিকে থাকে বিনিয়োগের উপর। শখের তোলা নাকি লাখ টাকা। কেউ শখ করে গাছ লাগায়, কেউ স্ট্যাম্প সংগ্রহ করে, তবে শখের বশে কিন্তু কোটি টাকাও রোজগার সম্ভব এটাকে বলে শখ থেকে সফলতা। তাই করে দেখিয়েছেন এবং দেখাচ্ছেন বগুরার শাজাহানপুর উপজেলার গোহাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। যার খামারে রয়েছে সব নাদুস নুদুস ও সুস্থ সবল ষাড়।
তার খামারে গিয়ে দেখা যায়, সামনের কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে প্রস্তুত করা হচ্ছে গরু। ৩৭টি চোখজুড়ানো ষাঁড়, যাদের প্রতিটি অন্তত ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার করে দাম হবে।
ইউপি চেয়ারম্যান আলী আতোয়ার তালুকদার ফজুর নিজের ভাষায়, প্রায় শখের বশে ১৪টি গরু নিয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর এর শেষের দিকে শুরু করেন এই খামার। মূল লক্ষ্য থাকে গরু মোটাতাজাকরণ, সে উদ্দেশ্যে খামারের নামকরণ করেন “আজলান এগ্রো” নামে। কঠোর পরিশ্রম ও যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে ৬ মাসের মাথায়ই দেখা যায় খামারের লোকজন সুস্থ সবলভাবে বেড়ে উঠতে থাকে। আর এই খবর লোকমুখে ছড়িয়ে পড়তে থাকে, লোকজনও উৎসুক হয়ে উঠতে থাকে এই খামারের ব্যাপারে।
বগুড়া শহর ও শহরের আশেপাশের লোকজন এই খামার থেকে কোরবানির জন্য গরু ক্রয় করেন। এই ক্রয়-বিক্রয়ে প্রচুর মুনাফা করেন, সকল কর্মচারীদের বেতন, লালন-পালন ইত্যাদি কারণে সকল খরচ করার পরও তার প্রায় ৫ লক্ষ টাকা লাভ থাকেন। আর এই লাভ এত অল্প সময়ে তাকে আরও আগ্রহী করে তোলে। তাই পরের বছর তিনি আরও বেশি সংখ্যক ষাঁড় গরু ক্রয় করেন, অতিরিক্ত আরও ৪ জন লোক নিয়োগ করেন। তবে লোক নিয়োগ করার ক্ষেত্রে তিনি দক্ষ লোক যাচাই বাছাই এর বেলায় কোনরূপ ছাড় দেননি। সম্পূর্ণ দক্ষ লোক নিয়েোগ দেন যেন কোনরূপ ত্রুটি না হয়। তাছাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের লোকজন নিয়মিত খামার পরিদর্শন করে থাকেন, গরুর ওজন-স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে যান। অর্থাৎ কোন ভাবেই কোন কমতি তিনি রাখেননি।
খামার ঘুরে ঘুরে দেখা যায় নাদুস নুদুস ও উন্নত জাতের ৩৭ টি গরুর দেখভালের প্রায় সবরকম ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব গরুর আনুমানিক মূল্য হিসাব করলে দাড়ায় প্রায় ১ কোটি টাকা।
উদ্যোক্তা ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, তার গাভী পালনের পরিকল্পনাও রয়েছে, যা থাকবে মূলত দুধ উৎপাদন এর জন্য। এতে তিনি তার এলাকায় ভালমানের দুধ সরবরাহ করবেন বলে জানান। আনন্দিত ভাবে তিনি বলেন যে গতবছর যারা গরু কিনেছিলেন তারা ইতিমধ্যেই তার সাথে যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন, নতুন গ্রাহকও আছেন। এতে তার প্রত্যাশা বেড়ে গেছে এবং তিনি আশা করছেন অনেক বেশি লাভ করবেন তিনি এই বছর।
চেয়ারম্যান সাহেব বলেন তার এলাকায় অনেকেই ২-৩টি গরু মোটাতাজা করে লাভবান হয়ে থাকেন, দক্ষতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যাও কম নয়। সেক্ষেত্রে গবাদি পশু পালনের উপর তাদের প্রশিক্ষিত করা গেলে মানুষগুলো লাভবান হবে। তাছাড়া প্রাণিসম্পদ বিভাগের লোকজনও এ বিষয়ে আরও বেশি সহযোগিতা করতে পারে বলেও তিনি মনে করেন।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: নার্গিস খানম খুব আনন্দের সাথে জানান যে আতোয়ার আলী তালুকদার ফজুর খামারটি লাভজনক হয়ে ওঠায় এলাকার আরও লোকজন গবাদিপশুর খামারে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। আর তাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তরফ থেকে এইসকল খামারের মালিক-কর্মচারিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে, যার পরিসর আরও বাড়ানো হবে বলে জানান তিনি। তাছাড়া ৯ ইউনিয়নে ৭ জন লাইভষ্টক অফিসার রয়েছেন, স্বেচ্ছাসেবী এ.আই টেকনিশিয়ানরাও নিজেদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।