গমের সবচেয়ে বেশি আবাদ বা উৎপাদন হয় ঠাকুরগাঁও জেলার। কিন্তু কয়েক মৌসুম ধরে এই জেলার কৃষকেরা গম চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। আবাদি জমি ও উৎপাদনের পরিমাণ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় পাঁচ বছর ধরে দুটিই নিম্নমুখী। গমের বদলে ভূট্টার চাষ বেড়েছে ঠাকুরগাঁও জেলায়। গমের বদলে ভূট্টার চাষ এর ব্যাপারটিও স্পষ্ট জেলার পরিসংখ্যানে।
গত ৫ বছরে ক্রমান্বয়ে কমেছে গমের চাষ, বাড়ছে ভূট্টার চাষ
জেলায় গত ৫ বছরে প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে গমের আবাদ কমেছে।
জেলায় ৫ বছরে ১৩ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ বেড়েছে।
কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, উৎপাদন কম, শ্রমিক–সংকট, ভালো বীজের অভাব ও বৈরী আবহাওয়া।
মূলত এই সব কারণে গম চাষে কৃষকেরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন।
অন্যদিকে ভুট্টা চাষে সেচের খরচ কম হয়, বীপরিতে উৎপাদন হয় বেশি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঠাকুরগাঁও কার্যালয় সূত্র জানায়, এ বছর (২০২২) জেলায় গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে।
যার বীপরিতে ৪৫ হাজার ১৯২ হেক্টরে চাষ হয়েছে।
লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এটি ২২৫৮ হেক্টর কম।
অধিদপ্তরের গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ও অর্জনসংক্রান্ত প্রতিবেদন দেখলে জানা যায়, ২০২১ সালে জেলায় ৪৭,৪৫০ হেক্টরে গমের আবাদ হয়েছিল।
যাতে ১ লাখ ৯৪ হাজার ১৮৪ মেট্রিক টন উৎপাদিত হয়েছিল।
২০২০ সালে ৫০ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়।
যার বিপরীতে ২ লাখ ৭ হাজার ৬৮৫ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়।
ভূট্টার চাষ বাড়ছে ক্রমান্বয়ে
অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে ঠাকুরগাঁওয়ে ২১ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে ভূট্টার চাষ হয়।
সে সময় ভুট্টা উৎপাদিত হয়েছিল ১ লাখ ৯৩ হাজার ৬৮৪ মেট্রিক টন।
কিন্তু ভুট্টার আবাদ তারপরই ক্রমান্বয়ে বেড়ে যায়।
২০১৯ সালে ৩০ হাজার হেক্টর, ২০২০ সালে ৩৪, ২০২১ সালে ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে।
আর চলতি মৌসুমে কৃষি বিভাগ মনে করছে ৩৫ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
গমের চেয়ে কম পরিচর্যা ও কম সেচ খরচে ভালো ফলন হয়।
অন্যদিকে দামও ভালো পাওয়া যায় বলে ভুট্টা চাষে কৃষকেরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
ভুট্টায় বিঘাপ্রতি খরচের সমান মুনাফা হচ্ছে কয়েক বছর ধরে।
এলাকার কৃষকেরা এ কারণেেই ভুট্টার আবাদে ঝুঁকছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়, মাছ, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির উৎপাদন বাড়ার কারণে ভুট্টার চাহিদাও বেড়ে যাচ্ছে।
ভুট্টা থেকে প্রাণিখাদ্য তৈরির বড় অংশ আসে।
অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু হোসেন জানান, চাষিদেরকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে গম চাষের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।