গাজীপুরের কালীগঞ্জে কালাইলের বিলের কৃষি জমির মাটি ভাগ ভাটোয়ারা করে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। স্বেচ্ছাসেবক ও যুবলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে কৃষি জমির মাটি ভাগ করে নেবার অভিযোগ উঠেছে। মাটি কাটার কারণে বিলের ৫ শ বিঘার বেশি কৃষি জমি ফলন বন্ধের হুমকিতে পড়েছে। কিন্তু প্রাণভয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা প্রভাবশালী ওই দুই নেতার বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারছেন না।
মাটি কাটার ঘটনায় অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবক ও যুবলীগের দুই নেতা
মাটি কাটার ঘটনায় অভিযুক্ত দুই নেতা হলেন মো. বজলুর রহমান ও মো. আলামিন আকন্দ।
তারা দু’জনেই কালীগঞ্জ পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের দুর্বাটি গ্রামে বসবাস করেন।
গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য বজলুর রহমান।
অপরদিকে আলামিন রয়েছেন পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে।
তবে তাদের সঙ্গে ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আরমান আকন্দের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
কালাইলের বিলের ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন কৃষক ও যুবলীগ নেতা আলামিন এ বিষয় স্বীকার করেন।
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, বিলে বর্ষার পানি শুকালে তারা সবজি বা ধান চাষের জন্য প্রস্তুতি নেন।
কিন্তু ওই দুই নেতার নেতৃত্বে গত ২-৩ মাস ধরে তা বন্ধ হয়ে আছে।
কালাইলের বিলের দুর্বাটি উত্তরপাড়া ও বৈরাইল এলাকায় দুটি এসকেভেটর (বেকু) লাগিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে।
দৈনিক চার-পাঁচজন শ্রমিক নিয়োগ করে কৃষি জমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে।
বিগত ৩-৪ বছর ধরে এই চক্রটি এই কাজ করে যাচ্ছে।
প্রতিদিন ১৮-২০টি লরি মাটি টানার কাজে ব্যবহার করছে।
এর ফলে রাস্তার ক্ষতির পাশাপাশি ওই বিলের ৫ শতাধীক বিঘা জমির কৃষি উৎপাদনও বন্ধ রয়েছে।
বন্ধ রাখা হয়েছে স্যালো মেশিন
কৃষকদের কাছ থেকে আরও জানা যায়, ওই বিলে থাকা একটি স্যালো মেশিন (গভীর নলকূপ) ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আরমান আকন্দ পরিচালনা করেন।
কৃষকদের জমির ওপর দিয়ে রাস্তা তৈরি করে প্রতিদিন লরি চলাচলে মাটি নিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে।
তাই আওয়ামী লীগ নেতা আরমান স্যালো মেশিনটি এখন বন্ধ রেখেছেন।
যার কারণে কৃষকরা ফসল উৎপাদন করতে চাইলেও পানির অভাবে তা পারছেন না।
জমিতে এ বছর কোনো ফসল চাষ করতে পারেননি কৃষকরা।
মাটি কাটতে অনেক নিষেধ করলে নেতারা তা না শুনে উল্টো বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন বলে জানা যায়।
এ ব্যাপারে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আরমান আকন্দ কে প্রশ্ন করা হয়।
তিনি দাবি করেন, আলামিন আমার কৃষি জমির ওপর দিয়ে লরির রাস্তা করার কারণে অনাবাদী হয়ে পড়ে আছে।
তাকে কয়েক দফা বাধা দিলেও সে তা শোনেনি।
তবে আরমান আকন্দ স্যালো মেশিন বন্ধ রাখার বিষয়টিতে অস্বীকার করেছেন।
তার দাবি প্রতিদিন রাতে স্যালো মেশিন চালু থাকে।
মাটি কাটার বিষয়টি জানতে চাইলে তা স্বীকার করেন আলামিন আকন্দ।
তবে তিনি বলেন, কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিয়েই মাটি কাটছেন তিনি।
তবে তার সাথে আরও অনেকেই জড়িত বলে তার দাবি।
মো. বজলুর রহমান জানান তিনি ছাড়াও কালীগঞ্জে আরো অনেক নেতারা মাটি কাটছে।
কিন্তু সবা্ই কে ছেড়ে তাকে উদ্দেশ্যর্মূলক ভাবে জড়ানো হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার ফারজানা তাসলিম জানান, ফসলি জমির মাটি কাটার বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি।
অভিযোগ দিলে তিনি আইনগত ব্যবস্থা নেবার আশ্বাস দেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আসসাদিক জামান।
তিনি বলেন, ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে দ্রুতই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।