
বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কৃষি খাত এখনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও, জাতীয় বাজেটে এর বরাদ্দ ক্রমশ কমছে, যা অর্থনীতিবিদদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বাজেটের অন্তত ১০ শতাংশ কৃষিখাতে বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
২০১১-১২ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটে কৃষিখাতে বরাদ্দ ছিল ১০.৬৫ শতাংশ, যা এক দশক পর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫.৯৪ শতাংশে নেমে এসেছে। অথচ, কৃষিতে ৪ শতাংশ টেকসই প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও, এটি পূরণ হচ্ছে না।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, “শুধু বরাদ্দ নয়, কৃষি ভর্তুকির পরিমাণও যথেষ্ট নয়। বাজেটের কমপক্ষে ৫ শতাংশ সরাসরি ভর্তুকি আকারে কৃষকদের হাতে পৌঁছানো দরকার।” চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি আরও কমেছে, এবং বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর পরামর্শে ভবিষ্যতে এটি আরও কমতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সার, বীজ, কীটনাশক ও সেচ ব্যবস্থায় খরচ ক্রমাগত বাড়ছে।
অর্থনীতিবিদ মো. নজরুল ইসলাম প্রান্তিক কৃষকদের জন্য সহজ শর্তে কৃষিঋণ এবং সরাসরি ভর্তুকি কার্যক্রম জোরদার করার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর মতে, “উৎপাদন বাড়াতে হলে প্রান্তিক কৃষকদের কাছে সহজে অর্থ পৌঁছাতে হবে।”
বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রেক্ষাপটে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে কৃষিপণ্যের উৎপাদন ব্যয় কমানো অপরিহার্য। এর একমাত্র উপায় হলো বাজেট বাড়ানো এবং সময়োপযোগী ভর্তুকি নিশ্চিত করা। ড. জাহাঙ্গীর আলম খান মনে করেন, “উৎপাদন পর্যায়ে খরচ কমলে বাজারে কৃষিপণ্যের দামও কমবে। এতে ভোক্তারা স্বস্তিতে থাকবেন এবং কৃষকরাও টিকে থাকতে পারবেন।”
কৃষিখাতে বরাদ্দ কমার পাশাপাশি বিদ্যমান বরাদ্দের সঠিক ব্যবহার এবং লক্ষ্যপূরণে পর্যবেক্ষণের অভাবও লক্ষণীয়। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজেট বাস্তবায়নে একটি উচ্চপর্যায়ের মনিটরিং কমিটি গঠন করা উচিত, যা প্রকল্পভিত্তিক মূল্যায়ন করবে।
বাংলাদেশের মতো কৃষিনির্ভর দেশে কৃষিতে বাজেট বরাদ্দ কমানো মানে ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তা, প্রান্তিক মানুষের জীবনযাপন এবং সামগ্রিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলা। টেকসই উন্নয়ন অর্জনে এখনই কৃষিকে অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি।