কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সারের দাম বাড়ানো্র অভিযোগ উঠেছে বরিশালে। জেলার গৌরনদী উপজেলার টরকী বন্দরে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) তিন ডিলারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ভর্তুকির সার কালোবাজারে পাচার ও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বেশি দামে সার বিক্রির। গতকাল বুধবার ভুক্তভোগী কৃষকেরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ডিলাররা স্থানীয় বাজারে বেশি দামে সার বিক্রি করছেন
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সুলভে কৃষকের মধ্যে সার সরবরাহ করার জন্য বিসিআইসির ডিলার রয়েছেন।
গৌরনদীর ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় বিসিআইসির ১০ জন ডিলার কাজ করেন।
তাদের মধ্যে উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ডিলার মেসার্স শিশির কুন্ডু, বার্থী ইউনিয়নের মেসার্স মনির ব্রাদার্স, গৌরনদী পৌরসভার মেসার্স গন্ডেশ্বরী ভান্ডার এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।
এ সকল ডিলার টরকী বন্দর এলাকায় সার বিক্রি করে আসছে।
অন্যদিকে খুচরা পর্যায়ে সার বিক্রির জন্য টরকী বন্দরসহ বিভিন্ন হাটবাজারে আরও ৭২টি লাইসেন্স করা সারের দোকান রয়েছে।
ভুক্তভোগী কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করেন, চলতি বোরো মৌসুমের শুরু থেকেই অন্য এলাকায় সার পাচার হচ্ছে।
সেই সাথে ডিলাররা স্থানীয় কৃষকদের কাছে চড়া দামে সার বিক্রি করছেন।
অভিযোগ আছে ডিলাররা পার্শ্ববর্তী কালকিনি, বাবুগঞ্জ, মুলাদী উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে ভর্তুকির সার বিক্রি করে দিচ্ছেন।
এতে স্থানীয় বাজারে সারের সংকট তৈরি হয়েছে।
কিন্তু সব জানা সত্ত্বেও এ বিষয়ে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না বলে জানায় কৃষকরা।
১৬ টাকা কেজি দরের ইউরিয়া সার এখন তারা বিক্রি করছেন ১৭-১৮ টাকায়।
বর্তমানে প্রতি বস্তা সারে ৫০-৮০ টাকা করে বেশি দিতে হচ্ছে।
কৃষকরা আরও জানান, গত শুক্রবার টরকী বন্দরের সারের ডিলার শিশির কুন্ডুর গুদাম থেকে অর্ধশতাধিক বস্তা ইউরিয়া সার দুটি ট্রলারে করে পাচার করা হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন সার পাচারে বাধা দিলে ডিলার শিশির কুন্ডু তাঁদের হুমকি দেন বলেও জানান তারা।
তবে এসব অভিযোগ একদম সাফ অস্বীকার করেছেন শিশির কুন্ডু।
তিনি বলেন, অন্য উপজেলার কৃষকেরা গৌরনদী ইউনিয়ন কিংবা পৌরসভার চাষি দাবি করে সার কিনেছেন তার কাছ থেকে।
তার অভিযোগ সে সকল কৃষকরা কালকিনি, মুলাদীসহ অন্য উপজেলায় সার নিয়ে গেলে তার কিছুই করার নেই।
বেশি দামে সার বিক্রির অভিযোগ সত্য নয় বলেই তিনি জোর গলায় জানান।
পাচার অভিযোগের সত্যতা ইউএনওকে জানানো হয়েছে
উপজেলা সার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসচিব ও গৌরনদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মামুনুর রহমান।
এ কর্মকর্তা জানান কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় ডিলারের জন্য বরাদ্দ সার অন্য এলাকায় বিক্রি করা যাবে না।
তিনি আরও জানান, বেশি দামে সার বিক্রির বিষয়ে তাকে কেউ অভিযোগ করেননি।
কিন্তু পাচারের অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন তিনি।
অভিযোগের সত্যতার বিষয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তিনি সত্যতা পেয়েছেন ও ইউএনওকে জানিয়েছেন।
উপজেলা সার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ইউএনও বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস।
তিনি বলেন, অভিযোগের সত্যতা নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
এরপর কমিটির সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঘটনায় জড়িত ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণে গুরুত্ব দেওয়া হবে এবং কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না বলে ইউএনও হুশিয়ারি দেন।