
যে কটি গ্রীষ্মকালীন ফসল রয়েছে তার মধ্যে ঝিঙা অন্যতম। খাওয়ার উপযোগী অংশের সবটাই বিভিন্ন প্রকার পুষ্টিগুনে ভরা। প্রতি ১০০ গ্রাম উপযুক্ত অংশের মধ্যে প্রোটিন ০.৫ গ্রাম, বিটা-ক্যারোটিন ৩৩.৬ মাইক্রো গ্রাম, ভিটামিন সি ৫ মিগ্রা, ক্যালসিয়াম ১৮ মিলিগ্রাম এবং ফসফরাস ২৭ মিলিগ্রাম । কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা কিভাবে ঝিঙা চাষ করব! কিন্তু খুৃব সহজেই আমরা বাড়ির আঙিনায়, বা আমাদের কৃষি জমিতে চাষ করতে পারি ঝিঙা। চলুন আজ তাহলে জেনে নেয়া যাক, কিভাবে ঝিঙা চাষ করব।
জলবায়ু ও মাটির ধরণ
ঝিঙ্গা চাষের জন্য দীর্ঘ সময়ব্যাপী উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া প্রয়োজন। সেইসাথে প্রচুর সূর্যালোক থাকে এমন স্থান উত্তম। উচ্চ জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোঁআশ মাটি যাতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল সেটি ঝিঙ্গার চাষের জন্য উপযোগী।
ঝিঙা চাষে প্রায় ১২০-১৪০ দিন পর্যন্ত সময় লাগে।
বীজ বপনের সময় ও হার
সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকে মার্চ মাস এর শেষ পর্যন্ত বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।
প্রতি হেক্টরে ৩-৪ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। প্রতি শতাংশ ১২-১৫ গ্রাম বীজের দরকার হয়।
ঝিঙা চাষে জমি নির্বাচন এবং তৈরি
ঝিঙ্গা চাষে এমন জমি নির্বাচন করতে হবে যা পানি নিকাশের উত্তম সুবিধাযুক্ত ও পর্যাপ্ত সেচ ব্যবস্থা রয়েছে।
ঝিঙা চাষে প্রচুর সূর্যালোক পাওয়া যায় এমন স্থান নির্বাচন করতে হয় ।
গাছের শিকড় বৃদ্ধির জন্য জমি-গর্ত ভালোভাবে তৈরি করতে হয়। প্রথমে জমিকে ভাল ভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করতে হয় যেন জমি বড় ঢিলা ও আগাছা মুক্ত থাকে।
বেড তৈরি
১৫-২০ সেমি উচ্চতার বেড তৈরি করতে হবে। প্রস্থে এই বেড হবে ১.২ মিটার । দৈর্ঘ্য বা লম্বা জমির মাপ অনুসারে সুবিধা অনুযায়ী নিতে হবে। বেডগুলো পরপর তৈরি করতে হবে।
দুইটি পাশাপাশি বেডের মাঝখানে অন্তত ৬০ সেমি ব্যাসের সেচ ও নিকাশ নালা থাকতে হবে।
পরিচর্যা কাজের সুবিধার জন্য দুবেড পর পর ৩০ সেমি প্রশস্ত নালা রাখতে হবে।
মাদা-র তৈরি এবং চারার রোপণ
আকারে ৫০ সেমি ব্যাস বিশিষ্ট মাদা তৈরি করতে হবে। এর গভীরতা হবে ৫০ সেমি ।
উভয় বেডের কিনার হতে ৬০ সেমি বাদ দিয়ে মাদার কেন্দ্র ধরে ২ মিটার অন্তর অন্তর এক সারিতে মাদা তৈরি করতে হবে। এক সারিতে ১৬-১৭ দিন বয়সের চারা একসাথে লাগাতে হবে।
সারের পরিমাণ এবং প্রয়োগ পদ্ধতি
সারের নাম | শতাংশ প্রতি পরিমাণ | জমি তৈরিতে | রোপণের আগে (৭-১০) | রোপণের ১০-১৫ দিন পর | রোপনের ৩০-৩৫ দিন পর | রোপনের ৫০-৫৫ দিন পর | রোপনের ৭০-৭৫ দিন পর |
টিএসপি | ৭০০ গ্রাম | ৩৫০গ্রাম | ৩০ গ্রাম | – | – | – | – |
জিপসাম | ৪০০ গ্রাম | ৪০০ গ্রাম | – | – | – | – | |
দস্তা সার | ৫০ গ্রাম | ৫০ গ্রাম | – | – | – | – | – |
বোরাক্স | ৪০ গ্রাম | ৪০ গ্রাম | – | – | – | – | – |
ম্যাগনেশিয়াম | ৫০ গ্রাম | – | ৫ গ্রাম | – | – | – | – |
পচা গোবর | ৮০ কেজি | ২০ কেজি | ৫ কেজি | – | – | – | – |
এমপি | ৬০০গ্রাম | ২০০ গ্রাম | ২০ গ্রাম | ১৫ গ্রাম | – | – | – |
ইউরিয়া | ৭০০ গ্রাম | – | – | ১৫ গ্রাম | ১৫ গ্রাম | ১৫ গ্রাম | ১৫ গ্রাম |
পরিচর্যা কিভাবে করবেন
১. ঝিঙা্ গ্রীষ্মকালেই চাষ করা হয়। এ সময় মাঝে মাঝে বৃষ্টি হয় বলে সবসময় সেচের প্রয়োজন পরে না। তবে ফেব্রুয়ারির শেষ সময় থেকে মে মাস পর্যন্ত আবহাওয়া খুব শুষ্ক হয়।
এই সময়ে ৫-৬ দিন পর পর নিয়মিত সেচের প্রয়োজন পড়ে।
২. ঝিঙার ভাল ফলন পেতে হলে অবশ্যই মাচা দিতে হবে। মাটিতে চাষ করলে ফলের একদিক বিবর্ণ হয়ে যায়, ফলে পচন ধরে। তাছািড়া প্রাকৃতিক পরাগায়ন কম হওয়ায় ফলন হ্রাস পায়।
ফসলের ফলন
সবকিছু ঠিক থাকলে হেক্টর প্রতি ১০-১৫ টন ফলন পাওয়া যায়।