আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা। চোখ জুড়িয়ে যায় বিল-ঝিলের পানিতে ফুটে থাকা শাপলার সৌন্দর্য্য দেখলে। তবে শুধু সৌন্দর্য নয়, শরীয়তপুরের চার উপজেলায় শাপলা বিক্রিতে সংসার চলে প্রায় আট শতাধিক পরিবারের।
শাপলা বিক্রিতে কোনও পুঁজি দরকার হয় না। সে কারণে বর্ষা মৌসুমে জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষক ও দিনমজুর শাপলা বিক্রি করে সংসারের খরচ চালান। বর্ষায় পানিতে ডুবে যাওয়া জমিতে সারি সারি শাপলা ফুল ফুটে থাকে। সে সকল জমি থেকে নৌকায় করে শাপলা তুলে আনেন কৃষক ও দিনমজুররা।
নৌকায় করে আনা এসকল শাপলা এরপর বিভিন্ন বাজারে বিক্রয় করেন। সংগৃহীত শাপলার চাহিদা রয়েছে প্রায় সকল বাজারে। দৈনিক ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয় তাদের শাপলা বিক্রি করে।
স্থানীয় অধিবাসিরা জানান শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া, জাজিরা, ভেদরগঞ্জ ও গোসাইরহাট উপজেলায় বেশ কিছু নিচু এলাকা বিদ্যমান। এ সকল নিচু এলাকার বিলে বর্ষা মৌসুমে অনেক শাপলা ফুটে থাকে। আষাঢ় থেকে শুরু করে ভাদ্র মাস পর্যন্ত পাওয়া যায় এই শাপলা ফুল।
বিনা পুজিতে হলেও শাপলা সংগ্রহ সহজ নয় বলে জানান সংগ্রহকারীরা। শাপলা সংগ্রহকারীরা ভোরে নৌকা নিয়ে বের হন। ডুবে যাওয়া জমিতে ও বিলের মধ্যে ঘুরে ঘুরে শাপলা তুলতে থাকেন। তাদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, বর্ষা মৌসুমে একেকজন প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০ মুঠো শাপলা সংগ্রহ করতে পারেন। এক মুঠো শাপলাতে ৭০-৮০ পিস শাপলা থাকে। সংগ্রহকারীদের থেকে পাইকাররা এসব শাপলা কিনে নেন। দিন শেষে তারা সংগ্রহকারীরা ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা আয় করতে পারেন। এ কাজ করে বছরের প্রায় তিন মাস তারা জীবিকা নির্বাহ করেন।
এ ব্যাপারে নড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রোকনজ্জুমান এর সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, নড়িয়ার ১৪টি ইউনিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সাতটি ইউনিয়নে প্রাকৃতিকভাবে ১০০ টনের মতো শাপলা উৎপাদন হয়। সরাসরি শাপলা বেচা-কেনার সঙ্গে পাঁচ থেকে ছয়শ’ কৃষক জড়িত। শাপলা অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি হিসেবে জনপ্রিয়। এতে প্রচুর পরিমাণে খনিজ পদার্থ রয়েছে। এছাড়া এতে শর্করা, ক্যালসিয়াম, আমিষ ইত্যাদি পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়। আজকাল বিভিন্ন জেলা শহরেও চাহিদা রয়েছে, তাই শাপলা দিন দিন জনপ্রিয় সবজি হয়ে উঠছে।