Saturday, 19 April, 2025

সর্বাধিক পঠিত

ভেষজ আবাদে ঝুঁকছেন কৃষকেরা


টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার পাহাড়ি জনপদে ফল-ফসলের পাশাপাশি জাফরান, আলকুশি, নাগদানা, নীলকণ্ঠ, অপরাজিতা, এলোভেরা ও বাসকসহ বিরল শত ভেষজে ঠাসা বাণিজ্যিক বাগান হরদম চোখে পড়ে। লাভজনক হওয়ায় পাহাড়ি গ্রাম টেলকি, আমলিতলা, ঘুঘুরবাজার, অরনখোলা ও গাছাবাড়ীর কৃষকেরা ঝুঁকছেন ভেষজ আবাদে।

গুবুদিয়া গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেনের পাঁচ একর বাগানে রয়েছে চার শতাধিক দেশি-বিদেশি ভেষজ গাছ। শতাধিক ভেষজের এখন বাণিজ্যিক কালেকশন হয়। সবচেয়ে দামি ও দুষ্প্রাপ্য ভেষজ কালোআদা, রিতো ও অর্থোসিনের সন্তোষজনক ফলন হচ্ছে। রিতো থেকে স্থানীয়ভাবে সাবান ও জুয়েলারি শিল্পের পণ্য এবং কালো আদায় দুরারোগ্য ব্যাধির হারবাল ওষুধ তৈরি হচ্ছে। প্রতিমাসে বাগান থেকে ৩-৪ লাখ টাকার ভেষজ বিক্রি করেন তিনি।

হামদর্দের অবসরপ্রাপ্ত চিকিত্সক নুরুল আলম জানান, দেশের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং মেডিসিন কোম্পানির গবেষকরা এখানে সারা বছর মাঠ গবেষণায় আসেন। দেশে মেডিসিনাল প্লান্টসের তেমন বাণিজ্যিক আবাদ না হওয়ায় এলোপ্যাথিক ও হারবাল কোম্পানিরা বিদেশ থেকে কাঁচামাল আনেন। অথচ মধুপুরের পাহাড়ি এলাকার প্রচলিত ফল-ফসলের পাশাপাশি ভেষজ প্লানটেশন হলে কোটি কোটি টাকা আয় হতো।

আরো পড়ুন
হিমাগারে জায়গা নেই, পচে যাচ্ছে আলু: তানোরের চাষিদের হাহাকার

বাঁশঝাড়ের পাশে স্তূপ করে রাখা আলুর গাদা থেকে পচা অংশ ফেলে দিচ্ছেন রোকেয়া বেগম (৪৫)। কেটেকুটে সামান্য ভালো অংশ বাছাই Read more

চিংড়ি রপ্তানিতে ১৭.০৬% প্রবৃদ্ধি, কিন্তু কাঁচামাল সংকটে হুমকিতে শিল্প
চিংড়ি রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এর তথ্যমতে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) হিমায়িত ও জীবন্ত মাছ রপ্তানি আগের বছরের Read more

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন জানান, বাগানে প্রায় আড়াই লাখ উত্পাদনক্ষম বাসক গাছ রয়েছে। করোনার কারণে বাসকের বিপুল চাহিদা থাকায় দামও বেড়েছে। প্রতি মণ বাসক এখন ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাসক থেকে সাধারণত কফ সিরাফ ও ঠান্ডাজাতীয় রোগের ওষুধ তৈরি হয়। মধুপুরে বর্তমানে প্রায় ১০০ টনের বেশি বাসক উত্পাদন হয় বলে জানান তিনি।

একমির মার্কেটিং প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, শীতকালে এমনিতেই ঠান্ডা ও কফকাশির জন্য বাজারে বাসক সিরাফের চাহিদা থাকে। এবার করোনার দরুন বাসকে তৈরি সিরাফ ও ওষুধের চাহিদা সারা বছর লেগে আছে। সাধনা, হামদর্দ ও শক্তির মতো হারবাল এবং স্কয়ার, একমি ও ফাইজারের মতো এলোপ্যাথিক কোম্পানি মধুপুর থেকে সরাসরি বাসক পাতা কিনছেন।

অরনখোলা গ্রামের ভেষজ ব্যবসায়ী বন্দেজ আলী জানান, বাণিজ্যিক উদ্যান ছাড়াও গৃহস্থরা বাড়ির আঙ্গিনায়, পতিত জমি, খেতের আইল এবং আনারস বাগানে সাথী ফসল হিসেবে ভেষজের আবাদ করছেন। তার মতো পাইকাররা গ্রামে গ্রামে ঘুরে কিনে নিচ্ছেন। ভেষজ বিক্রি করে অনেকেই লাখ টাকা রোজগার করছেন। এদিকে ওষুধ ছাড়াও ভেষজ চা হিসাবেও বাসকের চাহিদা রয়েছে। অনেকটা চা পাতার মতোই বাসক পাতা প্যাকেটজাত ও বাজারজাত করছেন।

মধুপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মাহমুদুল হাসান জানান, মধুপুরে ভেষজ গাছগাছড়ার চাষ নিয়ে উপজেলা কৃষি বিভাগের কোনো গবেষণা নেই। পাহাড়ি কৃষকরা নিজের আগ্রহে ভেষজ গাছগাছড়ার চাষে মনোনিবেশ করছেন। কেউ অফিসে এলে তাকে পরামর্শ দেওয়া হবে।

0 comments on “ভেষজ আবাদে ঝুঁকছেন কৃষকেরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক লেখা

আর্কাইভ