এবার কীটনাশকমুক্ত ধানের বীজতলা তৈরি করতে নতুন প্রযুক্তি নিয়ে এসেছেন এক বিজ্ঞানী। এই প্রযুক্তি আয়তাকার হাতজাল প্রযুক্তি নামেও পরিচিত। কীটনাশকমুক্ত বীজতলায় হাতজাল প্রযুক্তি নিয়ে এসেছেন বরিশাল আঞ্চলিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক বিজ্ঞানী। কৃষকেরা কোনো ধরনের কীটনাশক ছাড়াই বীজতলায় বীজ তৈরি করতে পারবেন এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে । কীটনাশকমুক্ত বীজতলায় হাতজাল প্রযুক্তি ব্যবহারে কৃষকের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমবে। পাশাপাশি বিষমুক্ত দানাদার শস্য উৎপাদন করে জনস্বাস্থ্যকে সুরক্ষা দেবে এই প্রযুক্তি।
প্রযুক্তির নাম দেয়া হয়েছে সবুজ প্রযুক্তি
চলতি বছর গবেষণা খামারের বীজতলায় এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাফল্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ব্রির বিজ্ঞানীরা।
বোরো মৌসুমে ব্রি বরিশালের ৯৫ একর আয়তনের গবেষণা খামারে বীজতলায় এটি ব্যবহার করা হয়।
তাদের মতে, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে কৃষকদের আলাদা কোনো ধরণের প্রশিক্ষণ নিতে হবে না।
এই প্রযুক্তি যেমন লাগসই তেমনি কম খরচের।
বরিশাল আঞ্চলিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী ও কীটতত্ত্ববিদ মনিরুজ্জামান কবির প্রযুক্তিটি এনেছেন।
তিনি এই প্রযুক্তির নাম দিয়েছেন সবুজ প্রযুক্তি।
মনিরুজ্জামান কবির এর সাথে এ বিষয়ে কথা হয়।
তিনি জানান যে, প্রথমে চারকোনা কাঠামোতে ৪ মিলিমিটার আকৃতির জিআই পাইপ দিয়ে আয়তাকার একটি কাঠামো তৈরি করতে হয়।
আয়তাকার কাঠামোটির দৈর্ঘ্য ৫০ সেন্টিমিটার এবং প্রস্থ হবে ২০ সেন্টিমিটার।
এই কাঠামোর হাতল তৈরি করা হয় প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে।
১০০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট হাতল এর চারকোণা কাঠামোতে ৮০-১০০ সেন্টিমিটার মশারির জাল লাগিয়ে দিতে হবে।
কৃষকেরা নিজেরা বাড়িতে বা স্থানীয় ওয়েল্ডিংয়ের দোকানে এটি তৈরি করা যেতে পারে।
৩০০-৩৫০ টাকা খরচ করলেই এই প্রযুক্তি তৈরি করা সম্ভব।
কৃষকেরা তাদের বীজতলায় গড়ে এক–দুবার কীটনাশক প্রয়োগ করে থাকেন।
এতে কৃষকের উৎপাদন খরচ বাড়ার পাশাপাশি পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।
বাংলাদেশ ক্রপ প্রোটেকশন অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য থেকে জানা যায়, ২০২০ সালে বাংলাদেশে কীটনাশকের আমদানির পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৭ হাজার ৫৬৩ মেট্রিক টন।
প্রযুক্তির ব্যবহার, সুফল সম্পর্কে মনিরুজ্জামান কবির জানান ধানখেতের পোকা দমনে গোলাকার হাতজাল প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছিল।
কিন্তু গোলাকার হাতজাল দিয়ে বীজতলার ৭-২৫ দিন বয়সী চারাগাছে সুইপ বা স্ট্রোক করা যায় না।
অন্যদিকে বর্গাকার বা আয়তাকার এই প্রযুক্তি ব্যবহারে চারার কোনোরকম ক্ষতি ছাড়াই পোকা নিধন সম্ভব।
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. রুহুল আমিন।
তিনি বলেন, আয়তাকার হাতজাল প্রযুক্তিটি আপাতত ছোট বিষয় মনে হতে পারে।
তবে এর প্রভাব অনেক ব্যপক।
সারা পৃথিবী নিরাপদ খাদ্য বা অর্গানিক ফুডের বিষয়টিতে মনোযোগী।
তাই কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে ছোট ছোট এমন প্রযুক্তির প্রতি মনোযোগ বাড়াতে হবে।