মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ একটি উন্নত চাষ পদ্ধতি, যা মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখা, আগাছা দমন, এবং উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কার্যকর। নিচে মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষের ধাপগুলো দেওয়া হলো:
১. জমি নির্বাচন ও প্রস্তুতি
- উঁচু ও সুনিষ্কাশিত জমি নির্বাচন করুন।
- মাটি ঝুরঝুরে ও বেলে-দোআঁশ হলে করলা চাষের জন্য উপযোগী।
- চাষের আগে জমিতে জৈবসার, টিএসপি, এমওপি, এবং ইউরিয়া প্রয়োগ করে জমি প্রস্তুত করুন।
২. মালচিং সামগ্রী প্রস্তুত
- পলিথিন মালচিং: কালো বা সাদা-কালো মালচিং পলিথিন শিট ব্যবহার করা হয়।
- প্রাকৃতিক মালচিং উপকরণ: খড়, ধানের তুষ, শুকনো পাতা বা অন্যান্য জৈব উপকরণ।
৩. মালচিং পলিথিন বিছানো
ক) মালচিং পলিথিন
- উঁচু বেড তৈরি করুন:
- বেডের প্রস্থ: ১ মিটার।
- বেডের মাঝখানে সেচের জন্য নালা রাখুন।
- বেডের ওপর পলিথিন শিট বিছিয়ে দিন।
- শিটের মাঝখানে ১-১.৫ ফুট দূরত্বে ছোট ছোট গর্ত (চারা বা বীজ লাগানোর জন্য) তৈরি করুন।
খ) প্রাকৃতিক মালচিং
- জমিতে আগাছা পরিষ্কার করে মাটির ওপর ১-২ ইঞ্চি পুরু খড় বা পাতা বিছিয়ে দিন।
- এটি মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখবে।
৪. বীজ বপন ও চারা রোপণ
- বীজ শোধন: ২ লিটার পানিতে ৫ গ্রাম ব্যাভিস্টিন বা ফিটকিরি মিশিয়ে বীজ ১০-১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে নিন।
- প্রতিটি গর্তে ২-৩টি বীজ বপন করুন।
- চারা হলে গর্তে ১টি শক্তিশালী চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলুন।
৫. সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা
- সেচের জন্য নালায় পানি দিন।
- মালচিং পদ্ধতিতে মাটি বেশি শুকিয়ে যায় না, তাই সেচের প্রয়োজন কম।
- অতিরিক্ত পানি জমে গেলে নিষ্কাশন নিশ্চিত করুন।
৬. সার প্রয়োগ
- প্রাথমিক সার: জমি তৈরির সময় প্রতি বিঘায় ৮-১০ টন গোবর সার, ৫০-৬০ কেজি টিএসপি, ২০-৩০ কেজি এমওপি মিশিয়ে দিন।
- পরবর্তী সার:
- বীজ বপনের ২০ দিন পর প্রতি গাছে ১০-১৫ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করুন।
- ফল আসার সময় পটাশ সার প্রয়োগ করলে ফলন বৃদ্ধি পায়।
৭. আগাছা দমন
- মালচিং পলিথিন বা জৈব মালচিং ব্যবহারের কারণে আগাছা কম হয়।
- প্রয়োজন হলে আগাছা তুলে ফেলুন।
৮. রোগবালাই ও পোকামাকড় দমন
- পাউডারি মিলডিউ বা ডাউন মিলডিউ প্রতিরোধে ম্যানকোজেব বা কার্বেনডাজিম স্প্রে করুন।
- পোকার আক্রমণ হলে বায়োলজিক্যাল বা রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করুন।
৯. ফল সংগ্রহ
- চারা রোপণের ৫০-৬০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ শুরু করা যায়।
- প্রতিদিন বা একদিন পর পর পরিণত করলা সংগ্রহ করুন।
মালচিং পদ্ধতির উপকারিতা
- মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখে।
- আগাছা দমন হয়।
- মাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
- উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
- সেচ ও সার প্রয়োগে সাশ্রয় হয়।
সঠিক পরিচর্যা ও মালচিং পদ্ধতি অনুসরণ করলে করলা চাষে উৎপাদন এবং লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।