দিনাজপুরে এবার ভূট্টার প্রচুর ফলন হয়েছে। প্রতি বিঘায় ভুট্টার ফলন হয়েছে ৭০-৮০ মণ। বর্তমান সময়ে মাঠ থেকে ভুট্টা ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষক। অন্যদিকে বাজারে দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে। সবমিলিয়ে ভূট্টার প্রচুর ফলন হওয়ায় খুব খুশি কৃষকরা।
কৃষকরা জানান এবার শীতের প্রকোপ কম ছিল।
সেইসাথে সঠিক সময়ে বৃষ্টি হয়েছে।
তাই ভুট্টার ফলন খুব ভালো হয়েছে এবছর।
ভুট্টার দানা বড় ও পরিপক্ব ছিল এবার, তাই ওজনও বেড়েছে।
বিঘা প্রতি ৭০-৮০ মণ ফলন হয়েছে জমিতে।
প্রতি মণ কাঁচা ভুট্টার বর্তমান বাজারদর ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা।
অন্যদিকে শুকনা ভুট্টা প্রতি মণ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
ভুট্টার ভালো ফলন ও ভালো দামের কারণে জেলায় বাড়ছে আবাদ।
জেলার বীরগঞ্জ, চিরিরবন্দর ও খানসাম উপজেলার কয়েকটি এলাকা ঘুরে ভূট্টার খেত দেখা যায়।
বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে রয়েছে এসকল ভুট্টার খেত।
দেখা যায় কৃষকরা কিছু কিছু খেতে গাছের আগা ও পাতা ছেঁটে ফেলেছেন।
তারা জানান ফলের গায়ে যেন রোদের তাপ ভালো করে লাগতে পারে।
অধিকাংশ খেত থেকেই তারা ভুট্টার মোচা তোলা ও সংগ্রহ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক তথ্য জানায় জেলায় ২০১১-১২ অর্থবছরে ৪৪ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার ফলন হয়।
যার পরিমাণ ৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৮৪ মেট্রিক টন।
পরের বছর থেকে ধীরে ধীরে ভূট্টার আবাদ বাড়তে থাকে।
জেলায় বীরগঞ্জ, কাহারোল, বিরল, চিরিরবন্দর ও সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ভুট্টার আবাদ হয়।
২০২১-২২ অর্থবছরে সর্বশেষ ৭১ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়।
যার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৭ লাখ ৭৯ হাজার ৬৪০ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়।
খানসামা উপজেলার ভেড়ভিড়ি গ্রামের কৃষক জানান, এবার চার বিঘা জমিতে উন্নত জাতের ভুট্টা চাষ করেছেন তিনি।
এক বিঘা জমিতে চাষ ও মজুরি বাবদ ১৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
প্রতি বিঘায় তিনি ৭৫ মণ ভুট্টা পেয়েছেন।
কাঁচা ভূট্টা প্রতি মণ বিক্রি করেছেন ৮৫০ টাকা দরে।
এতে তার ৪০ হাজার টাকার মতো লাভ হয়েছে।
চিরিরবন্দরের এক কৃষক বলেন, ধানের চেয়ে ভুট্টার চাষে অনেক বেশি লাভ হয়।
তাই ভুট্টার চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়ে গেছে এখন।
তিনি জানান আগে তিনি দুই থেকে তিন বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করতেন।
ভালো লাভ হবার কারনে এবার ৭ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন তিনি।
দিনাজপুর শিল্প ও বণিক সমিতির পরিচালক সহিদুর রহমান পাটোয়ারী।
তিনি জানান, দিনাজপুরে দিন দিন ভুট্টার আবাদ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
গত চার বছরে জেলা শহরে গড়ে উঠেছে পাঁচটি ভুট্টার আবাদ মিল।
এতে প্রচুর পরিমানে চাহিদা বেড়েছে ভুট্টার।
এতে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা ভুট্টা আবাদে ঝুঁকছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হক।
তিনি বলেন, ভুট্টা চাষের জন্য সাধারণত নদীর ধারে পলিমিশ্রিত ঢালু জমি উপযোগী।
দীর্ঘ দিন যাবত অনাবাদি থাকা জমিতেও চাষ করা সম্ভব।
তাই কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করে সেসকল জমিকে চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।
তাছাড়া ভুট্টার আবাদ বাড়াতে সরকারি প্রণোদনা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
এরই অংশ হিসেবে জেলার ২০ হাজার কৃষককে কৃষককে ভূট্টার বীজ দেয়া হয়।
প্রত্যেককেই ২ কেজি করে ভুট্টার বীজ ও ২০ কেজি সার সরবরাহ করা হয় এ কার্যক্রমে।