বিপন্ন রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে বিলুপ্তির ঝুঁকি থেকে টেনে তুলতে অসামান্য সাফল্য দেখিয়েছে নেপাল। হিমালয়ের পাদদেশের ছোট এবং দরিদ্র এই দেশটিতে বাঘের সংখ্যা গত ১০ বছরে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। কিন্তু স্থানীয় মানুষকে তার জন্য অনেক মূল্য দিতে হচ্ছে। কারণ বাঘের হাতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা এবং মৃত্যু বেড়ে গেছে।
“বাঘের মুখোমুখি হলে আপনার মনে একইসাথে দুটো অনুভূতি কাজ করবে, ” বলেন ক্যাপ্টেন আয়ুশ জং বাহাদুর রানা যিনি বাঘ সংরক্ষণে তৈরি একটি ইউনিটের সদস্য।
“বাঘের রাজসিক রূপ দেখে প্রথমে আপনি হা হয়ে যাবেন, এবং একইসাথে মনে হবে, হায় ঈশ্বর আজই কি আমার কপালে মৃত্যু!”
নেপালের তরাই এলাকার বারদিয়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর টহল দেওয়ার সময় এখন ক্যাপ্টেন আয়ুশের সামনে প্রায়ই বাঘ পড়ে যায়। মাঠ এবং ঘন জঙ্গলে আবৃত এই উদ্যানটিতে মানুষের উৎপাত এখনও কম।
“বাঘ রক্ষার দায়িত্ব পেয়ে আমি নিজেকে সম্মানিত বোধ করি। বড় কোনো কাজের সাথে যুক্ত হওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার,” সামনে ঘন জঙ্গলের দিকে চোখে রেখে বললেন ক্যাপ্টেন আয়ুশ।
নেপালের ‘জিরো-পোচিং’ অর্থাৎ অবৈধ শিকার পুরোপুরি বন্ধের নীতি বাঘ সংরক্ষণে বেশ ভালো কাজ করেছে। জাতীয় উদ্যানের নিরাপত্তায় এখন সাহায্য করছে নেপালের সেনাবাহিনী। অবৈধ বাঘ শিকার ঠেকাতে এবং বাঘ যাতে উদ্যানের সাথে যুক্ত বিভিন্ন পথ দিয়ে নিরাপদে আশপাশের জঙ্গলে চলাফেরা করতে পারে তা নিশ্চিত করতে উদ্যানের লাগোয়া জনপদে কম্যুনিটি ইউনিট তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু বাঘের সংখ্যা এভাবে এত বেড়ে যাওয়ায় এই উদ্যানের প্রান্তের বসতিগুলোতে মানুষদের জীবনের ওপর ঝুঁকি বেড়ে গেছে।
“এলাকার মানুষজন এখন আতংকের ভেতর বসবাস করে,” বলেন মনোজ গুতাম যিনি ইকো-ট্যুরিজমের ব্যবসা করেন, এবং একইসাথে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের একজন ক্যাম্পেইনর।
“এই যে এলাকায় একইসাথে বাঘ এবং তার শিকারের উপযুক্ত বন্যপ্রাণী এবং মানুষ একইসাথে থাকে তা আয়তনে ছোটো। নেপালে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার জন্য বাকি বিশ্বের মানুষ উৎফুল্ল, কিন্তু স্থানীয় মানুষদের অনেক মূল্য দিতে হচ্ছে।”
গত এক বছরে নেপালে বাঘের হামলায় ১৬ জন মারা গেছে। অথচ তার আগের পাঁচ বছরে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছিল মাত্র ১০।