
ঢাকার ধামরাই উপজেলার মাঠজুড়ে এখন সোনালি ভুট্টার রাজত্ব। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবছর ভুট্টার বাম্পার ফলনে ভরপুর খুশি কৃষকের মুখে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাণসঞ্চার করেছে এই সাফল্য। কম খরচে বেশি লাভজনক হওয়ায় প্রান্তিক কৃষকরাও ঝুঁকছেন ভুট্টা চাষে।
সকাল থেকে সন্ধ্যা—প্রচণ্ড রোদ উপেক্ষা করে মাঠে কাজ করছেন কৃষক ও কৃষাণীরা। কোথাও চলছে ফসল ঘরে তোলার কাজ, আবার কোথাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন বাজারজাত করার। চোখে মুখে সাফল্যের আনন্দ।
ভুট্টা চাষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে আবাদ
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে ধামরাইয়ে ২ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও বাস্তবে আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৫৭২ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি চাষ হওয়ায় সন্তুষ্ট কৃষি বিভাগ। কৃষকদের মাঝে সরকারিভাবে প্রণোদনাও দেওয়া হয়েছে।
চাষ হয়েছে স্বর্ণালী ভুট্টা, বারি হাইব্রিড-৬, ৭ ও ৮সহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উন্নত জাত। আবহাওয়ার সহায়তায় রোগব্যাধির প্রকোপ ছিল কম। ফলে উৎপাদন হয়েছে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
প্রান্তিক কৃষকের মুখে হাসি
কুশুরা ইউনিয়নের ঢালীপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুস সাত্তার জানান, “আমি ৮০ শতাংশ জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি, পেয়েছি প্রায় ৮৬ মণ ফলন। ধানের তুলনায় ভুট্টা চাষে খরচ অনেক কম, ঝুঁকি কম, লাভও বেশি। তাই ধান ছেড়ে এখন অনেকেই ভুট্টা চাষে আগ্রহী।”
সোমভাগ ইউনিয়নের কৃষক নাজমুল বলেন, “আমি ১২০ শতাংশ জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। এখনো সব ফসল ঘরে তুলিনি, তবে ফলন ভালোই হয়েছে। প্রতি বছর ভালো দাম পাই বলেই আগ্রহ বাড়ছে।”
ভুট্টার বহুমুখী ব্যবহার, বাড়ছে চাষে আগ্রহ
ভুট্টার শুধু মোচাই নয়, এর সবুজ পাতা গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়, আর গাছ ব্যবহার হয় জ্বালানি কাঠ হিসেবে। ফলে ভুট্টার কোনো অংশই ফেলনা নয়, যা কৃষকের লাভ বাড়াতে সহায়তা করছে।
উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের মধ্যে রোয়াইল, সূয়াপুর, সোমভাগ, গাংগুটিয়া ও বালিয়া এলাকায় ভুট্টা চাষ বেশি হয়েছে। উত্তরাঞ্চলে চাষ বেশি হলেও প্রতিটি গ্রামেই কমবেশি ফলন ভালো হয়েছে।
কৃষি বিভাগের সহযোগিতা সর্বক্ষণিক
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, “ভুট্টা চাষে খরচ কম, রোগবালাইও তুলনামূলক কম, তাই কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে। আবহাওয়াও সহায়ক ছিল। কৃষকদের সবসময় পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ফলন ও দাম—দুটিই ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।”
তিনি আরও জানান, শিল্পাঞ্চলের প্রসারের ফলে চাষযোগ্য জমি কমে আসছে, তবুও উন্নত জাত ও সঠিক ব্যবস্থাপনায় ভুট্টা চাষে ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে।
ধামরাইয়ের মাঠে এখন শুধু ভুট্টা নয়, কৃষকের স্বপ্নও বেড়ে উঠছে। সরকারি সহায়তা, সঠিক পরামর্শ আর প্রাকৃতিক অনুকূলতায় ভুট্টা হয়ে উঠছে গ্রামীণ অর্থনীতির চালিকাশক্তি। প্রান্তিক কৃষকের মুখে ফুটে উঠছে আত্মনির্ভরতার হাসি।