শীতকালীন সবজি যত আছে তাদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি হচ্ছে শিম।শিম পছন্দ করেন না এমন খুব কম লোকই পাওয়া যাবে। ভর্তা বা তরকারি, সব জায়গায় শিমের স্বাদ অতুলনীয়। কিন্তু বাজারের উচ্চমূল্য আর বিষাক্ত রাসায়নিকের ভয়ে অনেকেই বাজার থেকে শিম কিনে খেতে ভয় পান।
শহরে লোকেরা তো অনেকটা হাহাকার করেন। শিম খুব সহজেই ছাদে চাষ করতে পারেন যা বর্তমানে অনেকেই চাষ করে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে নিচ্ছেন আবার অর্থনৈতিক ভাবে লাভের মুখ দেখছেন।
কিভাবে শিমের জন্য মাটি তৈরি করবেন ?
শিম চাষের জন্য খুব ভালো হচ্ছে দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি।। অন্য মাটিতেও করা যাবে, কিন্তু মাটি যদি এটেল হয় তাহলে তাতে শিমের ফলন হয় না।
টব কেমন হবে
টবের আকার মাঝারি হতে হবে। কিংবা চাইলে ড্রামও ব্যবহার করা যেতে পারে। হাফ সাইজের ড্রাম এর মধ্যে এর চাষ ও ব্যবস্থাপনা সুন্দর ও যথাযথ ভাবে করা যায়।
কোন জাতের শিমের বীজ ভাল হবে
বারি-১,২,৫,৬, ঘৃত কাঞ্চন, ইপসা শিম, বাইনতারা, হাতিকান, পুঁটি, সীতাকুন্ডু, নলডক –এরকম বিভিন্ন প্রজাতির শিম রয়েছে। এদের যেকোন টাই ছাদ কৃষির জন্য ভালো হবে।
কখন বীজ বপন করতে হয়
যদি ভালো ও সঠিক সময়ে ফলন পেতে হয় তাহলে শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি থেকে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত শিম লাগাতে হবে। তবে আগাম চাষও করতে পারবেন, সেক্ষেত্রে আষাঢ় থেকে পুরো ভাদ্র মাস পর্যন্ত শিম গাছ লাগাতে পারবেন।
কিভাবে বীজ বপন করা হয় ? পানি সেচ কিভাবে দিব
একটি টবে ৫-৬ টি করে বীজ বপন করে দিতে হয়। অঙ্কুর গজিয়ে চারা হলে চারা বাছাই করে নিতে হয়। টবে যেগুলো সুস্থ চারা থাকে তাদের বাদ দিয়ে দুর্বল চারা তুলে ফেলে দিতে হয়। চারা গজালে প্রথম দিকে নিয়মিত পানি দিতে হয়। গরম পড়লে পানির সেচ বাড়াতে হবে, আবার আর্দ্রতা বাড়লে কিছুটা কমিয়ে নিতে হয়। তবে গাছের গোড়ায় পানি থাকা চলবে না।
কিভাবে শিম গাছের পরিচর্যা করব?
শিম গাছের চারা খুব নরম হয় বিধায় একটু বড় হলে একটা ছোট লাঠি দিয়ে গাছকে বেঁধে দিতে হবে্। একটি মাচা তৈরি করে নিতে হয় । শিম গাছের গোড়াতে সবসময় অল্প করে মাটি দিতে হয়, সেক্ষেত্রে ঠান্ডা ছাইও ব্যবহার করতে পারেন। গাছ ঝোপালো এবং ফুল ফল বেশি চাইলে মাঝে মধ্যে ছেটে দিতে হয়। শিম গাছের ক্ষেত্রে নিয়মিত যত্ন করতে হয়, নিয়মিতভাবে আগাছা পরিষ্কার করতে হয়, অতিরিক্ত আগা ও লতাপাতা ছাটাই করে দিতে হয় মাঝে মাঝে।গাছের গোড়ায় বেশি বেশি মাটি দিতে হয়, লতিয়ে গেলে বেধে দিতে হয়। সার হিসেবে ইউরিয়া, টিএসপি, মিউরেট অব পটাশ, জিপসাম, জিংক অক্সাইড দিতে হয় আবার জৈব সার ব্যবহার করতে পারেন।
কিভাবে শিমের পোকামাকড় ও রোগ দমন করব?
শিমে বিভিন্ন পোকার আক্রমণ হয় যেমন জাব পোকা, লাল মাকড়, থ্রিপস পোকা, গান্ধি পোকা।এছাড়া মোজাইক ভাইরাস ও অ্যানথ্রাকনোজ হচ্ছে এর জন্য সবচেয়ে বড় ক্ষতিকারক রোগ।
তাই মোজাইক ভাইরাসের জন্য ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক ব্যাবহার করা যায়। এটা প্রতি ২ লিটার পানির অনুপাতে মিশ্রণ করে শিম গাছে ১০ দিন অন্তর অন্তর ২থেকে ৩ বার করে স্প্রেয়ার দিয়ে স্প্রে করতে হয়। অ্যানথ্রাকনোজ হলে মেক্সজিল ৭২ WP জাতীয় ওষুধ ব্যাবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।