দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা যশোরের প্রত্যন্ত গ্রাম গদখালী। গদখালীর ফুলের বাগান হেসে ওঠে সকালের সাথে সাথেই। প্রকৃতিপ্রেমীদের এই অপার সৌন্দর্য অনুভবের ডাক দিয়ে যায়। শীতের মৌসুমে এ অঞ্চল উপেক্ষা করা কষ্টকর। ভোর বেলা থেকেই ফুলপ্রেমীদের উপস্থিতিতে বাগানগুলো মুখর থাকে। করোনা কালীন সময়ে এই ফুলগ্রামের ক্ষতি হয়েছে খুব। গদখালী গ্রাম বর্তমানে আবার ঘুরে দাড়াবার চেষ্টা করছে। গদখালীর ফুলের বাগান থেকে ফুলের চালান যায় সারা দেশে।
প্রতিদিন ঢাকাসহ যশোরের আশেপাশের জেলা ও অন্যান্য অঞ্চল থেকে প্রায় ১০ হাজার পর্যটক এখানে আসেন। চোখ ধাঁধানো এই ফুলের খেত স্থানীয়দের আয়ের আরেকটি অন্যতম উৎস। গদখালীর ফুলের বাগান গুলোর সৌন্দর্য আর সৌরভ সবাইকে করে রাখে মোহিত।
করোনা ও আম্ফানের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষকেরা
যশোরের ৩৫টি গ্রামে ৬২৫ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হয়।
প্রায় ৪২টি দেশি-বিদেশি জাতের ফুলের চাষ হয় এ অঞ্চলে।
যশোরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস।
তিনি জানান, যশোরে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কৃষক এবং ১ লাখ মানুষ ফুলচাষের সঙ্গে জড়িত।
করোনার কারণে প্রথমে ২০২০ সালের মার্চে লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পরবর্তীতে ২০২১ সালের মাঝামাঝি ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’র ধ্বংসযজ্ঞের পর তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
গত আগস্ট মাস থেকে স্থানীয় কৃষকেরা তাদের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
চাষিদের কাছ থেকে জানা যায় , ফুলের চাহিদা ও উৎপাদন দুই ই বেড়েছে।
আগের মৌসুমের তুলনায় ফুলের দামও বেশি।
এ্ই অবস্থা চলমান থাকলে চাষিরা তাদের মহামারিজনিত ক্ষতি পূরণ করতে পারবেন বলে আশা করেন।
দেশের এক-চতুর্থাংশ ফুলের চাষ হয় যশোরে
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে, কৃষকরা ২ হাজার ২৬৪ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ করে।
তবে চলতি মৌসুমে চাষের হিসাব এখনো জানা যায়নি।
দেশে মোট ফুলচাষের এক-চতুর্থাংশই যশোরে হয়ে থাকে। এরপরের অবস্থানে রয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম।
গদখালীর শিশির নার্সারি অ্যান্ড কাট ফ্লাওয়ার সেন্টারের মালিক ইসমাইল হোসেন।
তিনি বলেন, লকডাউনের সময় তারা ফুল বিক্রিই করতে পারেননি। তবে তাদের লাগানো গাছগুলো বেঁচে ছিল।
চলতি মৌসুমে তার ৭ বিঘা জমিতে জারবেরা, কসমস, ডেইজি জিপসিসহ বিভিন্ন জাতের ফুলের চাষ করেছেন।
গত ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের আগে বেশি দামে ফুল বিক্রি করতে পেরেছেন তিনি।
তিনি জানান ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ তার ২টি শেড ধ্বংস ও গাছের ক্ষতি করেছে।
মহামারির মধ্যে ফুলের চাহিদা কমে যাওয়ায় তার ৪৫ লাখ টাকার মত ক্ষতি হয়েছে।
তিনি আশা করেন আগামী ২ মাসে ৪টি বড় উৎসব ও দিবস রয়েছে।
তাছাড়া পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও স্বাধীনতা দিবসকে কেন্দ্র করে ফুল বিক্রি অনেক বেড়ে যাবে তার।
যশোরের ঝিকরগাছার পানিসারা ইউনিয়নের কৃষক আমির হোসেন।
তিনি লোকসান কাটিয়ে আসন্ন বিক্রির মৌসুমের দিকে তাকিয়ে আছেন।
গদখালী ফুলচাষি ও ফুল চাষিদের সংগঠন কল্যাণ সমিতির সম্পাদক মো. মনিরুল ইসলাম।
তিনি জানান এ বছর আবহাওয়া ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি উভয়ই অনুকূলে আছে।
তাছাড় ফুল বিক্রি করে চাষিদের মোটামুটি লাভের সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও জানান, এখন দৈনিক ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হচ্ছে গদখালী বাজারে।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম।
তিনি বলেন, যশোর থেকে দেশের ফুলের চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ পূরণ হয়।
তিনি আরও জানান যে, করোনা মহামারির কারণে শুধু যশোর অঞ্চলেই অন্তত ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এই মৌসুমে ফুলের ব্যবসা ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি আশা করে।