মৌসুমের শুরু থেকেই বাজার মন্দা। যার কারণে আগাম আলু চাষে বিপদে পড়েছেন বগুড়া, নীলফামারী ও মুন্সিগঞ্জের হাজারো কৃষক। এই আলু চাষের ফলে অনেক কৃষক কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত লোকসান গুণেছেন। আগে জমি থেকেই পাইকার ও ব্যবসায়ীরা আলু কিনে নিত। কিন্তু এবার সরাসরি হাটে তোলার ফলেও কাঙ্খিত দাম পাচ্ছেন না তারা। এমনকি উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না। তাই আলু চাষে বিপদে পড়েছেন এসব অঞ্চলের কৃষকরা।
বাজার মন্দার সাথে যোগ হয়েছে মাঘ মাসের বৃষ্টি
শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আলু তুলে হাটে নিয়েও কাঙ্ক্ষিত দাম মিলছে না। উৎপাদন খরচ তুলতে না পেরে হতাশ কৃষকেরা।
কেবল বাজার মন্দাই নয় সাথে মাঘ মাসের বৃষ্টিতে আলুখেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এতে ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় আরও বেহাল দশা কৃষকের।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, এবার জেলায় ৫৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলুর চাষ হয়েছে।
যার মধ্যে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম আলু চাষ হয়েছে।
বগুড়ার মহাস্থান, রায়নগর, অনন্তবালা, ঘাগুরদুয়ার, সেকেন্দ্রাবাদ, টেপাগাড়িসহ বিভিন্ন এলাকার আলুচাষিদের সঙ্গে কথা হয়।
তারা জানান, প্রতিবছরের মতো ভালো দাম পাওয়ার আশায় এবারও তাঁরা খেতে নানা জাতের আলু চাষ করেছেন।
কিন্তু এবার বাজার মন্দা থাকায় আগাম আলু চাষ করে লোকসানে পড়েছেন তাঁরা।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. এনামুল হক।
তিনি জানান যে, এবার আগাম আলু চাষ হওয়া জমির মধ্যে কৃষকেরা ২৬ শতাংশ জমি থেকে আলু তুলেছেন।
অবশিষ্ট জমির আলু খেতেই রয়েছে যাতে মাঘের বৃষ্টিতে পানি জমে আছে।
এতে আলু ও সবজির ফলনবিপর্যয় ঘটবে বলে তিনি জানান।
বাজারে সবজির সরবরাহ কমে গেলে আলুর বাজার চাঙা হবে বলে তিনি ধারণা করেন।
বাজার মন্দা নীলফামারীতে
এদিকে আগাম আলুর বাজার মন্দা থাকায় নীলফামারীর চাষিরাও রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।
আর সে জন্যই অনেকে জমি থেকে আলু তুলতে চাচ্ছেন না।
কৃষকদের কাছ থেকে জানা যায়, বিঘাপ্রতি আলু উৎপাদনে ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা খরচ হয়।
অন্যদিকে বর্তমান বাজারদরে আলু বিক্রি করলে বিঘাপ্রতি ১২ হাজার টাকা আসে।
সেই হিসাবে প্রতি বিঘায় কৃষককে প্রায় তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।
জেলা কৃষি বিভাগ থেকে জানা যায় এ বছর ২২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
কিন্তু আবাদ হয়েছে ২২ হাজার ৩১০ হেক্টরে।
আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৭৯১ মেট্রিক টন হবে বলে ধরা হয়েছে।
নীলফামারী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক আফজাল হোসেন।
তিনি বলেন, এখন আলুর বাজারদর কম হলেও এ অবস্থা বেশি দিন থাকবে না।
আলু সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নিতে তাগাদা দেন এ কর্মকর্তা।
মুন্সিগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টিপাত হবার কারণে আলুর ভালো ফলন হয়নি।
এসব অবস্থা বিবেচনা করে আলু সংরক্ষণ করার গুরুত্ব উল্লেখ করেন এ কর্মকর্ত।
জেলায় ১১টি হিমাগার রয়েছে বলে জানান আফজাল হোসেন।
ভালো ফলন হয়নি মুন্সিগঞ্জ জেলায়
মুন্সিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক খুরশীদ আলম।
তিনি বলেন, মুন্সিগঞ্জের জমি থেকে বন্যার পানি সরতে অনেক দেরি হয়।
এ কারণে এই জেলা আলুর জন্য প্রসিদ্ধ হলেও আগাম আলুর চাষ খুব একটা হয় না।
কিন্তু এ বছর ৩০০ থেকে ৪০০ হেক্টর উঁচু জমিতে আগাম আলুর চাষ করা হয়েছিল।
তাই আলুর দাম পড়ে যাওয়ায় কৃষকেরা লোকসানের মুখে পড়েছেন।