
পোকামাকড় একমাত্রই শত্রু নয়। পাশাপাশি আগাছাও ফসলের বড় শত্রু। আগাছাও পোকামাকড়ের সাথে সাথে ফসল নষ্টের জন্য দায়ী। প্রায় ৪০ শতাংশ দায়ী। সে কারণে জমিতে পূর্ণ ফসল ফলাতে গেলে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন আগাছা দমন পদ্ধতি কি তা জানতে ও প্রয়োগ করতে হবে। জমিতে আগাছা দমন না করলে ফসল ক্ষতির সম্ভাবনা অনেক বেশি।তাই আগাছা দমন পদ্ধতি কি কি সে সম্পর্কে চলুন জেনে নেয়া যাক।
আগাছা দমনের রয়েছে অনেক পদ্ধতি
ক্ষেতের আগাছা দমন করার ক্ষেত্রে সবাই প্রথমেই রাসায়নিক পদ্ধতির কথা আমাদের মাথায় আসে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ‘রাসায়নিক আগাছানাশক’ প্রয়োগ করে কৃষকরা আগাছা দমনের চেষ্টা করেন।
তবে এক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত রাসয়নিক প্রয়োগের অনেক কুফল দেখা যায়।
এই অবস্থায় কৃষকদের সঠিক উপায়ে প্রাকৃতিক ভাবে আগাছা নিয়ন্ত্রণের উপর জোর দিতে হবে।
আগাছা দমনের জন্য প্রচলিত বেশ কয়েকটি পদ্ধতি আছে। এসব পদ্ধতির মধ্যে অন্যতম পদ্ধতি হচ্ছে পরিচর্যা পদ্ধতি। বর্ষাকালে কৃষকদের দ্রুত ফলন হয় এমন ফসলের চাষ করা উচিত।এতে আগাছা থেকে বাঁচতে অনেক সহায়ক হয়। তাছাড়া যেকোন ফসল মৌসুম অনুযায়ী সবসময় চাষাবাদ করা উচিত।
জমি ফেলে রাখলে আগাছা বাড়ে
জমি কখনই স্বাভাবিক ফেলে রাখা উচিত নয়। এতে জমিতে আগাছা বেড়ে ওঠে।
লাঙল, হুইল, উইডার, কালটিভেটর ইত্যাদি যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষতিকর আগাছা মাটিতে মিশিয়ে দিয়েও আগাছা পরিষ্কার করা যায়।
খুব দ্রুত বৃদ্ধিসম্পন্ন সবজি সমূহের শাখা প্রশাখা সহজেই বিস্তারের মাধ্যমে জমিতে আগাছার প্রকোপ কম করা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে বরবটি, শিম, ঢেঁড়শ প্রভৃতি।
অন্যদিকে একই জমিতে আলাদা আলাদা পরিবারভুক্ত ফসল চাষাবাদ করলে জমিতে আগাছার পরিমাণ হ্রাস পায়।
সে কারণে জমিতে শস্য আবর্তন থাকা খুবই জরুরি।
প্রতিবছর একই জমিতে টমেটো, মরিচ, বেগুন জাতীয় সবজির পরিবর্তে শিম্বী গোত্রীয় ফসল চাষ করলে উপকার করা যায়। কিছু কিছু শাকজাতীয় স্বল্পমেয়াদী সবজির বীজ ঘন করে বোনা হলে জমিতে আগাছার বিস্তার অনেকটা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
স্বল্প সময় ব্যবধানে ও অগভীরভাবে জমি কর্ষণ করলে বা লাঙল দিলে আগাছা অনেক ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
মূল ফসলের সাথে অন্তর্বর্তী সাথী ফসলের চাষ আগাছা নিয়ন্ত্রনে উপকার দেয়।
মটরের বীজ বপনের সময় কিছুটা বিলম্বিত করলে আগাছার থেকে অনেকাংশে রেহাই মেলে।
আবার স্বাস্থ্যবান চারাগাছ আগাছার বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।
মাটির সৌরকরণ করলে আগাছার বিস্তার অনেক কম হয়। বিভিন্ন জৈবিক পদ্ধতিতেও আগাছা দমন করা সম্ভব।
আগাছা নিয়ন্ত্রণের সুপ্রাচীনতম ও অন্যতম একটি পদ্ধতি হলো যান্ত্রিক পদ্ধতি।
হাত দিয়ে, নিড়ানি দিয়ে বা খুরপি দিয়ে আগাছা তুলে বা উপড়ে ফেলতে হবে।
জমির পরিমাণ অল্প হলে খুব সহজেই যান্ত্রিক পদ্ধতিতে আগাছা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ফসলের উপর ভিত্তি করে ২ থেকে ৪টি হাত নিড়ানি দেওয়ার প্রয়োজন হয়।
এছাড়া লাঙল, উইডার, কালটিভেটর ইত্যাদির মাধ্যমেও আগাছা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
মালচিং করেও আগাছার প্রকোপ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।
খড়, কচুরিপানা, শুকনো পাতা, তুষ, ভূষি কিংবা প্লাস্টিক ফিল্ম ও বিভিন্ন রঙের পলিথিন দিয়েও মালচিং করা হয়ে থাকে।