রংপুর জেলায় সরকারি উদ্যোগে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে ধান সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হয়েছে।
এবছর আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ হাজার ৩৮২ মেট্রিকটন। এর মধ্যে শুধু পীরগঞ্জ উপজেলায় সংগ্রহ হয়েছে মাত্র দুই মেট্রিকটন। বাকি সাত উপজেলায় ধান সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ।
এছাড়া ১৭ হাজার ৬৩৮ মেট্রিকটন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের কথা থাকলেও মিল মালিকরা হস্তান্তর করেছেন মাত্র এক হাজার ৫৩৫ মেট্রিকটন চাল।
আমন সংগ্রহ অভিযানে ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে খাদ্য বিভাগ চলতি বোরো মৌসুমে রংপুরে আবারো ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছে। গত মঙ্গলবার রংপুর সদর খাদ্যগুদামে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক আসিব আহসান।
ধানের দাম গত বছরের চেয়ে কৃষকরা এক টাকা বেশি পাবেন এবার। আর চাল সরবরাহকারী ব্যবসায়ীরা প্রতিকেজি চালে বাড়তি পাবেন তিন টাকা। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দামের তুলনায় বাজারে দাম বেশি হলে গত আমন মৌসুমের মতো বোরোতেও সেই প্রভাব পড়ার শঙ্কা দেখা দেবে।
জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পরিপত্র অনুযায়ী রংপুর সদর, মিঠাপুকুর ও তারাগঞ্জে কৃষক অ্যাপসের মাধ্যমে লটারি করে ধান কেনা হবে। এবার রংপুর জেলায় ২৭ টাকা কেজি দরে ১৭ হাজার ৪০৩ মেট্রিকটন ধান ও ৪০ টাকা কেজি দরে ২৮ হাজার মেট্রিকটন চাল ক্রয় করবে সরকার।
আমন মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হওয়ার বিষয়ে রংপুর খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য ও হয়রানির কারণে গুদামে ধান দিতে অনাগ্রহের কারণ বলে কৃষকরা দাবি করেছেন।
তবে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আমন মৌসুমে সরকার ধানের দাম নির্ধারণ করে দেয় প্রতিমণ ১০৪০ টাকা। সেই অনুযায়ী একমণ ধানে ২৬ কেজি চাল হিসাবে প্রতিকেজি চালের দাম পড়ে ৩৬ টাকা। তবে বাজারে চালের সর্বনিম্ন দাম ছিল ৪২ টাকা। ফলে চুক্তি করেও মিলাররা চাল দেয়নি। আবার স্থানীয় বাজারে সরকার নির্ধারিত দামের তুলনায় ধান ও চালের দাম বেশি থাকায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে খাদ্য গুদামে ধান দিতে গেলে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে হয় প্রান্তিক চাষিদের। ধানের আর্দ্রতা আর গুণাগুণ পরীক্ষা করে নিয়ম অনুযায়ী না মিললে তা ফেরত পাঠানো হয়। অথচ ফড়িয়াদের সঙ্গে গোপন আঁতাতে তাদের দেওয়া ধানের আদ্রতা বা গুণাগুণ নির্ণয় করা হয় না।
ক্ষোভের সঙ্গে মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ এলাকার কৃষক নয়া মিয়া বলেন, ‘একাধিকবার খাদ্য গুদামে সরকারিভাবে ধান বিক্রির সুযোগ পেলেও ধান দিতে গিয়ে যে পরিমাণ হয়রানির শিকার হয়েছি, তা বলার ভাষা নেই। সেই কারণে আমন মৌসুমে ধান দেইনি। এবারও হয়রানি থেকে বাঁচতে কম দামে হলেও বাজারে ধান বিক্রি করে দেব।’
কাউনিয়া উপজেলার শহীদবাগ এলাকার কৃষক আশেক আলী বলেন, ‘দালাল ছাড়া খাদ্য গুদামে ধান দিলে হয়রানির শিকার হতে হয়, তাই আগ্রহ নেই।’
জেলা মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সামছুল আলম বাবু জানান, সরকার নির্ধারণ করেছে আমনের চাল ৩৬ টাকা। সেই চাল বাজারে বিক্রি হয়েছে ৪২ টাকায়। তাই মিলাররা চাল দেননি। আমনের মতো বোরো মৌসুমেও সরকার নির্ধারিত দামের তুলনায় বাজারে ধান চালের দাম বেশি থাকলে সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হওয়ার শঙ্কা আছে।
ঘুষ বাণিজ্য ও হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করে রংপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল কাদের বলেন, ‘মূলত বাজারে ধান এবং চালের দাম বেশি হওয়ায় আমন মৌসুমে নির্ধারিত দামে ধান-চাল সংগ্রহ করা যায়নি।
তবে চলতি বোরো মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আমন মৌসুমে যারা চুক্তি করেও চাল সরবরাহ করেনি তাদের বিরম্নদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে।’