বাংলাদেশে চাষযোগ্য জমি ও বাড়ির আঙিনায় বর্ষজীবী লতানো উদ্ভিদ মিষ্টি কুমড়া চাষ হয় ব্যাপকভাবে। প্রায় সারা বছর এই সবজির চাষবাদ করা যায়। মিষ্টি কুমড়ার ফলন বৃদ্ধির উপায় কি ?
মিষ্টি কুমড়ার (Pumpkin) ফলন বৃদ্ধির জন্য সঠিক পদ্ধতি এবং যত্নের প্রয়োজন। নিচে মিষ্টি কুমড়ার ফলন বৃদ্ধির কিছু কার্যকর পদ্ধতি দেওয়া হলো:
১. উপযুক্ত জাত নির্বাচন:
উচ্চ ফলনশীল এবং রোগ প্রতিরোধী জাত নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন জাতের মিষ্টি কুমড়া আছে, যেমন ‘মধুমালা’, ‘গোল্ডেন ডিলিশিয়াস’ ইত্যাদি।
২. মাটি প্রস্তুতি:
মিষ্টি কুমড়া ভালোভাবে জন্মাতে হলে উর্বর, সুনিষ্কাশিত দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটির প্রয়োজন। জমি চাষের আগে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে।
৩. সঠিক সময়ে বপন:
বীজ বপনের সঠিক সময় নির্বাচন করুন। মিষ্টি কুমড়া সাধারণত বসন্ত বা শরৎকালে বপন করা হয়। তবে স্থানীয় আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে সময় নির্ধারণ করতে হবে।
৪. সার ও পুষ্টি:
নিয়মিতভাবে সার প্রয়োগ করতে হবে। মিষ্টি কুমড়া বৃদ্ধির জন্য নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং পটাশিয়াম সমৃদ্ধ সার প্রয়োজন। জৈব সার, কম্পোস্ট এবং কেঁচো সার ব্যবহার করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
৫. সঠিক সেচ:
মিষ্টি কুমড়ার ভালো ফলনের জন্য নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে সেচের প্রয়োজন। তবে জমিতে জলাবদ্ধতা যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখতে মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে।
৬. রোগ এবং পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ:
মিষ্টি কুমড়ার ফলন বৃদ্ধির জন্য রোগ এবং পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত গাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে পোকামাকড় এবং রোগ প্রতিরোধক ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।
৭. সঠিক সময়ে ফসল তোলা:
মিষ্টি কুমড়া সম্পূর্ণ পরিপক্ক হলে ফসল সংগ্রহ করতে হবে। খুব আগে বা খুব দেরিতে ফসল তোলার ফলে ফলন কম হতে পারে।
৮. পরাগায়ন:
মিষ্টি কুমড়ার ভালো ফলন নিশ্চিত করতে পরাগায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মৌমাছি এবং অন্যান্য পরাগায়নকারী পতঙ্গের উপস্থিতি বৃদ্ধি করতে ফুলের গাছ লাগানো যেতে পারে।
৯. ফসলের ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণ:
গাছের যথাযথ ঘনত্ব বজায় রাখতে হবে যাতে প্রতিটি গাছ পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো, পানি এবং পুষ্টি পায়।
১০. নিয়মিত পরিচর্যা:
গাছের নিয়মিত পরিচর্যা করতে হবে। আগাছা নিয়ন্ত্রণ, ছাঁটাই এবং প্রয়োজনে গাছের শাখা প্রশাখা মাটিতে লতিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো মেনে চললে মিষ্টি কুমড়ার ফলন বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।