ছাত্রজীবনে বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেন তিনি। একসময় জমিতে বেগুন আবাদ করে হাটে হাটে বিক্রি করতেন। বেগুন বিক্রির জমানো মাত্র ১৪ হাজার ৬শ টাকা দিয়ে ১৯৯৪ সালে একটি শংকর জাতের গাভী কিনেন তিনি।
২০ বছরে এখন তিনি ১৩১টি গরুর মালিক যার বাজারমূল্য ২ কোটি টাকা। বলছিলাম পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সফল খামারী আমিরুল সরদারের গল্প।
তার খামারের নাম ‘তন্ময় ডেইরি ফার্ম’। খামারে তিনি গরু পালন, দুধ বিক্রি, গোবর, বায়োগ্যাস প্লান্ট, কেঁচো দিয়ে জৈবসার প্রস্তুত করেন। তার গরু পালন দেখে অনেকেই উদ্বুদ্ধ। তার পরামর্শ নিয়ে ওই গ্রামের অর্ধশতাধিক বেকার এখন স্বাবলম্বী।
সম্প্রতি ঈশ্বরদী উপজেলার পদ্মা নদী অধ্যুষিত চরাঞ্চল এলাকা, লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের বরমপুর গ্রামের তন্ময় ডেইরি ফার্ম ঘুরে এতথ্য জানা যায়।
সরেজমিন গিয়ে তন্ময় ডেইরি ফার্মে দেখা যায়, প্রায় ২২ বিঘা জমির উপরে খামার গড়ে তুলেছেন আমিরুল। সারি সারি বাঁধা রয়েছে ষাঁড় ও বকনা গরু। একটি গাভী থেকে বংশবৃদ্ধি। সেই ১৯৯৪ সালে ফিজিয়ান জাতের একটি গাভী থেকেই প্রজনন সম্প্রসারণ শুরু।
বর্তমানে খামারে ৬৪টি ষাঁড়, ৩২টি বকনা, ৩৫টি বাছুর সর্বমোট ১৩১টি গরু। এখানে একই জাতের গরু, অন্য কোনো জাত নেই। বর্তমানে দুধ দিচ্ছে ২০টি গাভী। প্রতিদিন ৪৫০-৫০০ লিটার দুধ হয়। গাভীর বাছুরগুলোকে যত্নে রাখা হয়েছে যেন কোনো রোগবালাই না হয়।
গরুর গোবর থেকে বায়োগ্যাস প্লান্টের মাধ্যমে বাড়তি জ্বালানি চাহিদা মেটানো হচ্ছে। কেঁচো দিয়ে তৈরি করা জৈব সার ব্যবহার হয় কৃষি জমিতে।
এছাড়াও নিজ বাড়িতে তিনি দেশীয় জাতের ব্লাকবেঙ্গল ছাগল, মোরগ-মুরগি, কবুতর পালনও শুরু করেছেন। আরো বড় পরিসরে খামার বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আমিরুল। সবকিছুই বেশ পরিপাটি।
খামারি আমিরুল সরদার বলেন, ইচ্ছে ছিল স্কুলশিক্ষক হবো। কিন্তু আব্বা মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরতে গিয়ে স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। আজ খামারের পরিধি বেড়েছে অনেক। খামারে গাভীন গরুর সংখ্যা বেশি। বর্তমানে ২০টি গাভী থেকে ৫শ লিটার দুধ বিক্রি করা হয় ২০ হাজার টাকা। খামারের বাছুরই হলো লাভের অংশ। বছর শেষে ৫০টি বাচ্চা হয় সাধারণত। বাছুর থেকে আয় হয় প্রায় ৩০ লাখ। বর্তমানে সর্বসাকুল্য তার ২ কোটি টাকার গরু রয়েছে।
ঈশ্বরদী উপজেলার পদ্মা নদীর চরাঞ্চল খ্যাত লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের সফল চেয়ারম্যান (ইউপি) আনিসুর রহমান শরীফ জানান, বর্তমান কৃষিতে সাফল্য অর্জন করেছেন অনেকে। তাই সরকারের কাছে প্রত্যাশা লক্ষ্মীকুন্ডাতে এখন যে পরিমাণ দুধ উৎপাদন হয়, সে পরিমাণে দুধ বিক্রির করার জায়গা নেই। যদি সরকারিভাবে এই অঞ্চলে একটি দুগ্ধ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যেত। দুধ থেকে সাধারণত যে সব খাদ্য তৈরি হয় তা ক্রয় করতে এই লক্ষ্মীকুন্ডার মানুষকে আর বাইরে যেতে হবে না। দরকার সরকারের একটু স্বদিচ্ছা।