দিনাজপুরের বাগানগুলোতে অন্যরকম মিষ্টি ও রসালো স্বাদের লিচু পরিপক্ব হতে শুরু করেছে। লাভের আশায় এখনই লিচু বাজারে নামিয়েছে চাষীরা। তবে আগামী সপ্তাহে পুরোদমে বাজারে লিচু পাওয়া যাবে।
জানা যায়, এবার বৈশ্বিক জলবায়ু উষ্ণায়নের প্রভাবে দিনাজপুরের লিচুর ফলন কম হওয়ায় এবং করোনায় বাজার নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন লিচু চাষী ও বাগানীরা। প্রচন্ড গরমে আশানুরুপ ফলন না হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে বাগান মালিক আর আগাম বাগান কেনা লিচু ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কাও কৃষি বিভাগের।
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারন বিভাগ জানায়, এবার দিনাজপুর জেলায় ছোট-বড় নিয়ে ৫ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির বাগান থেকে লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার মেট্রিক টন। মৌসুমে রাজধানী থেকে আগত লিচু ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন বাগান থেকে সরাসরি প্রতিদিন ২৫/৩০ লাখ লিচু কিনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠায়।
বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিভিন্ন জাতের লিচুর মধ্যে বেদানা, বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না-থি, কাঠালী আর দেশী লিচু এখন গাছে গাছে। বৃষ্টির অভাব এবং প্রখর রোদে লিচুর জ্বলে গেছে রং, পরিপুষ্টতা সেভাবে হচ্ছে না। এরপরেও বাজারে মাদ্রাজী লিচু উঠেছে। যদিও লিচু প্রকৃতভাবে পাকেনি তারপরেও বাজারে কদরের কমতি নেই। সময়ের আগে বাজারে আসা লিচুর স্বাদ তেমন পাওয়া না গেলেও চাহিদা কম নাই।
দিনাজপুর সদর, বিরল, বীরগঞ্জ, চিরিরবন্দর, পার্বতীপুরের অধিকাংশ গাছে এবার ফলন কম। বোম্বাই লিচুর ফলন একদমই নেই।
বাগান মালিকরা জানান, এবার বৃষ্টি না হওয়ার কারণে ফলন কম। এ অবস্থায় ভালো ফলনের আশায় গাছে সেচ এবং ফলনটা মোটা হওয়ার জন্য গাছে ভিটামিন স্প্রে করছে বাগান মালিক-কৃষকরা।
দিনাজপুর শহরের কালিতলাসহ কয়েক এলাকায় এবং হিলি বাজারের পুরাতন সোনালি ব্যাংক মোড়, ফলহাটি, চারমাথা মোড়সহ বিভিন্ন মোড়ে লিচুর ডালি নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। মাদ্রাজী প্রতি ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২৫০টাকা দরে।
বাজারে লিচু কিনতে আসা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, লিচুর দাম যাই হোক। লিচুগুলো এখনও পরিপক্ক না এবং তেমন মিষ্টি না। শুধুমাত্র মৌসুমি ফলের স্বাদ নিতেই লিচু কেনা বলে মন্তব্য করেন তিনি।
লিচু পল্লী বলে খ্যাত মাশিমপুরের গোলাম মোস্তফাসহ চাষীরা জানায়, আগামী সপ্তাহে লিচু বাজারে পুরোদমে নামবে। বাজারে মাদ্রাজী নামলেও বেদনা ও চাইনা থ্রিসহ অন্যান্য জাতের লিচু নামেনি।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, অত্যধিক খরার কারণে এবার লিচুর আকার বড় হচ্ছে না। এবং ফলের যে বর্ণ সেটাও আসতে দেরি হচ্ছে। তাই প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ৩০ শতাংশ ফলন কম হবে বলে জানান তিনি। জেলায় ৫৬০০ হেক্টর জমির বাগান থেকে লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার মেট্রিক টন। প্রতি বছর এই জেলায় ৪০০-৪৫০ কোটি টাকার বেশি লিচু বেচাকেনা হয়।