সবজিভান্ডার হিসেবে ব্রহ্মপুত্র নদ ঘেঁষা ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন বিখ্যাত। এখানকার চাষিরা এখন ক্ষেতে আসা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে সবজি বিক্রি করছেন কম মূল্যে। অথচ বাজারে সেই সবজি বিক্রয় হচ্ছে চড়া দামে। আর এর কারণ হল মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌড়াত্ব বা পাইকারি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। এমন করে সিন্ডিকেটের দৌড়াত্ব বেড়েছে আর তাতে সাধারণ ক্রেতা ধুকছে। সেই সাথে সিন্ডিকেটের দৌড়াত্ব বেড়েছে বিধায় সাধারণ কৃষকরাও সংকটে পড়েছেন।
এই এলাকার চাষিরা এ নিয়ে প্রচন্ড ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা অভিযোগ করেন, সিন্ডিকেটের দৌড়াত্ব বেড়েছে, যার ফলে এখানকার উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের সবজি পাইকারদের মাধ্যমে যায় দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায়।
পাইকাররা সামান্য দামে ক্রয় করে চার-পাঁচগুণ বেশি দামে বিক্রয় করেন
এসব সবজি তারা বিক্রি করছেন সামান্য লাভে।
কিন্তু চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি দামে সেই সবজিই বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
চরাঞ্চলের বোরোরচর ও চর সিরতা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম সরেজমিনে ঘুরে দেখা হয়।
সেখানে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বিভিন্ন সবজির ক্ষেত প্রত্যক্ষ হয়।
চারিদিকে শুধু সবজি আর সবজি দেখা যায়। কৃষকদের সকলেই ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
চর খরিচা গ্রামের কৃষক শামসুল হক জানান, তিনি ১৮০ শতাংশ জমিতে বেগুন, টম্যাটো ও কাঁচা মরিচ চাষ করেছেন।
জমিতে সবজি চাষে তার ৩৫ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়েছে।
তিনি জানান যে এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছেন তিনি।
সব মিলিয়ে ৪০ হাজার টাকার মতো তার লাভ থাকবে।
শামসুল হক আফসোস এর সাথে জানান, দূর-দূরান্ত থেকে আসা পাইকাররা এত হাড়ভাঙা পরিশ্রমের উপার্জন এর চেয়ে চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি লাভে বিক্রি করেছেন।
হাড়ভাঙা পরিশ্রমে সে লাভ নেই যা পাইকারদের আছে
পরানগঞ্জের বীর বাওলা গ্রামের কৃষক আব্দুল মোতালেব অভিযোগ করেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট(Syndicate) করে সব ধরনের সবজির দাম নিয়ন্ত্রণ করেন।
তিনি আরও জানান যে প্রতিটি ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি করছেন ৪ থেকে ৫ টাকায়।
কিন্তু সেই কপিই বাজারে ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ময়মনসিংহ শহরের মেছুয়া বাজারে আড়তদার জয়নাল আবেদীন।
তিনি অবশ্য দাবি করেন, পাইকাররা চরাঞ্চলের বিভিন্ন ইউনিয়নের চাষিরা খুব ভোরে ওই বাজারে সবজি নিয়ে যান।
প্রান্তিক চাষিরা পাইকারদের কাছে কত টাকায় সবজি বিক্রি করেন সেটা তাদের বলা হয় না।
দেশের বাইরেও রপ্তানি হবে সবজি
সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা তাহমিনা ইয়াসমিন।
তিনি জানান, গত বছর তিন হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছিল।
ব্রহ্মপুত্র নদের কোলঘেঁষে তৈরি হওয়া বিশাল সবজির কেন্দ্রে এবার আরও বেশি জায়গাজুড়ে সবজি চাষ হচ্ছে।
তিনি আরও জানান যে, শুধু বোরোর চর ইউনিয়নে ৪২০ হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচ চাষ হয়েছে।
এখানকার কাঁচা মরিচ দেশ ছাড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপেও যাবে বলেও তিনি জানান।
ওই এলাকার কৃষকদের সঙ্গে এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের কিছু লোকজন এসে কথা বলেছেন।
ইতিমধ্যে ৬০ জনের বেশি কৃষককে নিয়ে তিনটি রপ্তানিকারক দল করা হয়েছে বলেও এ কর্মকর্তা জানান।
তিনি আরও জানান যে, সবজি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবলস এলাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন এ বিষয়ে বেশ অগ্রসরও হয়েছে।
কৃষকদের সঙ্গে নেগোসিয়েশন হলে রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হলে কৃষকরা সে ক্ষেত্রে ন্যায্য দাম পাবেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপপরিচালক মতিউজ্জামান।
তার দাবি, কৃষি কর্মকর্তারা চাষিদের সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
বিভিন্ন সময় কৃষকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণও দিচ্ছেন তারা।
তিনি আরও বলেন, শীতকালে বেশি সবজি উৎপাদন হয় এতে দাম কিছুটা কম থাকে।
কৃষকরা একসঙ্গে টাকা পাবার জন্য খুব কম দামে পাইকারদের কাছে সবজি বিক্রি করে দেন।
আর এই সুযোগেই মূলত অসাধু পাইকাররা সিন্ডিকেট করে চড়া দামে বিভিন্ন সবজি বিক্রি করার সুযোগ পায়।