মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ একটি আধুনিক ও কার্যকর পদ্ধতি, যা ফসলের উৎপাদনশীলতা বাড়ায় এবং খরচ কমায়। এই পদ্ধতিতে, গাছের চারপাশে মালচ (Mulch) ব্যবহার করা হয়। মালচ সাধারণত প্লাস্টিক শীট বা জৈব পদার্থ দিয়ে তৈরি করা হয়, যা মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং আগাছার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে।
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের ধাপসমূহ:
১. জমি প্রস্তুত করা:
- জমি ভালোভাবে চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করতে হবে।
- মাটিতে প্রয়োজনীয় জৈব সার (গোবর সার, ভার্মিকম্পোস্ট) মিশিয়ে নিতে হবে।
- জমি উঁচু করে বেড (Raised Bed) তৈরি করতে হবে, যা মালচিং পদ্ধতির জন্য উপযোগী।
২. মালচিং সামগ্রী নির্বাচন:
- প্লাস্টিক মালচ: কালো-সাদা প্লাস্টিক শীট বেশি ব্যবহৃত হয়। কালো অংশ মাটির দিকে এবং সাদা অংশ ওপরে রাখা হয়।
- জৈব মালচ: খড়, পাতা, কাঠের গুঁড়ো বা নারকেলের ছোবড়া ব্যবহার করা যায়।
৩. মালচিং শীট স্থাপন:
- বেডের উপর মালচিং শীট বিছিয়ে দিন।
- শীটটি মাটির সাথে ভালোভাবে বসানোর জন্য চারপাশে মাটি দিয়ে চেপে দিন।
- শীটে গাছ লাগানোর জন্য নির্দিষ্ট দূরত্বে ছিদ্র তৈরি করুন।
৪. চারা রোপণ:
- ভালো জাতের টমেটোর চারা সংগ্রহ করুন।
- ছিদ্রগুলোতে টমেটোর চারা রোপণ করুন এবং মাটি দিয়ে চারা চেপে দিন।
- রোপণের পর সেচ দিয়ে চারা সতেজ রাখুন।
৫. সেচ ও সার প্রয়োগ:
- ড্রিপ সেচ পদ্ধতি মালচিংয়ের জন্য আদর্শ। এটি সঠিক পরিমাণে পানি সরবরাহ করে।
- গাছে প্রয়োজনীয় সার (NPK, জৈব সার) সময়মতো প্রয়োগ করুন।
৬. রোগবালাই ও আগাছা নিয়ন্ত্রণ:
- মালচ ব্যবহার করলে আগাছা খুব কম হয়, তাই আগাছা নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।
- নিয়মিত গাছ পর্যবেক্ষণ করুন এবং প্রয়োজনে রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা নিন।
৭. ফল সংগ্রহ:
- চারা লাগানোর ৬০-৭০ দিনের মধ্যে ফল আসতে শুরু করবে।
- পাকা টমেটো সময়মতো সংগ্রহ করুন।
মালচিং পদ্ধতির উপকারিতা:
- মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখে।
- আগাছার বৃদ্ধি রোধ করে।
- মাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
- সেচের পানির সাশ্রয় হয়।
- ফলন বৃদ্ধি পায়।
- ফসলের গুণগত মান উন্নত হয়।
এই পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করলে খরচ কিছুটা বেশি হলেও লাভের পরিমাণ বেশি হয়, যা কৃষকদের জন্য বেশ উপকারী।