
বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষ করে সফলতার নজির গড়েছেন লক্ষ্মীপুরের মো. দেলোয়ার হোসেন। প্রবাস জীবন শেষ করে বাড়ির আঙিনায় মাশরুমের খামার গড়ে তুলেছেন তিনি, যা এখন স্থানীয় উদ্যোক্তাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে। সদর উপজেলার তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের বিনোদ ধর্মপুর গ্রামের এ সফল উদ্যোক্তার দেখাদেখি অনেকেই মাশরুম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
স্বল্প পুঁজিতে অধিক লাভজনক এ কৃষিপণ্য বিদেশেও রপ্তানি করার পরিকল্পনা করছেন দেলোয়ার হোসেন। তিনি জানান, এর মাধ্যমে নিজের অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি এলাকার বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির স্বপ্ন দেখছেন তিনি। সরেজমিনে তার খামারে গিয়ে দেখা যায়, খড়কুটো, কাঠের গুঁড়া, গমের ভুসি, চুন এবং পানির সংমিশ্রণে স্পন প্রস্তুত করা হচ্ছে, যা মাশরুম চাষের প্রথম ধাপ।
বাড়ির পাশেই গড়ে তোলা খামারে প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। দেলোয়ার, তার স্ত্রী, স্বজন ও শ্রমিকরা সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রথমে পলিথিন মোড়ানো প্যাকেটে গর্ত করে প্লাস্টিকের সাদা মুখ লাগিয়ে ভর্তি করা হয়। পরে জীবাণুনাশক মেশিনে ২৪ ঘণ্টা রেখে তা ল্যাবে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে মাদার টিস্যু দিয়ে ২৮ দিন সংরক্ষণের পর মূল খামারে সারিবদ্ধভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয়। নির্দিষ্ট সময়ের পর পলিথিন ভেদ করে বেরিয়ে আসে ছোট-বড় মাশরুম।
প্রতিদিন ২০-২৫ কেজি মাশরুম সংগ্রহ করে বাজারজাত করছেন দেলোয়ার। প্রতিকেজি মাশরুম ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় মাশরুম সরবরাহ করা হচ্ছে। সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এ খাদ্য কেউ মাংসের সঙ্গে, কেউবা স্যুপ ও সবজি হিসেবে গ্রহণ করছেন।
দেলোয়ার হোসেন জানান, বিদেশে মাশরুমের স্বাদ পেয়ে দেশে ফিরে এর খামার করার স্বপ্ন দেখেন তিনি। ২০২২ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর তিনি এ উদ্যোগ নেন। বর্তমানে তার খামারে তিন জাতের মাশরুম চাষ হচ্ছে। কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠার ফলে তার খামারজুড়ে সারিবদ্ধ পলিথিনের প্যাকেটে সাদা রঙের মাশরুম উৎপাদিত হচ্ছে, যা তার স্বপ্নপূরণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে।
স্থানীয়রা দেলোয়ারের মাশরুম চাষকে দৃষ্টান্তমূলক মনে করছেন এবং তার অনুপ্রেরণায় অনেকেই মাশরুম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান ইমাম জানান, জেলায় নতুন এ খাদ্যপণ্য ঘিরে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আগ্রহী কৃষকদের জন্য প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে কৃষি বিভাগ।