সুনামগঞ্জে এবার হাওরের ফসল রক্ষায় বাধ নির্মাণ করে পিআইসি। ৬১৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ হয়েছে ভালোভাবে। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না থাকায় হাওরের ধান নির্বিঘ্নে ঘরে তুলেছেন স্থানীয় কৃষকেরা। কিন্তু বাঁধ নির্মাণ এর ছয় মাস পরও বকেয়া বিল না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন ৮১০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সদস্যরা। এই বকেয়া প্রায় ২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
বাঁধের কাজের নীতিমালা অনুসারে, সাধারণ কৃষক, জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় সুবিধাভোগীরা থাকেন পিআইসিতে । প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোডের্র কর্মকর্তাদের চাপে পড়ে সময়মতো কাজ শেষ করেছেন। এই কাজ শেষ করতে গিয়ে ঋণ করেছেন। এখন বেকায়দায় রয়েছেন বিল না পাওয়ায় । বকেয়া টাকা তাঁরা কবে পাবেন, সেটাও কেউ নিশ্চিত করে বলছে না।
মানববন্ধন হয়েছে সুনামগঞ্জে
এদিকে গতসোমবার সুনামগঞ্জে প্রকল্পের কাজ অনুযায়ী প্রতিটি পিআইসিকে বকেয়া বিলের টাকা পরিশোধের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’ নামক সংগঠন পৌর শহরের আলফাত স্কয়ারে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে।
পাউবো সূত্রে জানা যায় এবার ৬১৯ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলার ১২টি উপজেলার ৪২টি হাওরে । এসব কাজ করেছে ৮১০টি পিআইসি যার প্রতিটিতে পাঁচ থেকে সাতজন সদস্য থাকেন। বাঁধের কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় হিসাব ১৩৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা ধরা হয়। কাজ শেষে উপজেলা কমিটি থেকে ১১৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকার বিল পাঠানো হয় । সেখান থেকে জেলা কমিটি ১০৯ কোটি ৮ লাখ টাকা বিল নির্ধারণ করলেও এখন পর্যন্ত পিআইসিদের ৮২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বিল দেওয়া হয়েছে ।
হাওরের ফসল রক্ষায় কাজ করা একটি প্রকল্পের সভাপতি কাজল মিয়া বলেন, নীতিমালা অনুসারে কৃষকেরা টাকা পাবেন, কাজ করবেন। কিন্তু দু-তিন কিস্তি টাকা দেবার পর পাউবোর লোকজন বন্ধ করে দেন। যখন বাঁধের কাজ পরিদর্শনে পাউবো ও প্রশাসনের কর্মকর্তা বাঁধে বাঁধে ঘোরেন, জরিমানা করেন, জেল দেন।
তিনি আরও জানান অনেকেই ভয়ে ঋণ করে, সুদে টাকা এনে সময়মতো কাজ করালেও এখন টাকা না পেয়ে বিপাকে আছেন তাঁরা। তিনি বলেন তার কাজের বরাদ্দ ১৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকা থেকে পেয়েছেন ৯ লাখ টাকা।
২০১৭ সালে হাওরে বাঁধ ভেঙে ব্যাপক ফসলহানি ঘটলে পাউবো কর্মকর্তা ও ঠিাকাদারদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। তখন থেকেই বাঁধের কাজে পাউবোর একক আধিপত্ব না রেখে, পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে যুক্ত করা হয়। পিআইসি গঠনের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণকাজের সময়সীমা বেধে দেয়া হয় ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি।
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা জানান, হাওরে বাঁধ নির্মাণ কাজে কৃষকসহ নানা পেশার মানুষ যুক্ত থাকে। তাঁরাও চান প্রতিটি পিআইসি তাঁদের প্রাপ্য টাকা যথা সময়ে পাক । বকেয়া টাকা ছাড়ের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ও মন্ত্রণালয়ে ইতিমধ্যেই তারা চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন।